বিশেষ খবর ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের লন্ডন ভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ২০২৪ সালের বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করেছে। সূচকে আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশের ২৫ ধাপ অবনতি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিশ্বের ১৬৫ টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ইআইইউ এ সূচক প্রকাশ করেছে। ইনটেলিজেন্স ইউনিটের এ সূচক ৫ টি মানদণ্ড নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুদলীয় ব্যবস্থা, সরকারের কর্মকাণ্ড, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের ১৬৫ দেশ ও দুটি অঞ্চলের গণতন্ত্র পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ১০ স্কোরের ভিত্তিতে এ সূচক তৈরি করা হয়। এবারের সূচকে ২৫ ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০ তম। ২০২৪ সালে বিশ্বের আর কোন দেশ গণতন্ত্রের সূচকে বাংলাদেশের মতো এত পেছায়নি। মানদণ্ড বিবেচনা করে পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, মিশ্র শাসন ব্যবস্থা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা এ ৪ টি শ্রেণিতে সূচক তৈরি করা হয়েছে। ইকোনমিস্টের মতে, কোন দেশের গড় স্কোর ৮ এর বেশি হলে পূর্ণ গণতন্ত্র, ৬ থেকে ৮ হলে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৪ থেকে ৬ হলে মিশ্র গণতন্ত্র এবং ৪ এর নিচে হলে সে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা জারি রয়েছে।
ব্রিটিশ এ সাময়িকী ২০০৬ সালে প্রথম বারের মতো বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক সূচক প্রকাশ করে। এ বছর প্রকাশিত প্রথম গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায়। এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। ২০০৭ সালে ৫ দশমিক ৫২, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে বাংলাদেশ মিশ্র শাসন ব্যবস্থার দেশের তালিকায় ঢুকে যায়। ২০০৮ সালে ৫ দশমিক ৮৭, তার পরের তিন বছর বাংলাদেশের স্কোর একই ছিল ৫ দশমিক ৮৬। তখন থেকে ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিউটের বিচারে মিশ্র শাসন ব্যবস্থার দেশ রয়েছে বাংলাদেশ। একই সূচকে ২০১৯ সালে ৮৮ ত ম স্থানে বাংলাদেশর স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৫৭। ২০২২, ২০২১ ও ২০২০ সালে এ সূচকে ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে মিশ্র শাসন ব্যবস্থার দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। ২০২৩ সালে ইআইইউ সূচকে ৫ দশমিক ৮৭ স্কোর নিয়ে ৭৫ তম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। ২০২৪ সালের গণতন্ত্র সূচকে বিশ্বের যেকোনও দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশের। দেশটির স্কোর ১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট কমে ৪ দশমিক ৪৪ এ দাঁড়িয়েছে। এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ৪ দশমিক ৪৪। এ সূচকে বাংলাদেশ মিশ্র শাসন ব্যবস্থার দেশের তকমা পেয়েছে।
ইআইইউ প্রতিবেদনে বলছে, যেসব দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়, সেসব দেশকে মিশ্র শাসন ব্যবস্থার বলা হয়। এ শাসন ব্যবস্থায় বিরোধী দলের ওপর সরকারের চাপ, বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, সাংবাদিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করা হয়। এছাড়া দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল নাগরিক সমাজ এ শাসন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। এছাড়া পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়ারও সূচকে উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালে সবচেয়ে খারাপ গণতন্ত্রের ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে এই দুই দেশ। পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন, প্রধান মন্ত্রীর অপসারণ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০২৪ সালে যেকোনো দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্কোর পরিবর্তনের রেকর্ড হয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ ১৬৭ টি দেশের মধ্যে ২৫ ধাপ পিছিয়ে যৌথভাবে ১০০ তম স্থানে নেমে গেছে। বাংলাদেশের সমান স্কোর নিয়ে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিন ১০০ তম অবস্থানে রয়েছে।
ইআইইউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে কারচুপি সত্ত্বে তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন বাংলাদেশে পরিবর্তনের শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যুব-নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ তরুণ প্রজন্মের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করেছে; যারা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ক্রমবর্ধমান হারে হতাশ হয়ে পড়ছে। এ সূচকে ৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে গত বারের মতো সবার ওপরে আছে নরওয়ে। নিউজিল্যান্ড ২০২৩ সালের মতো এবারের সূচকে দ্বিতীয় স্থানে আছে। সুইডেন আছে তৃতীয় স্থানে। এরপর চতুর্থ অবস্থানে আছে আইসল্যান্ড।
অন্যদিকে, এবারের এ তালিকার গত বছরের মতো একেবারে তলানিতে জায়গা করে নিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান। স্বৈরশাসকের অধীনে থাকা মিয়ানমার ১৬৬ তম স্থানে আছে। এ ছাড়া বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরীয় দ্বীপের উত্তর কোরিয়া ১৬৫ তম স্থানে আছে।
২০২৩ সালে এ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৭ দশমিক ৪১ স্কোর নিয়ে শীর্ষে ছিল ভারত। দেশটির অবস্থান আগের বছরের মতো ২০২৪ সালে ৪১ তম স্থানে উঠে এসেছে। ১৬৫ দেশের এ তালিকায় পাকিস্তান আছে ১২৪ তম স্থানে। গত বছরের তুলনায় এ সূচকে ১৪ ধাপ অবনতি ঘটেছে পাকিস্তানের। এরপর রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা ৬৭ তম, ভুটান ৭৯ তম ও নেপাল ৯৬তম।