বিশেষ খবর ডেস্ক: পদ্মা সেতুর মূল কাঠামোর পুরোটাই এখন দৃশ্যমান। দেশের মানুষের স্বপ্নের এ সেতু বাস্তবে রূপ দিতে যাঁরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন সেই প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের চোখে-মুখে এখন সন্তুষ্টির ছাপ আর উল্লসিত পদ্মাপারের মানুষ। পদ্মা সেতুতে কাজ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করাটাই আমার গর্বের বিষয়। সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে চীন থেকে এসেছেন আরো কর্মী। তাঁরা রোড ও রেলওয়ে স্লাব বসানোর কাজ করছেন। প্রথম থেকে বড় দায়িত্ব পালন করে আসছেন মূল সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘এটি আমার সৌভাগ্য যে এত বড় একটি কাজের গুরুদায়িত্ব আমার ওপর আছে। এ দায়িত্ব পেয়ে গর্ববোধ করছি। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে ইতিহাস তৈরি হয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিটি কাজই আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জ। এ ব্রিজের গৌরব শুধু আমার নয়; এটি ১৬ কোটি মানুষের গৌরব।’ প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ভূমিকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘পরের অধীনে অর্থ ব্যয়ের মধ্যে আর নাই। নিজস্ব অর্থায়নে আমরা অনেক বড় বড় সাফল্য দেখাতে পারি।

            উল্লসিত পদ্মাপারের মানুষ: মুন্সীগঞ্জের মাওয়া মৎস্য আড়তের আড়তদার হামিদুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতুর জন্য আমাদের আড়ত ছেড়ে দিতে হয়েছে। তার জন্য এখনো কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। এ জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের কাছে ছোটাছুটি করছি। এতে দুঃখ পেলেও আজ অনেক তৃপ্তি লাগছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশের জন্য একটি বড় কাজ করেছেন। এতে উপকৃত হবে জাতি। সুমাইয়া শিউলি বলছিলেন, ‘জন্মস্থানই ছেড়ে দিতে হয়েছে সেতুর জন্য। তবে সরকার আমাদের পুনর্বাসন করেছে। নিজ বাড়ির জন্য মায়া লাগলেও ভালো লাগছে এই ভেবে, আমাদের জমির ওপরই পদ্মা সেতু হচ্ছে। আজ পুরো সেতুটা দেখে মন ভরে গেছে। লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদার বলেন, ‘এলাকায় নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করছে আমাদের এলাকায়।

            কাজে গতি বাড়াতে এসেছেন চীনের কর্মীরা : পদ্মা সেতুর রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজের গতি বাড়াতে চীন থেকে এসেছে পারদর্শী একটি দল। ১৬ সদস্যের এই দলটি দুটি ভাগে ভাগ হয়ে দেশের ৩০০ শ্রমিককে নিয়ে রোডওয়ে স্লাব বসাবে। নতুন এই টিম মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর খুঁটি থেকে রোডওয়ে স্নাব স্থাপন করবে। রোডওয়ে স্লাব বসানোর কাজে যুক্ত আছে আরো দুটি চীনা দল। দুটি দলে আটজন করে চীনা দক্ষ কর্মীর নেতৃত্বে ১৫০ দেশীয় শ্রমিক কাজ করছে। দুটি দল প্রতি মাসে ১৩০টি করে স্লাব স্থাপন করছে। নতুন দুই দল যুক্ত হলে প্রতি মাসে দুই শতাধিক স্লাব বসাতে পারবে। এতে করে আগামী আট মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর স্প্যানের ওপরে চলবে যানবাহন। আর নিচে চলবে ট্রেন। স্প্যানের ওপরে সড়ক পথের জন্য দুই হাজার ৯১৭টি স্লাব বসাতে হবে। এর মধ্যে গত বর্ষায় ১২৬টি রোডওয়ে স্লাব পদ্মার ভাঙনে ভেসে গেছে। সেগুলো আবার নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। বাকি দুই হাজার ৭৯১টি স্লাবের মধ্যে এক হাজার ২৮৫টি স্লাব বসানো হয়েছে।

            পদ্মা সেতুর উপসহকারী প্রকৌশলী (মূল সেতু) মো. হুমায়ুন কবীর সেতুর কাজ করছেন একেবারে শুরু থেকে। অর্থাৎ ভূমি অধিগ্রহণের সময় তিনিই প্রথম নিশান লাগান মাটিতে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ আমরা পদ্মার দুই পার সংযুক্ত করেছি। পদ্মা সেতুতে কাজ করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করাটাই আমার গর্বের বিষয়।’

পদ্মা সেতুর ওয়েল্ডিং কাজের শ্রমিক মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হলদিয়া গ্রামের সহিদী হাসান বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের এলাকা দিয়ে হচ্ছে। এ কারণে আমারও এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আজ ভালো লাগছে। সেতুর কাছে গিয়ে নাতি-নাতনিদের দেখিয়ে বলতে পারব, বাংলাদেশের গর্বের এ সেতু নির্মাণে আমিও অংশীদার।

খবরটি 754 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen