অর্থনীতি ডেস্ক: পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে কর্মচাঞ্চল্য ও গতির সৃষ্টি হবে, তা অব্যাহত রাখতে সরকার মাস্টারপ্ল্যান করছে। ওই মাস্টারপ্ল্যানে সমুদ্র ও স্থল বন্দর ছাড়াও আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত থাকলে এ সেতু ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে সরকারের আরও অনেক মন্ত্রণালয় এবং অধীন সংস্থা জড়িত। সে কারণে এ পরিকল্পনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাণিজ্য, অর্থ, নৌ ও রেল মন্ত্রণালয় এবং এসব মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডা, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়ে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্প-১-এর আওতায় এরই মধ্যে কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠক থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন ওই কমিটি ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণের পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত অবকাঠামোগুলোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রকল্পের সভায় নেওয়া উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হচ্ছে (১) বেনাপোল স্থলবন্দরের উন্নয়নে পৃথক প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে; (২) বেনাপোল বন্দরে রেলের কনটেইনার রাখার জন্য কমলাপুর আইসিডির মতো আইসিডি স্থাপন; (৩) বেনাপোল বন্দরে পর্যাপ্ত স্থাপনাসহ ট্রাকস্ট্যান্ড ও ওপেন ইয়ার্ড, গোডাউন ও ল্যাবরেটরি সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ; (৪) যাত্রী ও মালামাল বেনাপোল বন্দর থেকে ভোমরা বন্দরে স্থানান্তর এবং স্থলবন্দরে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো (৫) মোংলা বন্দরের কোল্ডস্টোরেজ অবকাঠামো তৈরি; এবং (৬) দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ।

            সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাস্টারপ্ল্যানে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বে-টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। রেলে কনটেইনার পরিবহন বাড়াতে ধীরাশ্রমে আন্তর্জাতিক ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল, ভুটানের আঞ্চলিক বাণিজ্যের সুফল নিতে বেনাপোল, ভোমরাসহ দেশের স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর পর পরই এর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, বেনাপোল-ভোমরা স্থলবন্দরের সংযোগ তৈরি হবে। আঞ্চলিক সংযোগ বা রিজিওনাল কানেকটিভিটিতে অন্যতম ভূমিকা রাখবে এ সেতু। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গেটওয়ে হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে এ সেতুকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সেতু চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য ঢাকা সিটিকে পাশ কাটিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দ্রুত পরিবহনের সুযোগ তৈরি হবে। স্বল্পসময়ে মোংলা বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহন করা যাবে। ব্যবসায়ীরা ওই বন্দরটি ব্যবহারে উৎসাহী হবেন। চাপ কমবে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর। পদ্মা সেতু সড়ক ও রেল পথে সরাসরি বেনাপোলকে সংযুক্ত করায় ভারতসহ নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বাড়বে।

            বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান (ডব্লিউটিও) বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ ছাড়াও আঞ্চলিক বাণিজ্যে পদ্মা সেতু যুগান্তকারী প্রভাব সৃষ্টি করবে। দেশের সমুদ্র ও স্থল বন্দরগুলোর সংযোগ তৈরি হবে। গতি বাড়বে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্যান্য অবকাঠামো বিশেষ করে সমুদ্র ও স্থল বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে শুধু তাই নয়, বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানি করা পণ্য ঢাকায় আনতে যে সময় লাগে, সেতু চালুর পর তা অনেকাংশে কমে আসবে। একইভাবে ঢাকা থেকে রপ্তানি পণ্যও দ্রুত পরিবহন করা যাবে। পণ্য পরিবহনে গতি আসায় দুই দেশের সীমান্ত স্থলবন্দরগুলোর কার্যক্রমে গতি আসবে। এ কারণে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দরে যে অবকাঠামো সুবিধা বিদ্যমান তা আরও উন্নত করতে হবে।

            বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে গতি আসবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্য অবকাঠামোগুলোর উন্নয়ন জরুরি।  তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে চাইলে সবার আগে দেশের বহির্বাণিজ্যের প্রধান গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বন্দর উন্নয়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন জড়িত। দেশের অর্থনীতি যত বড় হচ্ছে, বন্দরের ওপর চাপ তত বাড়ছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব বে-টার্মিনাল, ধীরাশ্রম আইসিডিসহ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করার।

খবরটি 369 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen