স্টাফ রিপার্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সাথে পীস কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক আয়োজন। দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস পর স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় বম জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ সাথে পীস কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০ টায় রুমা উপজেলার বেথেল পাড়ার কমিউনিটি সেন্টারে এ বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। এ বৈঠকে পীস কমিটির পক্ষে নেতৃত্ব প্রদান করেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভাপতি ক্য শৈ হ্লা মারমা। তার সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ ১৩ জন এ বৈঠকে অংশগ্রহন করেন। এ বৈঠকে আরো অংশগ্রহন করেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এসএম মঞ্জুরুল হক, অতিরিক্ত পলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুল করিম। অপরদিকে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ পক্ষে রিপ্রেজেন্টেটিভ ফর পিস ডায়ালগের সেন্ট্রাল কমিটির টিম লিডার লাল জং ময় বম, সাংগঠনিক সম্পাদক লাল সাং লম বম, সংগঠনটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা লাল এং লিয়ান বমসহ ৮ জন এ বৈঠকে অংশগ্রহন করেন। পীস কমিটি ২য় বৈঠকে অনসুপস্থিত ছিলেন কেনএনএফ সংগঠনের সভাপতি নাথান বম।

            নিরাপত্তা ও শান্তির পরিবেশে কেক কেটে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ শান্তি প্রতিষ্ঠার বৈঠক শুরু হয়। এ বৈঠকে কেএনএফ এর কারাবন্দী ২৩ জনকে ৩ মাসের মধ্যে মুক্তি প্রদান, বেসামরিক নাগরিকদের প্রত্যাবাসন, পূর্নবাসনে সরকারি উদ্যোগ গ্রহন, অন্ন, বস্ত্র, বাসন্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা নিশ্চিত করন। শান্তি চুক্তি সম্পাদন না হওয়া পর্যন্ত ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া ৫ শতাধিক বম জনগোষ্ঠীর মানুষকে সরকারি ভাবে দেশে ফিরিয়ে না আনাসহ ৬ দফা দাবি আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়। এ বৈঠককে ঘিরে বেথেল পাড়ায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সদস্য মোতায়েন করা হয়।

            শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সূত্রে জানা যায়, এ বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে কেএনএফ উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সব বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এর আগে, পীস কমিটি সাথে কেএনএফ এ দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক হয়। এরপর গত ৫ নভেম্বর রুমায় প্রথম দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস পর কেএনএফ দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পীস কমিটি সাথে দ্বিতীয় বৈঠক আয়োজন। এ বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা নেতৃত্বে ১৩ জন সদস্য অংশগ্রহন করে। অপরদিকে এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেয় কেএনএফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ফর পিস ডায়ালগের সেন্ট্রাল কমিটি ও টিম লিডার লাল জং ময় বম, সাংগঠনিক সম্পাদক লাল সাংলম বম, সংগঠনটির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা লাল এং লিয়ান বমসহ ৮ জন সশস্ত্র সংগঠনের সদস্য।

            অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য জানায়, কেনএনএফ সশস্ত্র সংগঠনের অনেকগুলো দাবির মধ্যে প্রধান ও মূল দাবি কুকি চীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। এ প্রধান দাবি পৃথক রাষ্ট্র গঠনে অনড় কেনএনএফ। এখন অন্যান্য দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করছে পীস কমিটি। এবারের শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সাথে দ্বিতীয় বারে বৈঠকের আলোচনা সফল ও সন্তোষজনক হয়েছে এ মন্তব্য করে কেএনএফ সংগঠনের সেন্ট্রাল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক লাল জং ময় বম।

            গত ২০২৩ সালের বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা নেতৃত্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সমন্বয়ে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ বিপথগামী সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করে এ পীস কমিটি। এরপর পর থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেনএনএফ সাথে শান্তি প্রক্রিয়ার আলোচনা চালিয়ে আসছে পীস কমিটি।

            ২০০৮ সালে এ সংগঠনের জন্ম। শুরুতে এ সংগঠনের নাম ছিলো কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও)। এর পরবর্তীতে বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি, রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম উপজেলা নিয়ে তাদের কল্পিত কুকি-চীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) গঠন করে। এ রাজনৈতিক সংগঠন কেনএনএফ বম, পাঙ্খুয়া, লুসাই, খুমী, ম্রো ও খিয়াং নামে ৬ টি জাতিগোষ্ঠী মিলে কুকি চীন রাজ্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনে সশস্ত্র সংগ্রামের ঘোষণা দেয়। ২০১৬ সালে কেনএনএফ রাজনৈতিক সংগঠনের সশস্ত্র শাখা কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেনএনএ) গঠন করা হয়। ২০১৯ সালে ইনফেন্ট্রি ও কমান্ডো প্রশিক্ষণের পর তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ফিরে আসে ও রুমা উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে গোপন ঘাটি স্থাপন করে। শুরু হয় কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেনএনএ) সশস্ত্র কার্যক্রম। এভাবে পৃথক রাষ্ট্র গঠনে সশস্ত্র সংঘাটে লিপ্ত হয় কেনএনএ। এ সংগঠনের রাজনৈতিক ও সশস্ত্র শাখার নেতৃত্বে প্রধান নাথান বম। সে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা একজন গ্রাজুয়েট, চিত্রশিল্পী ও লেখক। সে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বান্দরবান থেকে তিনি প্রার্থি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে এ কেনএনএ সশস্ত্র সংঘাট বেড়ে গেলে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করে পীস কমিটি। কেএনএফ সাথে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে জেলায় পর্যটক যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জেলা প্রশাসন।

খবরটি 366 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen