বিশেষ খবর ডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ার আমাজন অঞ্চলের গহীন জঙ্গল থেকে ৪ শিশুকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো উদ্ধারকৃত শিশুদের ছবি টুইট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। পরে কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা গেছে শিশুদেরকে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত এ শিশুদের মধ্যে ৩ জন মেয়ে এবং একজন ছেলে শিশু। তারা সবাই সহোদর ভাইবোন বয়স যথাক্রমে ১৩ বছর, ৯ বছর, ৪ বছর ও ১ বছর। ছেলে শিশুটি বয়সে সবার ছোট। জঙ্গলের যে অংশ থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এ শিশুদের, সেটি কলম্বিয়ার আমাজন অঞ্চলীয় প্রদেশ কাকুয়েতা অ্যান্ড গুয়াভিয়েরের অন্তর্ভুক্ত।

            কলম্বিয়ার সরকারি সূত্রে জানা যায়, বিশেষ এ অভিযানে অংশ নেওয়া এ সৈন্যদলটির মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ১৬০ জন। এছাড়া ওই অঞ্চলের জঙ্গল সম্পর্কে অভিজ্ঞ আদিবাসী বিভিন্ন দলের ৭০ জন বেসামরিক মানুষ সেনাদের সহায়তা করেছেন। আকাশে বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ে বাধ্য হন বিমান চালক। তার আগে নিকটবর্তী বিমানবন্দরে যোগাযোগ করে সাহায্যের জন্য সংকেত পাঠিয়েছিলেন তিনি। ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের জেরে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন বিমানটির পাইলট, ওই শিশুদের মা এবং আত্মীয়, কিন্তু বিস্ময়করভাবে বেঁচে গেছে শিশুরা। এমনকি তাদের দেহে কোনা আঘাতের চিহ্নও পাওয়া যায়নি। ক্র্যাশ ল্যান্ডিংয়ের আগে পাইলট যে সংকেত পাঠিয়েছিলেন, সে সংকেতকে সূত্র হিসেবে ধরে নিয়ে এ শিশুদের উদ্ধার অভিযান শুরু করে কলম্বিয়া সেনাবাহিনীর একটি দল, যারা জঙ্গলে টিকে থাকার জন্য বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন।টুইটার হ্যান্ডেলে টুইট করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সেখানে দেখা যাচ্ছে। জঙ্গলে খানিকটা ফাঁকা একটি জায়গায় বসে আছে ওই চার শিশু; তাদের ঘিরে পেছনে দাঁড়িয়েছেন কয়েকজন সেনাসদস্য।

            কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বার্তায় বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য, পুরো দেশের জন্য আনন্দের একটি দিন। এ চার শিশু ৪০ দিন আগে জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিল। তাদেরকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট আরও জানান, কয়েক সপ্তাহ জঙ্গলে বসবাস, খাবার ও পানির অভাবে শিশুরা খানিকা দুর্বল হয়ে পড়েছে কোনো আঘাত বা অসুস্থতায় তারা আক্রান্ত হয়নি। স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে বার্তা এএফপি ও রয়টার্স জানিয়েছে, এই শিশুরা সবাই কলম্বিয়ার হুইতোতো নৃগোষ্ঠীর। তাদের বাড়ি গুয়েভারিয়ে প্রদেশের সান জোসে দেল গুয়েভারিয়ে শহরে। গত ১ মে একটি সেসনা ২০৬ উড়োজাহাজে করে নিজেদের মা এবং এক আত্মীয়ের সঙ্গে কলম্বিয়ার আরারাকুয়ারা প্রদেশে নিজেদের নানার বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিল।

            সেনাসদস্যরা বলেছেন তাদের জন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল জঙ্গলে দুর্ঘটনার স্থানটি খুঁজে বের করা। সেটি খুঁজে বের করার পর ওই শিশুদের পায়ের ছাপ, ফেলে দেওয়া ডায়াপার, অর্ধভূক্ত ফল— ইত্যাদি চিহ্ন ট্রেক করে দুর্ঘটনাস্থলের ৫ কিলোমিটার দূরে তাদের খোঁজ পাওয়া গেছে। জঙ্গলের যে এলাকায় গত ৫ সপ্তাহ ঘুরে বেড়িয়েছে এই শিশুরা সেটি জাগুয়ার, বিষধর সাপ ও অন্যান্য শিকারি প্রাণীতে পরিপূর্ণ। পাশাপাশি ওই অঞ্চলের মাদক পাচারকারীরাও তাদের পণ্য চালানের রুট হিসেবে এই এলাকাটি ব্যবহার করে।

            শিশুদের নিখোঁজের পর থেকে তাদের নানা ফিডেনসিও ভ্যালেন্সিয়া নিয়মিত পুলিশ ও সরকারি উদ্ধারকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনি বলেন, হুইতোতো গোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদেরকে শিশুকাল থেকেই মাছ ধরা, শিকার করা ও জঙ্গলে টিকে থাকার প্রাথমিক প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। আমার মেয়ে মারা গেছে, কিন্তু নাতি-নাতনিরা বেঁচে আছে এটাই বড় স্বান্তনা।

খবরটি 446 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen