বিশেষ খবর ডেস্ক: বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার উদ্যোগের প্রশংসা করলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার। ম্যানিলায় আঞ্চলিক অপরাধ বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের ভার্চুয়াল কাউন্টার টেরোরিজম কনফারেন্সে রাষ্ট্রদূত মিলার বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমার অতীতে সৌভাগ্য হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় সেবাদানের এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী তদন্ত কাজে সেখানকার বীরোচিত কৌঁসুলি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে একত্রে কাজ করার। তাই আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ঐক্যবদ্ধ কাজের অপ্রতিরোধ্য শক্তি আমি দেখেছি।

হলি আর্টিজানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার চতুর্থ বার্ষিকী। ১ জুলাই ২০১৬ তারিখে সন্ত্রাসীরা দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচটি দেশের ২২ জনকে জিম্মি করে হত্যা করে। নিহতদের অন্যতম ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ফারাজ হোসেন, যিনি গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে নিজ দেশে এসেছিলেন। মুসলমান বলে সন্ত্রাসীরা তাকে চলে যেতে দিয়েছিলো। ফারাজ হোসেন তারই মতো কলেজ ছুটিতে আমেরিকা থেকে বাড়িতে ফেরা দুই তরুণী বন্ধুকে ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ফারাজ তাদেরকে যথাসাধ্য রক্ষা করতে থেকে গিয়েছিলো। পরে তিনজনই নিহত হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা সম্মানিত বোধ করছি যে, ব্যক্তিগত প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে হলি বেকারি বিচারের সভাপতিত্বকারী সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ট্রাইবুনালের বিচারক মজিবুর রহমান আজ এখানে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছেন। আপনাদের অনেককেই আমি চিনি যারা নিজ দেশের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসীদেরকে বিচারের আওতায় আনতে গিয়ে নিজেরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ফারাজ হোসেন ও বিচারক রহমান, আপনারা উভয়েই সেই সাহসিকতা, দৃঢ়তা, সদগুণ ও ন্যায়বিচারের চেতনা ধারণ করেন- যা সন্ত্রাসবাদের সকল অশুভের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয় নিশ্চিত করবে।

সেই লক্ষ্য অর্জনে আমাদের ঐক্যবদ্ধ কাজের অন্যতম পন্থা হলো ডিজিটাল ফরেনসিক আলামত বিষয়ে এই কর্মশালা। বাংলাদেশে নতুন একটি আইন হয়েছে যার আওতায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে কোর্টের শুনানী করার অনুমোদন রয়েছে। এই আইনটি এখন পর্যন্ত কেবল জামিনের শুনানীর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও সীমিত এই প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যাপক ও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। ফলে, শত শত কিশোরসহ শত সহস্র জামিনযোগ্য লোক পুনরায় কোর্ট খোলা পর্যন্ত কারাগারে আটক না থেকে জামিন পাচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ বিরোধী প্রেক্ষাপটেও জামিনের এই শুনানীগুলো গুরুত্বপূর্ণ- কেননা জামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে লম্বা সময় ধরে কারাগারে আটক রাখা হয়। ফলে উগ্রপন্থার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, যা সকল দেশের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। কার্যকরভাবে জামিন শুনানী পরিচালনা করার মতো একটি মৌলিক উদ্যোগও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

এই আইনটিকে আরো সম্প্রসারিত করে অন্যান্য ধরনের শুনানীকেও এর আওতায় আনা হবে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপনের সুযোগের ফলে সন্ত্রাস বিষয়ক মামলার বিচার প্রক্রিয়া আরো কার্যকরভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এর ফলে হুমকি বোধ করছেন বা কোর্টে হাজিরা দিতে পথভ্রমণে অসুবিধা আছে এমন সাক্ষীদের জন্য সাক্ষ্য দেয়া সহজ হবে। আমি আনন্দিত যে, ফৌজদারি মামলায় ডিজিটাল আলামতের ব্যবহার বিষয়ে আলোচনার জন্য এ বছরের শুরুর দিকে OPDA- এর আরেকটি কর্মশালায় আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। সেখানে সন্ত্রাস ও সাইবার অপরাধ বিষয়ে কর্মরত বিচারক, কৌঁসুলি ও পুলিশের তদন্তকারীগণ তাদের মামলাগুলোতে ডিজিটাল আলামতের পূর্ণ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে একত্রে আলোচনা করেন। তিনি যোগ করেন, আজকের কর্মশালার মাধ্যমে আপনাদের জন্য সে কাজগুলোই আরো বড় পরিসরে করার সুযোগ তৈরি হবে- যেমন সহযোগিতামূলক আলোচনা চলামান রাখা এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইকে এগিয়ে নিতে সাধারণ সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে পেতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। আমরা জানি, সন্ত্রাসীরা রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে গিয়ে কাজ করে। আমাদেরও অবশ্যই তাই করতে হবে।

খবরটি 588 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen