ব্রেকিং নিউজ:

স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সামরিক শাখা কেএনএ নারী দলের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক আকিম বম (১৭) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। শুক্রবার (১৭ মে) ভোর সকালে জেলা সদরে লাইমী পাড়া এলাকায় র‍্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আনম ইমরান খান।

            র‍্যাব মিডিয়া উইংয়ের আনম ইমরান খান জানান, কেএনএফ নারী শাখার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক আকিম বমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দেশে বিদেশে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত।

            আকিম বম তার সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে জানায়, ২০২৩ সালে সে কাল্পা কেউক্রাডং এলাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ভর্তি হয়। এ সময় মাইকেল নামে একটি ছেলে সঙ্গে পরিচয় ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাইকেলের মাধ্যমে সে কেএনএফ সামরিক শাখা কেএনএ নারী দলে ট্রেনিংয়ে যায়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শুরু দিকে এক সন্ধ্যায় আকিম ও মাইকেল পায়ে হেঁটে কেএনএফ ট্রেনিং সেন্টারের দিকে রওনা হয়। পরের দিন ভোর পাঁচ টার দিকে তারা রোয়াংছড়ির গহীন পাহাড়ি জঙ্গলের ট্রেনিং সেন্টারে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছানোর পর ভান থার ময় বম নামে কেএনএফ একজন নারী কমান্ডারের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয় এবং ট্রেনিং সেন্টারে তাদের স্বাগত জানায়। আকিমের দেওয়া তথ্য থেকে সেখানে আরও অনেক বম নারী ছিল। তাদের বেশিরভাগের মুখে কালি মাখা থাকতো। যার কারণে অনেকে অপ‌রি‌চিত। মুখের এ কা‌লি প্রতি ৭ দিন পর বদল করত। ট্রেনিং সেন্টারের নাম ছিল কেডিওন (ঈশ্বরের দিকে)। তাদের ব্যাচে ২০ জন প্রশিক্ষণার্থী বম নারী ছিল। তাদের প্রশিক্ষণ দিতো ৪-৫ জন এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য আলাদা সদস্য নিয়োজিত ছিল।

            কেমন প্রশিক্ষণ হত: প্রশিক্ষণের বিষয়ে সে জানায়, ভোর ৩ টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ট্রেনিং শুরু করতো। প্রশিক্ষণ হিসেবে শারীরিক প্রশিক্ষণ বিশেষ করে মার্শাল আর্ট শেখানো হতো। প্রশিক্ষণের কষ্ট সহ্য করার জন্য তাদের বেত দিয়ে আঘাত করা হতো। এছাড়া বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য লাঠি দিয়ে আঘাত ও টর্চার করা হতো। পাহাড় ও জঙ্গলে কীভানে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয় এ ব্যাপারে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। এছাড়াও জঙ্গলে বৈরি পরিবেশে কীভাবে টিকে থাকতে হয় সে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ চলতো সকাল ১০ টা পর্যন্ত। এ সময় সাধারণ খাবারের পাশাপা‌শি তারা বনের পাখি, কাঠবিড়ালি শিকার করে রান্না করে খেত। তার প্রশিক্ষণের সময় মেয়েদের একদলে ৫০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক পুরুষ সদস্য প্রশিক্ষণে ছিল। রুমা এলাকায় আরও দেড় শতাধিক নারী পুরুষ প্রশিক্ষণরত ছিল সে এ তথ্য জানায়।

            গত ৭ এপ্রিল বান্দরবানে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক কেএনএফ সদস্যকে আটক ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

            গত ০২ এপ্রিল রাত ৯ টায় বান্দরবানের রুমা উপজেলায় রুমা সোনালী ব্যাংক ডাকাতি করে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ সময় লুট করে ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। এ ঘটনায় ছিনিয়ে নিয়ে যায় আনসার ও পুলিশের ১৪ টি অস্ত্র। অপহরণ করে ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে। এর পরের দিন ০৩ এপ্রিল দুপুর ১২:৩০ টা সময় বান্দরবানে থানছি উপজেলায় ব্যাংক ডাকাতি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে অনুমানিক ১৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা। এর পরের দিন ০৪ এপ্রিল সকালে বান্দরবানে থানচি উপজেলায় আলীকদমের ২৬ কিলো মিটার এলাকায় সামরিক চৌকিতে হামলা করে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সামরিক চৌকিতে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করে নিরাপত্তা বাহিনী। এর পরের দিন ০৫ এপ্রিল রাতে থানছি উপজেলায় থানছি থানায় হামলা করে কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ হামলা ঘটনায় কয়েক ঘন্টা যুদ্ধ করে নিরাপদে পালিয়ে যায় কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও অস্ত্র লুট ঘটনায় রুমায় ৫ টি ও থানচিতে ৪ টি মোট ৯ টি মামলায় অজ্ঞাত নামা প্রায় ১৮০ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়। অস্ত্র  ও টাকা উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী।

খবরটি 561 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন