আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে কিছু বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করছে ওয়াশিংটন। শক্তিশালী প্রতিপক্ষহীন একতরফা সাধারণ নির্বাচনে দেশটির ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী জয়ের দাবি করার পর যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণা দিলো। রোববার (২৩ জুলাই) দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এ দিন দেশটির বিরুদ্ধে মার্কিন এ পদক্ষেপের ঘোষণা সামনে এলো। সোমবার (২৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

            প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম্বোডিয়ায় সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) ভূমিধস বিজয়ের ঘোষণা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা কম্বোডিয়ায় কিছু বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করছে। গণতন্ত্রকে অবমূল্যায়ন ও ধ্বংস সাধনের চেষ্টা করা ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। কম্বোডিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শক্তিশালী প্রতিপক্ষহীন একতরফা এ নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের দাবি করে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের রাজনৈতিক দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)। ৭০ বছর বয়সী হুন সেন কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় আছেন গত ৩৮ বছর ধরে। কম্বোডিয়ার এবারের সাধারণ নির্বাচনকে ‘ব্যাপক প্রতারণা’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমনকি দেশটির শক্তিশালী কোনও বিরোধী দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। আর যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের হুন সেনের সিপিপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সক্ষমতা নেই। হুন সেন তার বড় ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে দলের ক্ষমতায় থাকার পথ পোক্ত করতে বিরোধী শক্তিবিহীন এ নির্বাচন আয়োজন করেছে। এছাড়া সিপিপির সঙ্গে এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে আরও ১৭ টি রাজনৈতিক দল। এ ১৭ টি দলের বেশিরভাগ নাম সর্বস্ব। তাদের কোনও দল এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে একটি আসনে জয় পায়নি। আর তাই ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচনের পরপর কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি কিছু সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র।

            যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ওয়াশিংটন ‘বিক্ষুদ্ধ’ যে নির্বাচনে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের দল সিপিপি কোনো কার্যকর প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হয়নি এবং এ নির্বাচন ‘অবাধ বা সুষ্ঠু ছিল না। নির্বাচনের আগে কম্বোডিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির রাজনৈতিক বিরোধী, মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে হুমকি ও হয়রানিতে জড়িত ছিল। আর এটি দেশের সংবিধানের চেতনা এবং কম্বোডিয়ার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে ক্ষুণ্ন ও অবমূল্যায়ন করেছে। তিনি আরও বলেন, আর এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিয়েছে যারা গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং একসঙ্গে দেশটিতে কিছু বিদেশি সহায়তা কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

            কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বলেছেন, গত তিন দশকের মধ্যে এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে। গণতন্ত্র ধারা অব্যহত রাখতে সাধারণ নির্বাচন সফল হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে বিদেশিদের ভোট নস্যাৎ করে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে করেছেন এ দাবি করেন তিনি।

            বহুল বিতর্কিত কম্বোডিয়ার এ নির্বাচনে ৮১ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছেন দেশটির নির্বাচন কমিটি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিটির মতে, নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৮৪ শতাংশ। চলতি বছরের মে মাসে ‘কাগজে ত্রুটি থাকার’ অভিযোগে সিপিপির একমাত্র প্রতিপক্ষ ক্যান্ডেল লাইট পার্টিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। মূলত গত ৩৮ বছর ধরে কম্বোডিয়ার ক্ষমতায় আছেন ৭০ বছর বয়সী হুন সেন। নির্বাচনের বিশ্বাস যোগ্যতা নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগকে পাত্তা দেননি তিনি। নির্বাচনে জয়ী হলে তার বড় ছেলে হুন মানেটের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এ ঘোষণা দিয়েছিলেন হুন সেন। আর এর মধ্য দিয়ে সাবেক এ খেমার রুজ গেরিলার শাসনের অবসান ঘটবে কম্বোডিয়ায়।

খবরটি 218 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen