অর্থনীতি ডেস্ক: দেশের ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) স্থাপিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৮৬৫ কোটি ৫৯ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা বাংলাদেশের ৮২ হাজার ২৩১ কোটি টাকার মতো (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে)। সর্বশেষ অর্থবছরের এই আয় তার আগের ২০২০–২১ অর্থবছরের তুলনায় ৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি এবং এটিই গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির রেকর্ড। মঙ্গলবার বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, গত অর্থবছরে রপ্তানির পাশাপাশি বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থানও বেড়েছে। এই সময়ে সব কটি ইপিজেডে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪০ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ এসেছে। আর কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার বাংলাদেশির। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি শ্রমবান্ধব পরিস্থিতি তৈরির কারণে ইপিজেডগুলোয় রপ্তানি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সাফল্য এসেছে। আমরা ইপিজেডগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করতে পেরেছি।

            বেপজা সুত্র জানায়, দেশের আটটি ইপিজেডে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, তাইওয়ান, হংকং, জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশসহ ৩৭ দেশের বিনিয়োগ আছে। দেশি–বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট ৬০৪ কোটি ৪ লাখ ডলার বা ৫৭ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ইপিজেড ছাড়াও গত জুন মাস পর্যন্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানকে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে শিল্প স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় বিনিয়োগে ২০.২৬%, রপ্তানিতে ৩০.৪১% ও কর্মসংস্থানে ৩৭% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চট্টগ্রাম ইপিজেড সবচেয়ে এগিয়ে।

            রপ্তানি আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি: বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরেই ইপিজেডগুলোর রপ্তানি প্রথমবারের মতো ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে (৮৬৫ কোটি ৫৯ লাখ ডলার বা ৮২ হাজার ২৩১ কোটি টাকা)। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে ইপিজেডের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মোট রপ্তানি হয়েছিল ৬৬৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারর বা ৬৩ হাজার ৫২ কোটি টাকার পণ্য। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৫২ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা ৭১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যা ইপিজেডের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বেপজার তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৫৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে। এ ছাড়া ঢাকা ইপিজেড ২১২ কোটি ২৯ লাখ, কর্ণফুলী ইপিজেড ১৪৪ কোটি ৮৭ লাখ, আদমজী ইপিজেড ৯৩ কোটি ৫৮ লাখ, কুমিল্লা ইপিজেড ৮১ কোটি ৪৮ লাখ, উত্তরা ইপিজেড ৩৭ কোটি ৬৭ লাখ, ঈশ্বরদী ইপিজেড ২০ কোটি ৯১ লাখ ও মোংলা ইপিজেড ১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাত থেকে এলেও ইপিজেডে এই হার ৫৫ শতাংশ। ইপিজেডের বাকি ৪৫ শতাংশ রপ্তানি আয়ের  গার্মেন্ট এক্সেসরিজ, ফুটওয়্যার ও চামড়াজাত পণ্য, টেক্সটাইল, ইলেকট্রনিক তাঁবু, ক্যাপ, প্লাস্টিক ইত্যাদি খাতের। ইপিজেডগুলোতে মোট ৪৫৬টি প্রতিষ্ঠান চালু আছে। এর মধ্যে ১৪৯টি পোশাক খাতের, বাকিগুলো অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত জুন পর্যন্ত ইপিজেডগুলো থেকে মোট পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৯ হাজার ৬০০ কোটি ডলার বা ৯ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকার। বেপজা জানিয়েছে, করোনা মহামারির ধাক্কা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণে রপ্তানিতে এমন মাইলফলক অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

            বেড়েছে বিনিয়োগের পরিমাণ: বেপজা জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের ৮টি ইপিজেডে মোট ৪০ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। এটি ইপিজেডের ইতিহাসে একক কোনো অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ। এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের বিনিয়োগ এসেছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে ইপিজেডগুলোয় ৩৪ কোটি ৭ লাখ ডলার বা ৩ হাজার ২৩৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছিল। সেই হিসাবে সর্বশেষ অর্থবছরে ইপিজেডে বিনিয়োগ ২০ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে চট্টগ্রাম ইপিজেড। ঢাকা ইপিজেড ৭ কোটি ১১ লাখ, আদমজী ইপিজেড ৭ কোটি ৬ লাখ, কুমিল্লা ইপিজেড ৬ কোটি ৭৫ লাখ, কর্ণফুলী ইপিজেড ৪ কোটি ৫২ লাখ, ঈশ্বরদী ইপিজেডে ৪ কোটি ২৮ লাখ, মোংলা ইপিজেড ১ কোটি ৮৭ লাখ ও উত্তরা ইপিজেড ৫২ লাখ ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে।

            নতুন কর্মসংস্থান ৬৫ হাজার: গত অর্থবছরে দেশের ৮টি ইপিজেড ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬৪ হাজার ১৬০ বাংলাদেশির নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে, যা এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪৭ হাজারের চেয়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ইপিজেডে ১৯ হাজার, ঢাকা ইপিজেডে ১০ হাজার ৪৫১, আদমজীতে ৯ হাজার ৯২৪, কুমিল্লায় ৯ হাজার ৭৯২, কর্ণফুলীতে ৭ হাজার ৩১৯, ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার, উত্তরা ইপিজেডে ২ হাজার ৫৯৯ ও মোংলা ইপিজেডে ১ হাজার ৯৬২ জনের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। সব মিলিয়ে গত জুন মাস পর্যন্ত ইপিজেডগুলো মোট ৫ লাখ ২ হাজার ৩৬৫ জনের কাজের সুযোগ হয়েছে।

            ইপিজেডগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি শ্রমবান্ধব পরিস্থিতি তৈরির কারণে ইপিজেডগুলোয় রপ্তানি, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সাফল্য এসেছে। আমরা ইপিজেডগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ক্রেতাদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করতে পেরেছি। এ কারণে গত অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির ১৭ শতাংশ এসেছে বেপজা থেকে। এটা ইপিজেডের জন্য একটা বড় সাফল্য। এই সফলতা ধরে রাখতে চান জানিয়ে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন কারখানা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ও কর্মসংস্থান বেশি, তাদের প্রাধান্য দিচ্ছি। আগামীতে আরও তিনটি ইপিজেড আসছে। সেটা বাস্তবায়ন হলে দেশে বিনিয়োগ ও রপ্তানি আরও বাড়বে।

খবরটি 362 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen