অর্থনীতি ডেস্ক: খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে (এফএও) একটি আন্তর্জাতিক ‘বীজ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে (এফএও) মহাপরিচালক কু দোঙ্গইয়ু (Qu Dongyu) এর নেতৃত্বে সংস্থাটির প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ প্রস্তাব দেন। ডিজিটালাইজেশন এবং উদ্ভাবন প্রকল্পের জন্য একটি সমন্বিত তহবিল গঠনের জন্য খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালককে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে অবদান রাখতে বাংলাদেশ প্রস্তুত জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চলতি বছরের ৩-৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ব খাদ্য ফোরামে প্ল্যানারি স্পিকার হিসেবে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান এফএও মহাপরিচালক। বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় শক্তিশালী, উদ্ভাবনী এবং ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে বিদ্যমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এফএও মহাপরিচালক। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামভুক্ত দেশগুলো, বিশেষ করে ছোট দ্বীপ রাজ্যগুলোতে দ্রুত চাষ উপযোগী জমি হ্রাসে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পদ্ধতিতে এই ইস্যুটি মোকাবিলা করতে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মহাপরিচালককে পরামর্শ দেন। সমৃদ্ধ দেশ গড়ার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, তিনি বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত দেশে রূপান্তর করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যেখানে মানুষ উন্নত জীবন পাবে।

            প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি আন্তর্জাতিক বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে এটি শত শত বছর ধরে যে কোনো দুর্যোগে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতাকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৯৬ সালের নভেম্বরে বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় বাংলাদেশ মারাত্মক খাদ্য ঘাটতিতে ভুগছিল। সরকার গঠনের পরপরই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তার পর থেকে মাত্র দুই বছর পর তার সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যা, চাষযোগ্য জমির অভাবের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া- লবণ, খরা, জলাবদ্ধতা প্রভৃতি সহিষ্ণু ফসলের বিভিন্ন প্রজাতির বিকাশে দুর্দান্ত কাজ করছেন। খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের পর সরকার এখন সবার জন্য পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের ওপর জোর দিয়েছে জানান শেখ হাসিনা। দুর্যোগ মোকাবিলায় তার সরকার খাদ্য সংরক্ষণ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ওপর জোর দিচ্ছে জানান প্রধানমন্ত্রী।

            ঢাকায় ৩৬তম এফএও আঞ্চলিক সম্মেলন ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (এপিআরসি)-এর সফল আয়োজনে এফএও মহাপরিচালক সন্তোষ প্রকাশ করেন। খাদ্যশস্য, শাকসবজি, প্রাণিজ প্রোটিনসহ সব ধরনের খাদ্য নিরাপত্তা দ্রুত অর্জনে শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন তিনি। এফএও মহাপরিচালক আরও বেশি করে খাদ্য ও অর্থকরী ফসল উৎপাদনে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কৌশলের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রণী ভূমিকার প্রশংসা করেন।

            এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাম্বাসাডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, কৃষি সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম এবং রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান। আরও উপস্থিত ছিলেন এফএও সদর দফতর (রোম)-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো তোরেরো, এফএও আঞ্চলিক অফিস, ব্যাংকক-এর সহকারী মহাপরিচালক জং-জিন কিম এবং এফএওর ঢাকার প্রতিনিধি রবার্ট ডি সিম্পসন।

খবরটি 376 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen