আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন। গতকাল জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং দেশটির জনগণকে সুরক্ষার এবং গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর মধ্যে দেশজুড়ে জান্তা নিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। শনিবার প্রতিবাদকারীদের মাথা ও বুকে গুলির হুমকি উপেক্ষা করে সারাদেশে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভ দমনের নামে নির্বিচারে গুলি চালায় সেনা নিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা বাহিনী। এসব প্রাণহানির ঘটনায় জান্তাপ্রধানের এ বক্তব্য লজ্জা বা প্রহসন বলে আখ্যা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিন ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে হত্যার হুমকি উপেক্ষা করে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে জান্তাবিরোধী মিছিল করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদকারীদের ওপর চড়াও হয়। দালা শহরতলির একটি থানার বাইরে বিক্ষোভের সময় এলোপাতাড়ি গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। এতে চার বিক্ষোভকারী নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হন। বাণিজ্যিক এ রাজধানীর উত্তর দিকের জেলা ইনসেইনে বিক্ষোভে গুলি চালালে সেখানে অন্তত তিনজন নিহত হন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে জানান, নিহত তিনজনের মধ্যে স্থানীয় একটি অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবল দলের এক খেলোয়াড় রয়েছেন। মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাসিওতে তিনজন, ইয়াঙ্গুনের কাছে বাগো অঞ্চলে চারজন ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হোপিন শহরে এক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আর ইয়াঙ্গুনে সব মিলিয়ে অন্তত ২৪ প্রতিবাদকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এঘটনায় নাউ জানায়, মান্দালয়ের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ২৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী একটি শিশুও রয়েছে। এরপর সাগাইং শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। আর সেখানে কতজন হতাহত হয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নাউয়ের দাবি, শনিবার সব মিলিয়ে অন্তত ৯১ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলির ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ। শনিবার সংস্থাটি জানায়, সেনাবাহিনীর সহিংসতায় বহু নিহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকশিনারের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশজুড়ে অন্তত ৪০ স্থানে শিশুসহ বহু নিহত, শত শত বিক্ষোভকারী আহত, গণগ্রেপ্তারের খবর পাচ্ছি আমরা। ক্ষমতাচ্যুত আইনপ্রণেতাদের জান্তাবিরোধী গোষ্ঠী সিআরপিএইচের মুখপাত্র ড. সাসা বলেছেন, শনিবার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য লজ্জা দিবস। চারশর বেশি নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকে হত্যার পর সামরিক বাহিনীর জেনারেলরা সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করছেন। শুক্রবার মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের বলা হয়েছে, আপনাদের এর আগের মৃত্যুগুলো থেকে শেখা উচিত যে, আপনারা মাথা ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতো বিপদে পড়তে পারেন।
এদিকে, গতকাল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে রাজধানী নেপিদোতে সামরিক কুচকাওয়াজ ও সামরিক শক্তি প্রদর্শনী হয়। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দেশটির শীর্ষ জেনারেল মিন অং হদ্মাইং। এ সময় তিনি নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কবে ভোট হবে, সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি। জান্তাপ্রধান