পযর্টন ডেস্ক: জসীম উদ্দিন। পল্লীকবি নামে তিনি পরিচিত। গ্রাম বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য, যাপনের ধরন তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, এগুলো তাকে প্রভাবিত করেছিলো। ফলে তার লেখায় গ্রামবাংলার রূপ এবং গ্রামীণ মানুষের জীবনধারা সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি কবিতা ছাড়া গান, উপন্যাস এবং আরো নানাবিধ লেখা পাঠকদের উপহার দিয়েছেন। সমৃদ্ধ এ কবির জন্ম ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলার অম্বিকাপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে। গোবিন্দপুর গ্রামে তার বাড়িতে পৌঁছালে প্রথমে চোখে পড়বে মূল ফটক আর ফটকের ভেতরে ডান পাশে একটা উঁচু কবরস্থান। সে কবরস্থানে ডালিম গাছের নিচে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন আমাদের পল্লীকবি জসীম উদ্দিন। এছাড়া তার পরিবারের আরো অনেকে সেখানে শায়িত আছেন। পুরো বাড়ি জুড়ে গাছপালা থাকার কারণে ছায়া সুনিবিড় একটা শান্ত পরিবেশ বিরাজ করে সেখানে। বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় কবির লেখা কবিতার লাইন কবি অনুরাগীদের জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মূল ফটকের পাশে একটা দোকান, তার সাথে ছোট একটা কক্ষে কবি পরিবারের সংগ্রহশালা। আর তার পাশে দোলনা ও বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা। এরপর অন্দরমহলে গেলে চোখে পড়বে চারপাশে চারটা ঘর। একটা সিমেন্টের, বাকিগুলো টিনের। প্রতিটা ঘর খুব নান্দনিকভাবে সাজানো। সব ঘরে আছে সংগ্রহশালা। একটা ঘরের পাশে আছে ঢেঁকিঘর, আরেকটা ঘরের পাশে রান্নাঘর। সেখানে কবির মায়া মমতার ছাপ স্পষ্ট। যেন বাড়ির প্রতিটা কোণায় কবির স্মৃতি জ্বলজ্বল করছে।

            পল্লীকবি বাড়ির উঠোনে পেরিয়ে পেছনে গেলে আগে চোখে পড়তো একটা ছোট্ট পুকুর। এখন তা মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এমনকি আগে কবির বাড়ির চারপাশে কোনো দেয়াল ছিলো না। এখন দেয়াল তোলা হয়েছে অনেকটা অংশ জুড়ে। পুকুর ভরাট করে তার পাশ দিয়ে গাঁথা হয়েছে দেয়াল। সেখানে দুটো দোলনা রাখা হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তার সামনে একটা গাছের নিচে কিছু সিমেন্টের বেঞ্চি বানানো হয়েছে বসার জন্য। পুকুরের পাশে আরেকটা ঘর, সেটা কবির ছেলে হাসুর ঘর। সে ঘরে গেলে কবি ও কবি পরিবারের বিভিন্ন স্মৃতি সংগ্রহ দেখা যায়। এ ঘরের সামনে আছে একটা মস্ত বড় তেঁতুল গাছ। গাছটার বয়স হয়তো কবির বয়সের মতোই দীর্ঘ। তেঁতুল গাছ বরাবর একটু সামনে এগোলে সে কবর স্থানটা। কবরস্থানের পাশে রয়েছে আরেকটা টিনের ঘর ও তাতে নানাবিধ স্মৃতিচিহ্ন রাখা। সেখানে আছে নামাজের স্থান। বাঁশ দিয়ে একটা বৃক্ষবাড়ি তৈরি করা হয়েছে তার সামনে। পুরো বাড়িটা জুড়ে একটা শান্তি বিরাজ করে। যেকোনো দর্শনার্থী মুগ্ধ হবে সেখানে ভ্রমণে গেলে। কবির বাড়ির সামনে কুমার নদ। তা এখন মৃতপ্রায়। কুমার নদের আগে একটা লম্বা মাঠ। সেখানে প্রতি বছর জানুয়ারিতে আগে মাসব্যাপী জসীমমেলা হতো। এখন নিয়মিত হয় না। কবির বাড়ি থেকে বের হলে ডানপাশে মিউজিয়াম। মিউজিয়ামটা আগে ছিলো না, কয়েক বছর হলো তৈরি করা হয়েছে। মিউজিয়ামে প্রবেশের জন্য আলাদা করে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়, যার মূল্য ৪০ টাকা। মিউজিয়াম চত্বরটা বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে তৈরি এবং সাজানো গোছানো। মিউজিয়ামের ভেতরে কয়েকটা ভবন আছে। শুধু একটা ভবনে কবির স্মৃতি সংগ্রশালা করা হয়েছে। সংগ্রহশালাটি নিঃসন্দেহে সুন্দর, আরো যত্নের সঙ্গে কাজ করলে সব ভবন মিলিয়ে সুন্দর একটা পূর্ণাঙ্গ মিউজিয়াম বানানো সম্ভব।

            কীভাবে যাবেন: ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকেরা কবি জসীম উদ্দিন বাড়িতে এক দিনের ভ্রমনে সহজে যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলি ও গুলিস্তান থেকে ফরিদপুরে যাওয়ার পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। গুলিস্তান থেকে বাসগুলো পদ্মাসেতু হয়ে যায় আর গাবতলির বাসগুলো দৌলতদিয়া আরিচা হয়ে নদী পার হয়ে যায়। এ পথে সবচেয়ে ভালো বাস সার্ভিস গোল্ডেন লাইন। নন এসি বাসের ভাড়া ৩৫০-৪০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা। ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে গড়ে ঘন্টা তিনেক সময় লাগবে। সেখান থেকে কবির বাড়ি মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে। অটো যোগে চলে যাওয়া যায়। অটোর ভাড়া ১৫-২০ টাকা। পল্লীকবি বাড়ির ভেতরে প্রবেশ ও দর্শনে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা।

            কী খাবেন: ফরিদপুর গেলে অবশ্য তেতুলতলার মিষ্টি, বাগাটের দই আর মিষ্টি খেয়ে আসবেন। এছাড়া ফরিদপুর খেজুর গুড়ের জন্যে বিখ্যাত। চাইলে খেজুর গুড় নিয়ে আসতে পারেন।

            কোথায় থাকবেন: যদি একদিনের ভ্রমনে যান, তাহলে তো থাকা নিয়ে চিন্তা নেই। কিন্তু কবির বাড়ি ছাড়া আরো অনেক জায়গা যদি দেখতে চান, রাত থাকা প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে ফরিদপুর সদরে অনেক আবাসিক হোটেল পেয়ে যাবেন। ভাড়া খুব কম।

            ফরিদপুরে আরো যা দেখতে পারেন: বাইশরশি জমিদার বাড়ি, বিশ্ব জাকের মঞ্জিল, কানাইপুর শিকদার বাড়ি, অচীন বৃক্ষ, জগদ্বন্ধু সুন্দর এর আশ্রম, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, পাতরাইল মসজিদ, মথুরাপুর দেউল ইত্যাদি।

খবরটি 449 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen