পর্যটন ডেস্ক: পতেঙ্গা এলাকায় গড়ে উঠা আইসিডি ও ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকায় ঘোষণা করা হচ্ছে পর্যটন জোন। ওই এলাকায় সরকারি বেসরকারি সব ভূমিতেই কেবলমাত্র পর্যটন সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে। এর বাইরে কোন ধরনের স্থাপনা করতে দেয়া হবে না। এদিকে পতেঙ্গার পর্যটন জোনে ছোট্ট দুইটি এলাকা সংরক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ওই দুইটি এলাকার আয় থেকে পুরো সাত কিলোমিটার বাঁধ, লাইটিং, টয়লেট, চেঞ্চিং রুমসহ অন্যান্য অবকাঠামো পরিচালিত হবে। পতেঙ্গা এলাকার বিশৃঙ্খল অবস্থাকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর অন্যতম পর্যটন স্পট পতেঙ্গাকে ঘিরে বড় ধরনের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পতেঙ্গার নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ওয়েস্ট পয়েন্ট থেকে ইপিজেডের উত্তর পাশ পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকাকে ঘোষণা করা হচ্ছে পর্যটন জোন। এ জোনে আউটার রিং রোড থেকে ভেতরের দিকে যত ভূমি আছে সবগুলোতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো গড়তে হবে। পর্যটনকেন্দ্রিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও বিনোদনের নানা অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে। এর বাইরে যেসব স্থাপনা রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পতেঙ্গার ওয়েস্ট পয়েন্টের সীমানা থেকে পশ্চিম দিকে সাতশ’ মিটার জায়গা ঘিরে একটি সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তোলা হবে। জোন-১ নামের ওই এলাকায় পর্যটন ও বিনোদনের নানা অবকাঠামো, রাইডস, ফুড কর্ণার ইত্যাদি গড়ে তোলা হবে। এর বাইরে ইপিজেডের উত্তর পাশে প্রায় ছয় কিলোমিটার বিচ উন্মুক্ত থাকবে। এখানে যার যেভাবে ইচ্ছে ঘুরতে কিংবা সাগরপাড়ে সময় কাটাতে পারবে। উক্ত ছয় কিলোমিটার এলাকায় সাগরপাড়ে বিচে নামার জন্য কয়েকস্থানে সিঁড়ি, টয়লেট, চেঞ্জিং রুম নির্মাণ করে দেয়া হবে। পুরো এলাকায় থাকবে বৈদ্যুতিক বাতি। যাতে রাতে দিনে যে কোন সময় মানুষ নিরাপদে ওই এলাকায় বেড়াতে পারেন।
পতেঙ্গা বিচে বর্তমানে কার্ডধারী দেড়শ’ ক্ষুদে ব্যবসায়ীর দোকান রয়েছে। এদের প্রত্যেককেই পুনর্বাসন করা হবে। একটি পরিকল্পিত আদলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হবে। তবে কার্ড নেই এমন কেউ পুনর্বাসনের সুবিধা পাবে না। সংরক্ষিত ৭শ’ মিটারের পর উন্মুক্ত ছয় কিলোমিটার এলাকা বাদ দিয়ে বিচের একেবারে উত্তরাংশে ইপিজেডের উত্তর কর্ণারে সাগর ভরাট করা ২৩শ’ একর জায়গায় সংরক্ষিত জোন-২ নির্মাণ করা হবে। এখানেও বিনোদনের নানা সুযোগ সুবিধা রাখা হবে। জোন-১ ও জোন-২ এর মাঝে টয় ট্রেন চলাচলেরও ব্যবস্থা রাখা হবে। যাতে কোন পর্যটক এক জোনে প্রবেশ করে অপর জোন ঘুরে যেতে পারেন। জোন-১ ও জোন-২ এর জন্য বেসরকারি অপারেটর নিয়োগ করা হবে। সামর্থ্য আছে এমন পর্যটকরা টিকেট কিনে উক্ত দুইটি জোনে প্রবেশ করে সময় কাটাতে পারবেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, অত্যন্ত তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে পতেঙ্গা বিচকে নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে। আমরা চমৎকার একটি বিচ তৈরি করে দিয়ে এসেছিলাম। অত্যন্ত নান্দনিক একটি আবহ বিরাজ করছিল পতেঙ্গায়। কিন্তু আমরা ছেড়ে আসার সাথে সাথে পুরো এলাকা অরক্ষিত হয়ে যায়। পরিণত হয় ময়লার ভাগাড়ে। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, আমাদের নির্মিত চমৎকার স্থানটি আর অবশিষ্ট নেই।
সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস জানান, পতেঙ্গা বিচকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। পতেঙ্গা বিচের পুরো অঞ্চলই উন্মুক্ত থাকবে। শুধু দুই পাশে দুইটি ছোট্ট এলাকা সংরক্ষণ করে বিনোদনের নানা আয়োজন করা হবে। ওই দুইটি এলাকায় প্রবেশ করতে টিকেট লাগবে। এর বাইরে ছয় কিলোমিটার উন্মুক্ত বিচে কোন টিকেট লাগবে না। বরং ওই ছয় কিলোমিটার বিচে নাগরিক সুবিধা বাড়ানো হবে। পরিচ্ছন্ন রাখতে লোকবল নিয়োগ করা হবে। বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হবে। টয়লেট ও চেঞ্জিং রুমেরও ব্যবস্থা থাকবে। ওই এলাকায় বিশ হাজার গাড়ি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দুইটি পার্কিং এরিয়া নির্মাণ করা হবে।

খবরটি 442 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen