বিশেষ খবর ডেস্ক: বাংলাদেশে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব। ওই বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকায় আসছেন। বাংলাদেশে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বুধবার দুপুরে দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সৌদি আরব বাংলাদেশের পাশে আছে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সৌদি আরবের সহযোগিতার তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি হজে যায় উল্লেখ করে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, করোনা মহামারির নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পর বাংলাদেশ থেকেও হজে যাওয়া শুরু হবে।

            সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা আরো বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতে আগামী ১৬ মার্চ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করবেন। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরকালে সৌদি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং সৌদি বাদশাহ সালমানের নির্দেশনা ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততায় সৌদি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছেন। করোনা মহামারি ও সরকারি প্রক্রিয়ার কারণে ওই বিনিয়োগ আসতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিনিয়োগের বিষয়টি দৃশ্যমান হবে। সৌদি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে তেল শোধনাগার, পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, খাদ্য ও ওষুধ শিল্প, সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ, পোতাশ্রম নির্মাণ, সামরিক ও বেসামরিক এয়ারক্রাফট রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ নির্মাণ, সার ও সৌর বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে চায়।

            ঈসা বিন ইউসুফ বলেন, গত বছর সৌদি পরিবহনমন্ত্রী সালাহ আল-জাসেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ দেশে বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেয় এবং বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানায়। ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন নামের একটি সৌদি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছে। সৌদি আরব এ দেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এ ছাড়া কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাসহ পায়রা বন্দরের সঙ্গে ঢাকার রেল সংযোগ স্থাপনে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়টি সৌদি আরব বিবেচনা করছে। সৌদি প্রতিষ্ঠান আকওয়া পাওয়ার এরই মধ্যে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। সৌদি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল বাংলাদেশে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।

            এবারে হজ মৌসুমে বাংলাদেশসহ সৌদি আরবের বাইরে অন্যান্য দেশ থেকে অংশগ্রহণের সুযোগ মিলবে কি না, এমন প্রশ্নে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সৌদি আরবে ২৫ লাখের বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। এখন দক্ষ জনবলের চাহিদা বেশি। বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিতে চায় সৌদি আরব। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেও দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ বা স্থগিত হয়নি। তাঁর দেশ গত পাঁচ বছরে ১৪ লাখের বেশি ‘ওয়ার্কিং ভিসা’ দিয়েছে। গত নভেম্বর মাসে এক দিনে প্রায় সাড়ে আট হাজার ‘ওয়ার্কিং ভিসা’ ইস্যু করা হয়েছে। ঢাকায় সৌদি দূতাবাস এখন প্রতি কর্মদিবসে গড়ে চার হাজার ভিসা ইস্যু করছে। গত সপ্তাহে দূতাবাস ৩৮ হাজারেরও বেশি ওয়ার্কিং ভিসা ইস্যু করেছে। এর মধ্যে একটি কর্মদিবসে ১২ হাজার ৩০০ ভিসা ইস্যু হয়েছে, যা রেকর্ড। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশের জনগণের মঙ্গল এবং দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করা আমার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে। একপর্যায়ে রাষ্ট্রদূত বাংলায় বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসি এবং আমি তাদের কল্যাণে কাজ করে যাব।

খবরটি 324 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen