বিশেষ খবর ডেস্ক: আতশবাজি, উল্লাস ও উদ্দীপনা নিয়ে নতুন বছর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ বরণ করে নিয়েছে বিশ্ববাসী। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ কিরিবাতি সবার আগে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। এর এক ঘণ্টা পর ২০২৩ সালে পা দেয় নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। এরপর একে একে  নতুন বছর ২০২৩ খ্যিষ্টাব্দ সালকে বরণ করে নেয় ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলো। পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে লাখ লাখ মানুষ মধ্যরাতে বিখ্যাত স্থানগুলোতে জড়ো হন। এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডের ব্যাংককের ওয়াট অরুন বৌদ্ধ মন্দির আলোকিত হয় আতশবাজির আলোয়। আকাশে বেলুন উড়িয়ে নতুন বছর বরণ করছেন চীনের মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির অপেরা হাউজ, হার্বার ব্রিজে চলে চোখ ধাঁধাঁনো আতশবাজির প্রদর্শন। নতুন বছরে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে স্মরণ করে লন্ডনবাসী। ড্রোনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় রানির অবয়ব। নতুন বছরে ফ্রান্সের পতাকার রঙে রাঙানো হয় প্যারিসের আর্ক দে ত্রিয়োম্পে। নতুন বছর বরণ থেকে বাদ যায়নি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন। ছোট আতশবাজি হাতে দেশটির শিশুরা যুক্তরাজ্যের ইয়র্কশায়ারে জ্বলন্ত মশাল দিয়ে ২০২৩ সংখ্যাটি ফুটিয়ে তুলেছেন কয়েকজন। দর্শনকারী নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তা ভেসে ওঠে দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফায় করোনা সচেতন দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের তরুণীরা মুখে মাস্ক পরে নতুন বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নতুন বছরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশে বেলুন উড়িয়ে উদযাপন করেন জাপানের রাজধানী টোকিওর বাসিন্দারা। ঘড়ির কাটা ১২ টা ছোঁয়ার পরপর চোখ জুড়ানো আতশবাজি ও আলোতে জ্বলমল হয়ে ওঠে হংকংয়ের আকাশ।

            অপরদিকে দু’বছর নানা বিধি নিষেধ আর আতঙ্ক ইংরেজি নতুন বর্ষ উদযাপন দেখা যায়নি। এবারে সে শঙ্কা কাটিয়ে পুরো উল্লাসে মেতে উঠেছে বিশ্ব। কোটি কোটি মানুষের নববর্ষের বাধভাঙা উদযাপনে লাগাম টেনে দেওয়া করোনা ভাইরাস মহামারির প্রকোপ ফুরিয়ে আসায় নতুন সাজ শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। আজ হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা, পাওয়া-না পাওয়ার ২০২২ সালকে বিদায় জানিয়ে নতুন বর্ষবরণে প্রস্তুত বিশ্ববাসী। আর এ প্রস্তুতি যে জমকালোভাবে নেওয়া হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে পূর্ণ সক্ষমতায় নববর্ষ উদযাপন যজ্ঞ দেখে।

            গত বছর সীমিত পরিসরে মাত্র ১৫ হাজার মানুষকে টাইমস স্কয়ারে সমবেত হয়ে নববর্ষ উদযাপনের অনুমতি দেওয়া হলে এবারে লোকজনের উপস্থিতির সংখ্যা বেধে দেওয়া হয়নি। প্রায় ২ হাজার ৭০০ টি ওয়াটারফোর্ড স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটি বল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬ টায় টাইমস স্কয়ারের শীর্ষে রাখা হয়। মধ্যরাতে প্রায় ১২ টা ১ মিনিটের মতো সে বলে চলছে আলোর ঝলকানি। দুই বছরের বিরতির পর এবার প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে পূর্ণ ধারণ ক্ষমতায় লোকজন সমবেত হয়। টাইমস স্কয়ারে নববর্ষ উদযাপনে মেতে উঠতে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে। নিউইয়র্ক শহর কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক বছর নববর্ষ উদযাপনের জন্য একটি নতুন থিম বেছে নেয়। তার ধারাবাহিকতায় এবারের নতুন বছরের থিম ‘ভালোবাসার উপহার’।

            নতুন বছর উদযাপনের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার সাথে সাথে নিউজিল্যান্ডের কেন্দ্রীয় শহর অকল্যান্ডের স্কাই টাওয়ারে আতশবাজির ঝলকানি চলছে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ এ উদযাপনে অংশ নিয়েছেন। কোভিড বিধি নিষেধের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে নতুন বর্ষবরণে যোগ দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দারা। সিডনির অপেরা হাউসের আকাশে আতশবাজির ঝলকানি রীতিমতো রঙিন করে তুলেছে আকাশকে। আর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নতুন বছরের উদযাপন বরাবরের মতো জমকালো আয়োজনে শুরু হয়ে গেছে। সিডনি বন্দরে আতশবাজি ফুটিয়ে নতুন বছর উদযাপন করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। সিডনির অপেরা হাউসের আকাশে আতশবাজির ঝলকানি রীতিমতো রঙিন করে তুলেছে আকাশকে। সিডনির পাশাপাশি নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে দেশটির কুইন্সল্যান্ড প্রদেশ।

            বাংলাদেশ সময় ৮টার দিকে এ শহরে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে আতশবাজির আলোর বিচ্ছুরণে। পুরো কুইন্সল্যান্ড যেন এক আলোকসজ্জার নগরীতে রূপ নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ-উল্লাসে ২০২৩ সালকে বরণ করে নিয়েছেন। বালির দেনপাসারের একটি প্রধান সড়কে নববর্ষের সন্ধ্যায় নৃত্যশিল্পীদের নাচ। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের নতুন বছর বরণে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন সেখানকার হাজার হাজার বাসিন্দা। বালির দেনপাসারের একটি প্রধান সড়কে নববর্ষের সন্ধ্যায় নৃত্যশিল্পীদের নাচ পরিবেশ করতে দেখা গেছে। প্রতিবেশি ভারতের অমৃতসরে নতুন বছর বরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে লোকজন রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছেন।

নববর্ষ উদযাপনে সুইজারল্যান্ডেও শুরু হয়েছে জমকালো সব অনুষ্ঠান। ইতোমধ্যে দেশটির প্রান্তে লোকজন নতুন বছর ঘিরে উদযাপনে অংশ নিয়েছেন। সুইজারল্যান্ডের মুসিডর্ফের মুসি হ্রদে ঐতিহ্যবাহী সিলভেস্টার সাঁতার কাটতে দেখা যায় লোকজনকে। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের আর কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে বর্ষবরণের উদযাপন। কিন্তু তার আগে সিউলের রাস্তা, অলিগলি আর অভিজাত এলাকায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষের ঢল।

সূত্র: আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি।

খবরটি 414 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen