মো: তুহিন হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবান সদরে সুয়ালক ইউনিয়নে সন্ত্রাসী কায়দায় আসমত আলী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি মাছের পুকুরের পাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (০৭ আগস্ট) আনুমানিক সকাল ১০ টার দিকে সুয়ালক ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মাছের প্রজেক্টে ক্ষতি হয় আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা। প্রায় ২০ একর পুকুরে অন্যান্য প্রজাতির মাছ ও পোনা মাছ চাষ করা হয়। এলাকায় সন্ত্রাসী কায়দায় পুকুরের পাড় কেটে এমন শত্রুতা কাজ করায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। সুয়ালক ইউনিয়নের সুলতানপুর ১ নং ওয়ার্ড ৩১৪ নং মৌজার মো: ছৈয়দ রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্ত একজন মৎস্য চাষি। তার সুয়ালক এলাকায় প্রায় ২০ একর জমিতে মাছ চাষের প্রজেক্ট রয়েছে। তিনি এ প্রজেক্টের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ ও মাছের পোনা উৎপাদন করতেন। এ ঘটনার পর মো: ছৈয়দ সুবিচার চেয়ে ১১ আগষ্ট তারিখে সুয়ালক ইউনিয়নে সিকদার পাড়ার আছমত আলী, মো: ফরিদ আলম, মো: ফরিদ ও মো: শাহজাহান, বাদশা মিয়া ও অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনের নাম উল্লেখ করে বান্দরবান সদর থানায় একটি অভিযোগ এজাহার দিয়েছে।

            থানায় এজাহার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন গত ০৭/০৮/২০২৩ তারিখে আবেদনকারী মো: ছৈয়দ সকাল বেলায় পার্শ্ববর্তী গণেশ পাড়া এলাকায় অপর একটি মাছের পুকুর দেখতে যায়। সেই সুযোগে আনুমানিক সকাল ১০ টা সময় উপরোক্ত বিবাদীগণ ও অজ্ঞাতনামা বিবাদীদের সাথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে বেআইনি ও অনধিকার প্রবেশ করে সিকদার পাড়া এলাকায় আমার মাছের প্রজেক্টের পাড় কেটে দিয়েছে। আমার মাছ চাষের প্রজেক্টের পাড় কাটার ফলে পুকুর ভেঙ্গে প্রজেক্টে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও সরকারি মৎস্য অফিসে সরবরাহের জন্য সংরক্ষিত ৪,৭০০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা সুয়ালক খালে চলে যায়। যার কারণে আমার আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উক্ত ঘটনার বিষয়টি স্থানীয় ব্যক্তি আব্দুল কাদের, আব্দূল আলীম, শাহ আলম ও ছেমন আরা বেগমসহ আরো উপস্থিত লোকজন প্রত্যেক্ষ করেছে। এ ঘটনার বিষয়টি জানতে পেরে আমি তাৎক্ষনিত ঘটনাস্থলে এসে প্রত্যক্ষদর্শী লোকের কথা শুনে আছমত আলীকে জিজ্ঞেস করতে গেলে তিনি পুকুরের পাড় কাটা বিষয়টি স্বীকার করে। এর আগে এ প্রজেক্ট না নিতে নিষেধ করছিল। আছমত আলীর হুমকিতে আমি এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকে আছি। এ ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তা ও সুবিচার চেয়ে বান্দরবান সদর থানায় এজাহার করিলাম।

            মাছের প্রজেক্ট বিষয়ে জানা য়ায়, সুয়ালক সুলতানপুর এলাকায় মো: ছৈয়দ প্রায় ২০ একর জমিতে এ পুকুরে ২ বছরের জন্য বর্গা নিয়ে মাছ চাষ ও পোনা উৎপাদন প্রকল্প করেন। সে প্রতি বছর মৎস্য অফিসে পোনা মাছ সরবরাহ করে। সে কিছু দিন আগে বাহির থেকে এনে এ প্রজেক্টে ৪,৭০০ কেজি পোনা মাছ ছেড়ে দিয়েছিল। এলাকায় মাছ চাষের জন্য তার কয়েকটা পুকুর রয়েছে। সে এ দিন পার্শ্ববর্তী গণেশ পাড়া এলাকায় পুকুরে কাজ করছিল তখন থাকে একজন মোবাইলে জানায় আছমত আলী ও তার সাথে কয়েক জন লোক নিয়ে তার পুকুরের পাড় কেটে দিতেছে। সে এসে দেখে পুকুরের সব মাছ শেষ। তার প্রজেক্টের পাড় কাটার ফলে মাছ চাষের পুকুর ভেঙ্গে প্রজেক্টে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও সরকারি মৎস্য অফিসে সরবরাহের জন্য সংরক্ষিত ৪,৭০০ কেজি পোনা মাছ সুয়ালক খালে চলে যায়। তার আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ধরনের ক্ষতিতে তার সব শেষে হয়ে গেছে। এতদিন মো: ছৈয়দের পুকুরের ক্ষতি করার জন্য সব সময় পায়তারা করে যাচ্ছে আছমত আলী। সে সব সময় তার প্রজেক্ট দেখা শুনা করতেন তাই আছমত আলী ক্ষতি করার সুযোগ পান নাই। মো: ছৈয়দের পুকুরের পাশে আছমত আলীর পুকুর থাকায় শত্রুতা করে এমন ক্ষতি করেছে। আছমত আলীর ভাই ছেলে তার ওয়ার্ডের মেম্বার হওয়ার কারনে এ ঘটনার পর কোন অভিযোগ না করার জন্য তার উপর বিভিন্ন প্রকার চাপ সৃষ্টি করছে। মো: ছৈয়দ ঘটনার প্রত্যক্ষ লোকের কথা শুনে আছমত আলীকে জিজ্ঞেস করতে গেলে তখন সে বলেছে আমি পুকুরের পাড় কেটেছি। সেভাবে তোকে মাটির নিচে পুতে রাখবো। তোকে নিষেধ করছিলাম এ প্রজেক্টা না নিতে। আমি এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আতংকে আছি।

            সুয়ালক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, মো: ছৈয়দ পুকুরের পাড় কাটা নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছে এ বিষয়ে জানি। এ সমস্যা সমাধানে বৈঠক বসার কথা ছিল। অফিসার সময় দিতে পারে নাই। বিচারাধীন আছে, এখনও সমস্যা সমাধান হয় নাই।

            উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মামুনুর রহমান বলেন, এমন খবর শুনে আমি পুকুর পর্যবেক্ষণ করেছি। আসলে এটা খুবই দু:খজনক কাজ। সে আমাকে মাছের পোনা দেওয়ার কথা ছিল। তাই কিছু দিন আগে আমি মাছের পোনা দেখতে গেছিলাম। আর এখন দেখতে গিয়ে দেখি সব মাছের পোনা শেষ কোন মাছের পোনা নেই।

            বান্দরবান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাটা শুনেছি। একজন এসআইকে পাঠিয়েছিলাম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এসেছে। অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনা যদি সঠিক হয়ে থাকে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খবরটি 645 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen