মো: তুহিন হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বুক ফুলিয়ে অন্ধকার রাজ্যে শাসক প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে কিশোর গ্যাংয়ের লিডার ছিনতাইকারী রকি। তার নামে ২০ টির অধিক মামলা ও অনেক গুলো মার্ডার মামলা থাকলে সবার সামনে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে রকি বড়ুয়া নামে এ ছেলে। হলুদিয়া এলাকায় সে এক নামে পরিচিত ডাকাত রাজীব বড়ুয়ার ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার রকি বড়ুয়া। বান্দরবান সদর উপজেলায় এক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা শূন্যের কোটায় থাকলে এখন প্রকাশ্যে ছিনতাই করছে রকি। তার কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেদের কাছে তার নাম “রকি ভাই”। গত ৪ মাস ধরে সুয়ালক এলাকার নব নির্মিত বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় নিয়মিত ছিনতাই করে আসলে অজ্ঞাত কারনে এ রকি ভাই পুলিশ ও অন্যান্য প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বান্দরবানের সুয়ালক ও হলুদিয়া এলাকায় দিন দুপুরে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে পথচারিদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধর করে মোবাইল, টাকা, ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়, সে নারীদের করেন অশ্লীলতাহানী। এ সময় তার সহযোগী থাকেন আরো বেশ কয়েকজন। ইয়াবা সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার অর্থ যোগাড় করতে ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেয় তারা। আর তাদের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। হলুদিয়া এলাকার রাজীব বড়ুয়ার সন্তান এ রকি ভাই। স্থানীয় সকল সচেতন মহলের দাবী কিভাবে এতগুলো মামলার আসামি সবার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কে বা কারা তাকে এ সাহস জোগাচ্ছে কেন প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দিয়ে আইনের আওতায় আনছে না। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতের বেলায় কেউ বাইক নিয়ে আসলে তাদের কে ধরে টাকা, মোবাইল এবং অন্যান্য জিনিস হাতিয়ে নিয়ে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পালিয়ে যায়। এতো দিন নাকি রাতে ছিনতাই করতো, এখন নাকি দিন দুপুরে প্রকাশ্য ছিনতাই শুরু করেছে রকি ও তার দলের ছেলেরা। আরো জানা গেছে, এ ছিনতাই করার ঘন্টাখানেক আগে একই এলাকায় এক মেয়ে সাইকেলিস্ট এর মোবাইল ছিনতাই করে এ কিশোর গ্যাং চক্র। বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গত মাসে রাত ১০ টার দিকে কেরানীহাট থেকে মোটরসাইকেলে আসা এক মোটরসাইকেল আরোহীকে অস্ত্র দেখিয়ে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে প্রচার হয়।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী বান্দরবান শহরের বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ী বিশ্বজিত দাশ বলেন, বৃহস্পতিবার তিনটায় বান্দরবান হলুদিয়া এলাকায় একটি দোকানে হালকা নাস্তা করতে গেলে হটাৎ একটা ছেলে বাইক নিয়ে এসে আমাকে কোন কারন ছাড়া মারাত্মক ভাবে আঘাত করে এবং আমার হাতে থাকা মোবাইল কেড়ে দৌড় মেরে বাইকে উঠে পালিয়ে যায়। আমি দৌড়ে গিয়ে ছিনতাইকারীর হাত থেকে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেলি এবং ছিনতাইকারী আমার পেটে মারাত্মক ভাবে আঘাত করে। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে ছিনতাইকারী বাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, পরে স্থানীয়রা জানায় এ ছিনতাইকারীর নাম রকি।
এ বিষয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে বিস্তারিত জানতে মুঠোফোনে রকি বড়ুয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, আমি এগুলো কিছু করিনি। সব মিথ্যা কথা। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন আমি নির্বাচনের সময় আমার এলাকার চেয়ারম্যান এর জন্য আমার দলের সদস্য নিয়ে দুইটি নির্বাচন কেন্দ্র দখল করেছি। এখন চেয়ারম্যান আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে কারন চেয়ারম্যান আমাকে দিয়ে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন খুন ও জায়গা দখল করাতে চাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সে কিশোর গ্যাং এর একজন লিডার। এটা ছাড়া সে অনেক মামলার আসামি। আমরা চাই তাকে প্রশাসন গ্রেফতার করে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক এবং তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে কেউ এরকম খারাপ কাজ করতে না পারে।
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলাম বলেন, সুয়ালকের বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাইয়ের বিষয়ে একটা লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা ঘটনার সত্যতা যাচাই এর মাধ্যমে অপরাধীকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করব। যাতে পরবর্তীতে কেউ এ ধরনের খারাপ কাজ করতে উৎসাহ না পাই। অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসন সদা তৎপর রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা অপরাধীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।