মো: তুহিন হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে সেনাবাহিনী টহলের ওপর কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) অতর্কিত গুলিবর্ষণে এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুজন সেনা সদস্য। রোববার (১২ মার্চ) আনুমানিক দুপুর ১ টায় কেএনএ সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল সেনা সদস্যদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। নিহত কর্মকর্তা হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। এছাড়া আহত দুই সেনা সদস্য বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সোমবার (১৩ মার্চ) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

            আইএসপিআর জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশে গমনকৃত দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন সেনা সদস্যরা। তাদের ওপর অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে কেএনএ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কেএনএ নামক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলটি ইতোপূর্বে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া মতো একটি জঙ্গি গোষ্ঠীকে বান্দরবানে পাহাড়ি এলাকায় অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আইএসপিআর জানায়, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন বিগত ৩০ বছর ধরে অত্যন্ত সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি রংপুর সদরের ঘাঘট পাড়া গ্রামের মৃত শমসের আলীর ছেলে। দেশ মাতৃকার সেবায় তার মৃত্যুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ গভীর শোক প্রকাশ করেছে।

            পাহাড়ি এলাকার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য বান্দরবানের থানচি সড়ক সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের এ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে প্রতিহত করার জন্য কেএনএ সন্ত্রাসী দলটি সড়ক নির্মাণ কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেসামরিক ঠিকাদার, মালামাল সরবরাহকারী ও শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রথমে চাঁদা দাবি করে, পরবর্তী সময়ে কাজ বন্ধ করার হুমকি দেয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ কাজ চলমান থাকায় কেএনএ সন্ত্রাসী দল গত ১১ মার্চ ১২ জন শ্রমিককে অপহরণ করে। তাদের মধ্যে একজন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হন ও চারজন শ্রমিককে এখনও কেএনএ জিম্মি করে রেখেছে। অবশিষ্ট সাতজন শ্রমিককে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিলে তাদের সেনাবাহিনীর সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।

            এছাড়া কেএনএর নির্যাতনে স্থানীয় বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়ের অনেক জনগোষ্ঠী ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। কেএনএ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চাঁদাবাজি, মাদকের চোরাচালান, অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে বর্তমান সরকারের বিবিধ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বেসরকারি বিনিয়োগ ও পর্যটন শিল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান শান্তিশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিঘ্নিত করছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের তিন উপজেলায় গাড়ি চলাচল বন্ধের জন্য পরিবহন মালিক সমিতিকে হুমকি দিয়ে নোটিশ জারি করে কেএনএ। পরে যেকোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে (রোববার) এ এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন।

            বান্দরবানে বম জনগোষ্ঠীর নাথান বম নেতৃত্বে রাজনৈতিক সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) আত্নপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ রাজনৈতিক সংগঠনের সশস্ত্র শাখা কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) সশস্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল সেনা সদস্যদের টহলের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। ফেইসবুক পেজ Va te Kuki পেজ থেকে এ সশস্ত্র হামলার দায় স্বীকার করে স্টেটাস দেয়া হয়।

খবরটি 329 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen