ফিচার ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করে পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে শপথ নিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও আওয়ামী লীগ দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গভবনে তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা শপথ নিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ টি আসনে জয়লাভ ও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা টানা ৪র্থ বার ও দেশ শাসনে ৫ম বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ পরিচালনায় এ নিয়ে ২৫ বছর ক্ষতায় থাকার পাকাপোক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২৫ বছর পর সরকার গঠন করলে এর আগের মেয়াদে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তার রাজনৈতিক জীবনে প্রথম দফায় প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্ব পালনের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ৪র্থ বার মেয়াদে ২০ বছর সরকার প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন।

            গত বছর ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন শীর্ষস্থানীয় রাষ্ট্রনায়ক, সরকার প্রধান ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ভিত্তিক স্বাধীন, নির্দলীয় ও আন্তর্জাতিক নীতি বিষয়ক থিংক ট্যাংক লোই ইনস্টিটিউট। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সারাবিশ্ব ব্যাপী রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতা স্থিতিশীল রেখে উন্নয়নের লক্ষ্যেমাত্রা অর্জনে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন থাকার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়, সরকার প্রধান ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি এ পথে হাটা শুরু করেছেন। সারাবিশ্বে ১৯০০ সালের গোড়ার দিকে রাজতন্ত্র পতন শুরু হলে উত্থান ঘটে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র। বিশ্বে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ও আধুনিক সমাজতন্ত্র পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন থাকার প্রথা গড়াপত্তন করে সোভিয়েত রাশিয়া, গণচীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কিউবা ও বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যতদিন যাচ্ছে রাশিয়া ও চীনের সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন থাকার ফর্মুলা বা পদ্ধতি অনুসরণ করছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধান। বিশ্বে প্রসারিত হচ্ছে দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন থাকার লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, আধুনিক সমাজতন্ত্র, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র পদ্ধতি অনুসরণ করছে অনেক দেশ। সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন থাকায় ও ক্ষমতা স্থিতিশীলতায় অভুতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়েছে চীন, রাশিয়া, ইরান, ব্রুনাইয়, গিনি, উত্তর কোরিয়া, কম্বোডিয়া ও ভারত। বিশ্বের অনেক রাষ্টের ক্ষমতা স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন থাকার পদ্ধতির পদাংঙ্ক অনুসরণ করছে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের রাষ্ট্রেগুলোর রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধান।

           অপরদিকে ১৯০০ সালের গোড়ার দিকে সারাবিশ্বে গড়াপত্তন শুরু করে গণতন্ত্র। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গণতন্ত্রের মডেল হয়ে ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ড। সে সময় একক পরাশক্তি হয়ে ওঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা। সারাবিশ্বে আধিপত্য বিস্তার ও প্রভাব ধরে রাখার লক্ষ্যে আমেরিকা অবস্থা বুঝে ব্যবহার করতে থাকে এ ২ টি মোক্ষম অস্ত্র গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। বিশ্বের মধ্য কৌশলে ও আধিপত্য বিস্তার করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এক প্রকার সফল হয় পরাশক্তি আমেরিকা। ২০০০ সালের পর পরাশক্তি রাষ্ট্র চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক নেতৃত্বে ও আধিপত্য বিস্তার লাভে প্রতিযোগিতা পদক্ষেপ নেয়। অন্যদিকে শুরু হয় ইউক্রেন সাথে রাশিয়ার সমস্যায় আমেরিকার মতবিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নেয় ইউক্রেনে আমেরিকার প্রক্সি যুদ্ধ। তাইওয়ান সাথে চীনের সমস্যায় আমেরিকার মতবিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নেয় তাইওয়ানে টান টান যুদ্ধের উত্তেজনা। সর্বশেষ উত্তর-পশ্চিম এশিয়ার মধ্যেপ্রাচ্য দেশ ইসরায়েল সাথে ফিলিস্তিন হামাস সমস্যায় আমেরিকার মতবিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নেয় ইসরায়েল সাথে ফিলিস্তিন যুদ্ধ। ইসরায়েল সাথে ইরান, ইরাক ও অন্যান্য দেশগুলোর সমস্যায় আমেরিকার মতবিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নেয় মধ্যেপ্রাচ্য টান টান যুদ্ধের উত্তেজনা। এর কয়েক বছর আগে মানকাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অজুহাতে মধ্যেপ্রাচ্য দেশ ইরাকে প্রকাশ্যে যুদ্ধ করে ধবংস করে নেটো শক্তি ও আমেরিকা। এর পর মানকাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অজুহাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ আফগানিস্তানে প্রকাশ্যে আক্রমণ করে ধবংস করে নেটো শক্তি ও আমেরিকা। আফ্রিকা মহাদেশের দেশ লিবিয়ার মানকাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অজুহাতে প্রকাশ্যে আক্রমণ করে ধবংস করে নেটো শক্তি ও আমেরিকা। এভাবে আফ্রিকা মহাদেশের অনেক দেশ সুদান, সোমালিয়া, কেনিয়া, মোজাম্বিক, সিয়েরা লিওন, মালি, নাইজেরিয়া, কঙ্গো, উগান্ডা, রুয়ান্ডায় মানকাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অজুহাতে প্রকাশ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে ধবংস করে নেটো শক্তি ও আমেরিকা। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের অধিকাংশ দেশে মানকাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অজুহাতে যুদ্ধ বিগ্রহ লাগিয়ে পশ্চিমা শক্তি নেটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আধিপত্য বিস্তার ও প্রভাব ধরে রাখার ব্যস্ত রয়েছে। যখন নেটো শক্তি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বিস্তার ও প্রভাব ধরে রাখার মোক্ষম অস্ত্র মানকাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে গোলক ধাঁধায় তালমাতাল বিশ্ব। তখন বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপদ পরিবর্তনে শুরু হয় বৈশ্বিক মেরুকরণ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সময় গড়িয়ে পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্ব ও আধিপত্য বিস্তারে বৈশ্বিক মেরুকরণে পূর্ব অক্ষয় পরাশক্তি রাশিয়া, চীন ও ভারত এবং পশ্চিম অক্ষয় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো ভুক্ত রাষ্ট্রগুলো নিয়ে বিশ্বের পূর্ব ও পশ্চিম ২ টি পরাশক্তির মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিশ্বের মেরুকরণের প্রভাবে অনেক রাষ্ট্রের মধ্যে গড়ে উঠেছে গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় আধিপত্য গণতন্ত্র, স্বৈরচারী গণতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, স্বৈরাচারী শাসন ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা।

            লোই ইনস্টিটিউট প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের দক্ষিণ এশিয়া এ অঞ্চলটি আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ নিয়ে গঠিত। প্রতিবেদনে আরও অনেক দেশের রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় অনন্য নজির স্থাপন করে টানা ৪র্থ বার ও দেশ শাসনে ৫ম বারে ২৫ বছরের মতো প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে থাকার পাকাপোক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার নজির স্থাপন করলেন ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এখন ৫ম বারে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

            অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া বিশ্বের আরও অনেক রাষ্ট্রের সরকার প্রধান তাদের নিজ দেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আছেন। একই সঙ্গে তারা নিশ্চিত করে চলেছেন দেশের জনগণ ও মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। বিশ্বের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া। ১৯৮৫ সাল থেকে কম্বোডিয়ার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হুন সেন। গত বছরের মাঝামাঝিতে পদত্যাগ করা ৭০ বছর বয়সী হুন সেন কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন ৩৮ বছর। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভূমিধস জয়লাভ করে হুন সেনের রাজনৈতিক দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)। পরে নিজের বড় ছেলে হুন মানেত কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন কম্বোডিয়ার নেতা হুন সেন। প্রকৃতপক্ষে সারাবিশ্ব থেকে দেখলে দীর্ঘ মেয়াদী শাসকদের তালিকায়ে এ কম্বোডিয়ার নেতা হুন সেন শীর্ষ পাঁচের মধ্যে স্থান পেয়েছেন।

            লোই ইনস্টিটিউট প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনাইয়। বিশ্ব ব্যাপী প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন শাসক ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ রয়েছেন সবার ওপরে। ১৯৬৭ সাল থেকে দীর্ঘতম সময়ে ক্ষমতায় রয়েছেন ৭৭ বছর বয়সী সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ। সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্র প্রধানদের মধ্যে পার্থক্যের কারণে কিছুটা গভীর তাৎপর্যময় মনে হতে পারে। তবে অন্য অনেক দেশের মতো ব্রুনাইতে এ ভূমিকাগুলো একে অপরের সাথে জড়িত। ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ বর্তমানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও অর্থনীতি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

            পূর্ব এশিয়ার দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১২ সাল থেকে দেশটির ক্ষমতায় রয়েছেন। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৭০ বছর বয়সী শি জিন পিং শাসন বেশ দৃঢ়ভাবে তৃতীয় মেয়াদে প্রসারিত হয়। অধিকন্তু তিনি একাধারে চীনের রাষ্ট্রীয় কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের প্রধান, চীনের সাম্যবাদী দলের মহাসচিব এবং সাম্যবাদী দলের কেন্দ্রীয় সামরিক পরিষদের চেয়ারম্যান। শি জিনপিং ১৯৫৩ সালের ১৫ জুন চীনের বেইজিং শহরে জন্মগ্রহণ করেন। শি জিন পিং দীর্ঘকাল যাবত সক্রিয় ও চীনের সাম্যবাদী দলের প্রয়াত নেতা শি চুংশুনের সন্তান। শি জিনপিং পারিবারিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। তার বাবা শি ঝংজুন মাও সে তুং এর অধীনে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। শিন ঝংজুন চীনের গৃহযুদ্ধের সময় মাও সে তুং এর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।

            উত্তর এশিয়ার দেশ রাশিয়া। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এর সীমাহীন অংশীদার ও বন্ধু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ২০০০ সাল থেকে রাশিযার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার শাসন ক্ষমতায় প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী আছেন। মূলত দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আছেন ভ্লাদিমির পুতিন। আর চলতি বছরের মার্চে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তিনি ৬ বছরের মেয়াদের জন্য জয়ী হবেন যা আশা করা হচ্ছে। ৭১ বছর বয়সী পুতিনের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। রাষ্ট্রযন্ত্র ও রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমের নিরঙ্কুশ সমর্থন এবং প্রায় প্রধান কোন বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিহীন নির্বাচনে ভ্লাদিমির পুতিন জয়ী হওয়াটা এক রকম নিশ্চিত।

                মধ্যে এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তান। রাশিয়ার মিত্র পরিচিত তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাখমন ৩২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পর তার পুত্রের ক্ষমতা গ্রহণের পথ তৈরি করে রেখেছেন তিনি। গত নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা যায়। তাজিকিস্তানের নেতা ইমোমালি রাখমন ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে পঞ্চম বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলেন এ তাজিক নেতা রাখমন। ১৯৯২ সাল থেকে ৯৫ লাখ জনগণের দেশটি পরিচালনা করছেন ৬৮ বছরের তাজিক নেতা রাখমন। ২০১৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকার মেয়াদ বাড়িয়েছেন।

            উত্তর-পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরান। এ তালিকায় আছেন ৮৫ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ইরানের প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার চেয়ে বেশি ক্ষমতাধর সুপ্রিম লিডার আলী খামেনি। ১৯৮৯ সাল থেকে প্রায় ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ১৯৮৯ সালে ইমাম খোমেনির মৃত্যুর পর ১৯৯০ সালে সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ইরানের সব অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিনির্ধারণ করেন সুপ্রিম লিডার আলী খামেনি। ১৯৩৯ সালে ইরানের শহর মাশাদে জন্মগ্রহণ করেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। বাবাকে অনুসরণ করে তিনি হন ধর্মগুরু।

            লোই ইনস্টিটিউট প্রতিবেদনে আরো বলছে, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি। বিশ্ব ব্যাপী দ্বিতীয় দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতাসীন শাসক হলেন আফ্রিকার দেশ গিনির প্রেসিডেন্ট তেওডোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা এমবাসোগো। সামরিক বাহিনীর সাবেক জেনারেল ওবিয়াং ১৯৭৯ সালে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং পরে জাল ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। আফ্রিকার দেশ ইকুয়াটোরিয়াল গিনির দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন ৮০ বছর বয়সী তেওডোরো ওবিয়াং এনগুয়েমা এমবাসোগো। তেওডোরো ওবিয়াং মতো আফ্রিকান কিছু দেশের শাসকরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছেন। এর মধ্যে ১৯৮২ সাল থেকে ক্যামেরুনের ক্ষমতায় রয়েছেন প্রেসিডেন্ট পল বিয়া। ১৯৮৬ সাল থেকে উগান্ডার ক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট ইয়ওয়েরি মুসেভেনি। ১৯৯৭ সাল থেকে আফ্রিকার কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে রয়েছেন ডেনিস সাসু এনগুয়েসো। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে দেশটি শাসন করে চলেছেন ইরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ারকি। ১৯৯৪ সাল দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন রুয়ান্ডা দেশটির প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন পল কাগামে।

            লোই ইনস্টিটিউট প্রতিবেদনে আরো বলছে, পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশ। চীন ও রাশিয়ার বন্ধু বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার গ্রিগোরিভিচ লুকাশেঙ্কো। ১৯৯৪ সাল থেকে আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আর এখন ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রায় ৩৩ বছর ধরে দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন ৬৯ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। ১৯৫৪ সালে বেলারুশে আলেকজান্ডার গ্রিগোরিভিচ লুকাশেঙ্কো জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৯১ সালের ২৫ আগস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেলারুশ আলাদা হয়ে পৃথক রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯৪ সালে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সোভিয়েত ইতিহাসে লুকাশেঙ্কো ছিলেন সফলতম সামরিক কর্মকর্তাদের অন্যতম। বেলারুশ স্বাধীনতা ও প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে রয়েছেন আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো।

খবরটি 556 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen