বিশেষ খবর ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান ৩ টি পার্বত্য জেলায় সংসদীয় আসন ৩ টি থেকে ৭ টিতে উন্নিত করার দাবিতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) ঢাকায় রিপোটার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) সংবাদ সম্মেলন করেছে।

            পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রাম। আয়তনে বাংলাদেশের এক দশমাংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান তিনটি জেলার আয়তন ১৩,২৯৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১৮.৪২ ৮১৫ জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ টি পার্বত্য জেলায় মাত্র ৩ টি সংসদীয় আসন। সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং এখানের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবনমান পরিবর্তন থেমে আছে প্রয়োজন অনুযায়ী সংসদীয় আসন উন্নিত না করায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জন সংসদ সদস্যের পক্ষে ৩ টি পার্বত্য জেলায় ২৬ টি উপজেলার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা কষ্টসাধ্য।

            বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। এ জেলার আয়তন ৬,১১৬.১৩ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার সংখ্যা ১০ টি। জনসংখ্যা ২০২২ সালের জনশুমারী অনুযায়ী ৬,৪৭,৫৮৭ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ভোটার ছিল ৪,১৮,২১৫ জন। এত বড় বিশাল আয়তনের জেলায় মাত্র ১ জন এমপি। তার অনুরূপ খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।

            খাগড়াছড়ি জেলার আয়তন ২,৬৯৯.৫৬ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার সংখ্যা ৯ টি। জনসংখ্যা ৭, ১৪, ১১৯ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪,৪১,৭৪৩ জন।

            বান্দরবান জেলার আয়তন ৪,৪৭৯.০৪ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার সংখ্যা ৭ টি। জনসংখ্যা ৪,৮১,১০৯ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ২,৪৬,৬৫৩ জন।

            সংসদীয় আসন ৩ টি থেকে ৭ টিতে উন্নিত করার খসড়া রূপরেখা: একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে বিশাল আয়তনের জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুখ-দুঃখের খবরা-খবর জানা সম্ভব হয়ে উঠেনা। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে দুই দিনে একজন এমপি প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ করতে পারেন কিন্তু পার্বত্য জেলার এমপি প্রার্থী একমাসে প্রচার-প্রচারণা শেষ করতে পারেন না। উপজেলাগুলো থেকে জেলা শহরের দুরুত্ব অনেক বেশি এবং প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় পাহাড়, পর্বত, উঁচু-নিচু, ঝিরি-ঝর্ণা ও নিরাপত্তার অভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডসহ মৌলিক অধিকার বিষয়ে মাননীয় সংসদ সদস্যের সাক্ষাৎ পান না। এখানে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে সংসদ সদস্যদের সাক্ষাৎ পাওয়া মানে সোনার ডিম পাওয়া। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম এলাকায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিজেদের জীবনমান উন্নয়নের অংশ হিসেবে যাতায়াত ব্যবস্থা, উন্নত শিক্ষা, চাকুরি এবং অধিকার বিষয়ে যেসব মৌলিক দাবি-দাওয়া আছে তা সহজে উপস্থাপন করার মতো পরিবেশ গড়ে উঠেনি। এতো বিশাল আয়তনের জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা একজন সংসদ সদস্যের পক্ষে সম্ভব নয় এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে সঠিক বার্তা পৌছানো সম্ভব নয়। আয়তন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দাবির প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের ও বিশাল জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছানোর অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের দাবি খাগড়াছড়িতে ১ টি সংসদীয় আসন থেকে ২ টিতে, রাঙামাটিতে ১ টি সংসদীয় আসন থেকে ৩ টিতে এবং বান্দরবানে ১ টি সংসদীয় আসন থেকে ২ টিতে উন্নিত করা হোক।

            সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান, সাবেক কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শেখ আহম্মেদ রাজু, কেন্দ্রীয় মহাসচিব আলমগীর কবির, ঢাকা মহানগর সভাপতি আব্দুল হামিদ রানাসহ মহানগর, জেলা ও উপজেলার নেতৃবৃন্দ ।

            উপরোক্ত পরিসংখ্যান থেকে কম আয়তন, জনসংখ্যা ও ভোটার নিয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। ভোটার সংখ্যা ছিল মাত্র ১,৭৮, ৭৮৫ জন, যা বান্দরবানের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া ঢাকা-৪ আসন, খুলনা-৩ আসন, ময়মনসিংহ-৩ আসন রয়েছে। এসব আসনের আয়তন জনসংখ্যা ও ভোটার কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা থেকে অনেক কম ছিল। সারা দেশের ২৪ টি আসনে বান্দরবানের চেয়ে ভোটার সংখ্যা কম। তিন পার্বত্য জেলায় ২৬ টি উপজেলা রয়েছে। ২৬ টি উপজেলায় মাত্র ৩ জন সংসদ সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায্য দাবি হলো সংসদীয় আসন ৩ টি থেকে ৭ টিতে উন্নিত করে মৌলিক অধিকার ও জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

খবরটি 361 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen