স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে সদর উপজেলায় ম্রো জনগোষ্ঠীর নবান্ন উৎসব চমুংপক পই লোকসাংস্কৃতি উৎসব আয়োজন করে। সুয়ালক ইউনিয়নের নোয়া পাড়ায় প্রেনপং ম্রো জুমে আয়োজন করা করা হয় ম্রো জনগোষ্ঠীর নবান্ন উৎসব চমুংপক পই। শনিবার (২০ নভেম্বর) সকাল ১০ টায় নবান্ন উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে চমুংপক পই মঙ্গল শোভাযাত্রা। আনন্দ ও উৎসব আমেষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ম্রলং পাড়া হতে অনুষ্ঠান স্থলে শেষ হয়। ম্রো আদিবাসীর এ নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হয় জুমের নতুন ফসল উৎসর্গ ও প্রার্থনা, জুমচাষের সরঞ্জামাদি ও জুমের নতুল ফসল প্রর্দশন, জুমের নতুন ধানের পিঠা মেলা। নবান্ন উৎসবে আরো আয়োজন করে ম্রো আদিবাসীর লোকসংগীত, লোকনৃত্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নবান্ন পরিবেশন।

            ম্রো আদিবাসীর এ নবান্ন উৎসবে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার হোসেন। বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট পরিচালক মংসুচিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গবেষণা কর্মকর্তা কাইনওয়াই ম্রো, বাংলাদেশ বেতার উপবার্তা নিয়ন্ত্রক অজিত কুমার নাথ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, কথোয়াইন এনজিও পরিচালক গাব্রিয়েল ত্রিপুনরা। সভাপতিত্ব করেন বসন্ত পাড়া কারবারী চুংরেং ম্রো। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মিস সংলেং ম্রো।

            ম্রো আদিবাসীদের এক সময় জীবন জীবিকার প্রধান কাজ ছিল জুম চাষ। জুম চাষ নিয়ে গড়ে উঠেছিল জুম সংস্কৃতি। জুম চাষ শুরু হতে শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক পরিবেশকে শান্ত রেখে ফসল আহরণে বিভিন্ন প্রকৃতি পূজা পার্বণ রীতি রেওয়াজ করে পালন করত। তার মধ্যে জুমের ধান কাটা শুরু ও শেষ হলে আনন্দে ¤্রাে আদিবাসীরা নবান্ন উৎসব চমুংপক পই আয়োজন করে। এভাবে প্রতিটি ম্রো আদিবাসীদের ঘরে খুশী ও আনন্দের সীমা ছিলনা। নবান্ন উৎসব উপলক্ষ করে প্রতিবেশী ও আত্নীয় এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় আনন্দে ঘুরে বেড়াত। আত্নীয় বাড়িতে বেড়াতে গেলে উপঢৌকন মুরগি, শুকর, জুমের ফসল ও অন্যান্য জিনিস একে অপরের উপহার দেয়ার ম্রো আদিবাসীদের সামাজিক রীতি প্রচলিত রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমি সংকট, আকাশ সংস্কৃতির বিনোদন আগ্রাসনে এভাবে ম্রো আদিবাসীদের জীবন ধারা থেকে হরিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব চমুংপক পই ও লোকসাংস্কৃতির উৎসব।

            কালের বিবর্তনে প্রযুক্তি উন্নয়নের দ্রুতার গতিতে সারা বিশ্বের সংস্কৃতির জীবন ধারায় হয়েছে অনেক পরিবর্তন। প্রযুক্তি উন্নয়নে পৃথিবী পরিনত হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজ। বর্তমানে বিশ্বের উন্নয়নের লক্ষ্যেমাত্রা সাস্টেন্যাবল ডেভেলপমেন্ট গোল এডিজি অর্জন। এ সময়ে বিভিন্ন  আকাশ সংস্কৃতির বিনোদন আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকসাংস্কৃতি। সময়ের গতিধারায় উন্নত প্রযুক্তি ইন্টারনেট ও ডিজিটাল আকাশ সংস্কৃতির উন্নয়নে আদিবাসীদের জীবন ধারা থেকে হরিয়ে যাচ্ছে লোকসাংস্কৃতির উৎসব। আদিবাসীদের জীবন ধারার লোকসাংস্কৃতির উৎসব পালন ও সংরক্ষণে সহায়তা করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণাল, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনষ্টিটিউট।

খবরটি 401 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen