অর্থনীতি ডেস্ক: রেলে গতি ফেরাতে যুক্ত হচ্ছে ১১শ’ কোটি টাকায় কেনা নতুন ইঞ্জিন ও বগি। ইন্দোনেশিয়া থেকে ৮শ’ কোটি টাকায় কেনা ২শ’ বগি পৌঁছার পর ১৮০টি ইতিমধ্যে বিভিন্ন অভিজাত আন্তঃনগর ট্রেনে সংযোজন করা হয়েছে। বাকি ২০ বগিও সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। আর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩শ কোটি টাকায় কেনা ১০টি ইঞ্জিন ট্রায়ালে রয়েছে রেলের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে। ট্রায়াল শেষে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব ইঞ্জিন ও বগিগুলো যুক্ত হলে রেল নতুন গতি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

            জানা যায়, দীর্ঘদিন রেল বহরে নতুন কোনো ইঞ্জিন যুক্ত হয়নি। যে কারণে বগি ও ইঞ্জিনের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সর্বোচ্চ গতিতে রেল চালানো সম্ভব হতো না। পুরনো ইঞ্জিনগুলো দুর্বল হওয়ার কারণে বেশি বগি সংযোজন করা সম্ভব হয় না। সুবর্ণ, সোনার বাংলা, তিস্তাসহ অনেক আন্তঃনগর ট্রেনে সর্বোচ্চ ১৮টি কোচের মাধ্যমে যাত্রীর পরিবহণ করা হয়। তাছাড়া পুরানো হওয়ায় সেগুলো কাঙ্ক্ষিত স্পিড তুলতে পারে না। নতুন ১০টি ইঞ্জিন যুক্ত হলে আন্তঃনগর ট্রেনের স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন ঠিক রেখে বাড়তি গতিতে চলবে। এতে যাত্রীদের যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হবে। একইভাবে মালবাহী ট্রেনে ২৫ থেকে ৩০টি কনটেইনার থাকায় ২৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারে না। এখন অন্তত তিনটি নতুন ইঞ্জিন দিয়ে পণ্য পরিবহণ করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এতে আগে যেখানে ৫০ থেকে ৫৫ ঘণ্টায় পৌঁছত, এখন সেখানে ১০ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসের পর বগি ও ইঞ্জিনগুলো নেয়া হয় চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে। ইঞ্জিন ও বগিগুলো বর্তমানে পাহাড়তলী ডিজেল শপে লোড ও লাইট ট্রায়ালে আছে। আগামী একমাসের মধ্যে ট্রায়াল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে রেলের বহরে যুক্ত হবে বলে জানা গেছে। আগে আসা বগিগুলো ইতিমধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ৫টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৩টি আন্তঃনগর ট্রেনে সংযোজন করা হয়েছে। নতুন আসা ২০ বগি যুক্ত হবে আরও ৩ আন্তঃনগর ট্রেনে।

            রেল সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চলের সোনার বাংলায় নতুন বগি যুক্ত হয়েছে। আগামী ৩ নভেম্বরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে নতুন বগি সংযোজন করা হবে। এছাড়াও ঢাকা-সিলেট রুটের কালনী এক্সপ্রেস ও ঢাকা-নোয়াখালী রুটের উপকূল এক্সপ্রেসেও নতুন বগি সংযোজন করা হবে। পূর্বাঞ্চলের মেকানিক্যাল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন ১০টি ইঞ্জিনের ট্রায়াল চলছে। কমিশনিং করছেন ৯ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল। ট্রায়ালে শতভাগ কার্যকর প্রমাণ হলে ইঞ্জিনগুলো ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হবে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এগুলো রেলবহরে যুক্ত হবে বলে জানায় রেল সূত্র।

            রেলওয়ে চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফকির মো. মহিউদ্দিন জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা সর্বশেষ ২০টি বগি সংযোজন করা হবে সুবর্ণ এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস এবং উপকূল এক্সপ্রেসে। এসব ইঞ্জিনের কমিশনিং করছেন ৯ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল। কোচ কম্পোজিশন অনুযায়ী ১৮টি কোচ প্যাসেঞ্জার বহন ক্ষমতার ওজনের বালুর বস্তা দিয়ে ইঞ্জিনের লোড ট্রায়ালও করা সম্পন্ন হয়েছে। ট্রায়ালে শতভাগ কার্যকর প্রমাণ হলে ইঞ্জিনগুলো ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হবে।

            পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, রেলওয়েতে প্রতিদিন পরিবর্তন আসছে। নতুন কোচ ও ইঞ্জিনগুলো পুরোদমে চালু হলে যাত্রী সেবার মান বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হয়নি রেল বহরে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে সময়সূচি মেনে রেল চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা ১০টি ইঞ্জিনে রেলে সেবা ও গতি বাড়বে। বাংলাদেশ রেলওয়েতে এ পর্যন্ত ১৭৮টি মিটারগেজ এবং ৯০টি ব্রডগেজ মোট ২৬৮টি ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ রয়েছে। ট্রেনের তুলনায় ইঞ্জিনের সংখ্যা কম হওয়ায় যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে সমস্যা অনেক দিনের। আর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিক ট্রেন পরিচালনার জন্য দৈনিক ১১২টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। এছাড়া কমপক্ষে আরও ২০ থেকে ২৫টি মেরামতের জন্য রাখতে হয়। কিন্তু দিনে পাওয়া যায় ১০০টি। এতে যথাযথ সেবা দেওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।

            ২০১৮ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভবনের সম্মেলনকক্ষে হুন্দাই কোম্পানির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৬০ টাকায় কেনা ইঞ্জিনগুলোর জন্য ঋণ দিয়েছে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

 

 

 

 

খবরটি 539 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen