আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টানা দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলে পূর্ব ইউরোপের এ দেশটিতে সামরিক অভিযান বন্ধের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে অনেকে পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে বিজয়ের জন্য রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। রুশ সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা হুমকির মুখে পড়লে এ অস্ত্র ব্যবহার করা হবে। শুক্রবার (৭ জুন) রাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

            বার্তাসংস্থা রয়টার্স প্রতিবেদনে বলছে, ইউক্রেনে বিজয় নিশ্চিত করতে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার দরকার নেই। এ কথা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপের সবচেয়ে মারাত্মক এ সংঘাত যে পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হবে না, সে বিষয়ে এটি এখন পর্যন্ত ক্রেমলিনের সবচেয়ে জোরালো ইঙ্গিত। রাশিয়ার এ প্রেসিডেন্ট বলেন, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার কেবল ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে সম্ভব দেশের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকির ক্ষেত্রে। আমি মনে করি না, এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি এখন হয়েছে। রাশিয়ার পারমাণবিক মতবাদ পরিবর্তন না করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন না পুতিন জানিয়েছেন। মূলত কোন ধরনের পরিস্থিতিতে এ অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে সেটি এ মতবাদের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রয়োজনে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারে, যদিও তিনি বর্তমান সময়ে এমন কিছু করার প্রয়োজন দেখেন না।

            ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ার সেনাবাহিনী। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসের মাথায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, রাশিয়ার ভূখণ্ড রক্ষার জন্য তথা আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে প্রস্তুত। এছাড়া আরও বেশ কয়েকবার পুতিন পুরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে হুমকি দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া। এছাড়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চলকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে মস্কো। রাশিয়া এখন ক্রিমিয়ার পাশাপাশি এবং এ চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে এখন তার নিজস্ব ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বিবেচনা করে। আর পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত ইউক্রেন যদি এসব ভূখণ্ড পুনরায় দখলে নিতে চায় তাহলে সেটি এ অঞ্চলে পারমাণবিক হামলার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তোলে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা শুরু করার পর থেকে রাশিয়া বার বার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছে। এছাড়া রাশিয়ার এই সতর্কবার্তাকে গুরুত্বের সাথে নেওয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

            রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। বিশ্বের মোট ১২ হাজার ১০০ টি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মধ্যে ১০ হাজার ৬০০ টির বেশি এ দুই দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারে রয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে চীনের হাতে। এরপর পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে রাশিয়ার কাছে প্রায় এক হাজার ৫৫৮ টি নন-স্ট্র্যাটেজিক পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। স্বচ্ছতার অভাবের কারণে রাশিয়ার এ ধরনের অস্ত্রের সঠিক পরিসংখ্যান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোন দেশ যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করেনি।

খবরটি 344 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen