বিশেষ খবর ডেস্ক: সরকারি পর্যায়ে ভারত থেকে ১২ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য জরুরি উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২২ মে পাঠানো ওই চিঠিতে সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখা ও জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভারতের ‘বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়’ অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ সরকার যেন দ্রুত কমপক্ষে ১২ লাখ টন গম আমদানি করতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, আমদানিকৃত গমের বড় অংশ আসত রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। এ দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের গম আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস হয়ে উঠেছিল ভারত। সম্প্রতি দেশটির সরকার গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের অনুরোধে দেশটি থেকে জি টু জি ভিত্তিতে গম আমদানির সুযোগ রয়েছে।

            সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে গম আমদানির লক্ষ্য পূরণ হলে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেসরকারি খাতের আমদানি প্রক্রিয়া গত মার্চে থমকে যায়। বিকল্প হিসেবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে। তবে সম্প্রতি ভারতও গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বাজারে গম, আটা ও ময়দার দাম বাড়তে থাকে হুহু করে। ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও দেশটির কৃষক পর্যায় থেকে পণ্য রপ্তানির বিষয়ে চাপ রয়েছে। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফারমার্স প্রকিউরমেন্ট প্রসেসিং অ্যান্ড রিটেইলিং কোঅপারেটিভস অব ইন্ডিয়া (এনএসিওএফ) সম্প্রতি এক চিঠিতে জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে গম রপ্তানি করতে আগ্রহী। এ চিঠির পরপরই খাদ্য মন্ত্রণালয় সরকারিভাবে গম আমদানির উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় চিঠি পাঠায়।

            খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘সরকারের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। এখন যে চিঠি পাঠানো হয়েছে এটি আগামী অর্থবছরে জি টু জি (সরকার টু সরকার) ভিত্তিতে গম আমদানির জন্য।

            খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, এ মুহূর্তে ভারত, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া- এ তিনটি দেশ আমাদের গম দিতে চাইছে। ভারত থেকে দুটি জাহাজ ১ লাখ মেট্রিক টন গম নিয়ে এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে। এ ছাড়া আরও ১ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির বিষয়ে দেশটির সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। ফলে খাদ্য আমদানি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

            ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে দেশে গমের উৎপাদন ছিল ১৯ লাখ ৮ হাজার টন, বর্তমানে তা কমে ১২-১৩ লাখ টনে নেমে এসেছে। অন্যদিকে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে গমের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতাও বেড়েছে। বর্তমানে দেশে গমের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশের দ্বিতীয় প্রধান এ খাদ্যপণ্যটির চাহিদার বেশির ভাগই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। গত অর্থবছরে প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন গমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ১২ লাখ টনের কিছু বেশি। এ ছাড়া সরকারি পর্যায়ে আরও প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন আমদানি বাদ দিলে বাকি ৫৮ লাখ মেট্রিক টনের পুরোটা আমদানি হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। আর বেসরকারি খাতের এ আমদানির বেশির ভাগই আসে রাশিয়া-ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা ও ভারত থেকে।

খবরটি 414 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen