বিশেষ খবর ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা ও নির্বাচন নিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সময় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অগ্রসারির সৈনিক ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। যিনি বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের সঙ্গে যুগপৎভাবে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছিলেন। এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাক স্বাধীনতা হরণ ও বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের দমন পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পরস্পরের প্রতি এক গভীর বৈরীতাপূর্ণ মনোভাব দেখা দেয় দুই নেত্রীর মধ্যে। বাংলাদেশের রাজনীতি মাঠে এক দশকের বেশি সময় ধরে বিরাজ করেছে দুই নেত্রীর পারস্পরিক বৈরীতাপূর্ণ মনোভাব। ২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখন কারাগারের পরিবর্তে বাসভবনে অন্তরীন রয়েছেন বিএনপি চেয়ার পারসন খালেদা জিয়া। আর অপরদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বিএনপি।

                বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদনে বলেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক সময় আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অগ্রসারির এক সৈনিক ছিলেন। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুগপৎভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এক সামরিক অভ্যুত্থানে ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও পরিবারের প্রায় সব সদস্যসহ নিহত হন। সে সময় ইউরোপে ভ্রমণে অবস্থানের কারণে সৌভাগ্যবশত সে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহেনা।

                ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এখন শেখ হাসিনার বর্তমান বয়স ৭৬ বছর। সে পিতা-মাতার ৫ সন্তানের মধ্যে সবচেয়ে বড়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যে অংশটি শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসারি রাজনীতিতে জড়িত ছিল এবং সেটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল শেখ হাসিনার। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন। শিক্ষার্থী থাকার সময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের আগ পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা মূলত এটি ছিল শেখ হাসিনার প্রধান রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। ১৯৭৫ সালের সে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের পর ৬ বছর ভারতের দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটান শেখ হাসিনা। শেখ রেহেনাকে নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৯১ সাল, ১৯৯৬ সাল, ২০০১ সাল, ২০০৮ সাল, ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারসহ ৮ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

                ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৪৬ টি আসনে জয়লাভ করে প্রথম বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ২১ বছর পরে রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় যায় আওয়ামী লীগের এবং  প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে শপথ নেন শেখ হাসিনা। সেবার জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় বারে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক জীবনে দ্বিতীয় বারে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আর এরপর থেকে ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটিতে জয়ী হয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০২৪ সালে ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

                রয়টার্স প্রতিবেদনে আরও বলেছে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়ে যখন দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তখন বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ কাছাকাছি। এর ১০ বছরের মধ্যে সে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ এ পৌঁছায়। অল্প সময়ের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ ঘরে নেওয়ার প্রচেষ্টায় করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার কারণে সেটি বাধাগ্রস্ত হয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬ শতাংশের বেশি হতে পারে। দেশের রপ্তানী নির্ভর পোশাক শিল্পকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। মূলত তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশের কাতারে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পরিচালনায় ২০ বছরের প্রায় ১৭ কোটি লোকের দরিদ্র বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নে ভুয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।

                রয়টার্স প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন সে সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ছিলেন অবসর প্রাপ্ত জেনারেল জিয়াউর রহমান। শেখ হাসিনা ফিরে আসার কয়েক মাস পর চট্টগ্রামে এক সামরিক অভুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি প্রধান পদে আসীন হন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া। এদিকে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ক্ষমতায় আসেন আরেক সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার পতনের দাবিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুগপৎভাবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ। সে আন্দোলনে ১৯৯০ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করলে ৯ বছরের স্বৈরশাসন পতন ঘটে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার যে মৈত্রী ঐক্য স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে সফল করেছিল তা অল্প সময়ের মধ্যে তা শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশের রাজনীতি মাঠে এক দশকের বেশি সময় ধরে বিরাজ করছে দুই নেত্রীর পারস্পরিক বৈরীতাপূর্ণ মনোভাব। পরস্পরের প্রতি এক গভীর বৈরীতাপূর্ণ মনোভাব দেখা দেয় দুই নেত্রীর মধ্যে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারা উভয়ে ‘ব্যাটেলিং বেগমস’ নামে পরিচিতি পান। ২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল বিএনপি চেয়ার পারসন খালেদা জিয়া। পরে করোনা মহামারির সময় তাকে কারাগারের পরিবর্তে বাসভবনে বসবাসের অনুমতি প্রদান করা হয়। শর্ত দেওয়া হয় যে রাজনীতি এবং নিজের রাজনৈতিক দল বিএনপি সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবেন না। খালেদা জিয়ার পুত্র ও বিএনপি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে এবং যদি তিনি দেশে ফেরেন তাহলে পা রাখামাত্র যে কোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন। দলটির পরবর্তী জেষ্ঠ্য নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপি প্রথম সারির বেশিরভাগ নেতা গত অক্টোবরের শেষ পর্যায় থেকে বিভিন্ন মামলায় কারাগারের অভ্যন্তরে ও বাইরে দিন কাটাচ্ছেন।

                রয়টার্স প্রতিবেদনে আরও বলেছে, এক সময় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য যুগপৎভাবে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করেছেন। এখন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাক স্বাধীনতা হরণ ও বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের দমন পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি দলের প্রায় ১০ হাজার নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপি। এ দাবি আদায়ের জন্য গত অক্টোবরের শেষ দিক থেকে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি এবং তার জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামি। সে আন্দোলনে ইতোমধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শেষ বেলায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে বড় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বিএনপি।

খবরটি 383 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen