অর্থনীতি ডেস্ক: দেশের পণ্য রপ্তানি খাতকে দীর্ঘদিন ধরে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছে তৈরি পোশাকশিল্প। দেরিতে হলেও পোশাকের পর একসঙ্গে তিনটি খাত—হোম টেক্সটাইল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১০০ কোটি বা ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছে। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও শতকোটি ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। সব মিলিয়ে করোনার পর চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য রপ্তানিতে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ। তাতে দুই মাস বাকি থাকতেই চলতি অর্থবছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার কাছাকাছি পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। দেশীয় মুদ্রায় যা পৌনে ৪ লাখ কোটি টাকার সমান। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। সবকিছু ঠিক থাকলে পণ্য রপ্তানি চলতি অর্থবছর শেষে ৫ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ। এর আগে এক বছরে সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার। করোনার কারণে পরের দুই বছরে রপ্তানি কম হয়। রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে ৪৭৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৪০ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকার সমান। টাকার এই পরিমাণটা কত, সেটি বুঝতে একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। যাহোক, গত এপ্রিলে পণ্যের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেড়েছে। চা, শাকসবজি, ফলমূল, মসলাসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি প্রথমবারের মতো শতকোটি ডলারের মাইলফলকে পৌঁছেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১০৪ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছর এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের দুই মাস বাকি থাকতেই গত বছরের চেয়ে ১৮ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

            চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বেশ কয়েক বছর পর শত১কোটি ডলারের ঘরে ফিরেছে। পরিবেশদূষণের কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর এ খাতের রপ্তানি কমতে থাকে। গত দুই বছর রপ্তানি ছিল শতকোটি ডলারের নিচে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ১০১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি গত অর্থবছর ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকে পৌঁছায়। চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই গত বছরের রপ্তানিকে ছাড়িয়ে গেছে হোম টেক্সটাইল খাত। গত ১০ মাসে ১৩৩ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি। এদিকে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি টানা দুই বছর পর গত অর্থবছর শতকোটি ডলারের ঘরে পৌঁছায়। চলতি বছরও সেই ধারা বজায় থাকবে। কারণ, এখন পর্যন্ত পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ৯৭ কোটি ডলার। রপ্তানিতে বরাবরের মতো শীর্ষ স্থানে রয়েছে তৈরি পোশাক। গত এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ৩ হাজার ৫৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। শুধু এপ্রিলে ৩৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫৬ শতাংশের মতো।

            জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানি আয় বেড়েছে। এ ছাড়া আগের চেয়ে বিস্কুট ও বেকারি পণ্য, কনফেকশনারি এবং মসলার রপ্তানির পরিমাণও বাড়াতে সক্ষম হয়েছি আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জাহাজসংকট না থাকলে রপ্তানিতে আরও ভালো প্রবৃদ্ধি থাকত।

                        বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই আগামী বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিমধ্যে ক্রয়াদেশের হার কিছুটা পড়তির দিকে। আগামী জুন-জুলাই থেকেই রপ্তানি আয়ে তা প্রকাশ পাবে। রপ্তানি ধরে রাখতে উদ্যোক্তাদের নতুন উদ্যোগ লাগবে।

খবরটি 381 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen