পর্যটন ডেস্ক: সমুদ্র সৈকত এবং পার্বত্য এলাকার বাইরে পর্যটকদের মুগ্ধ করে হাওরাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। তেমনি সৌন্দর্যঘেরা হাওর-পাহাড়ের মিশেল সুনামগঞ্জ জেলা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ঐতিহ্যও আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় গেল কয়েক বছরে এ জেলায় পর্যটকদের আগমন বেড়েছে কয়েকগুন। সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশের এ জেলায় রয়েছে মুক্তিসংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত নানা স্থান। বৈষ্ণব কবি রাধারমণ, মরমি কবি হাসন রাজা, জ্ঞানের সাগর দুর্বিন শাহ, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমসহ অসংখ্য সাধকের জন্মস্থান হাওরাঞ্চলের এ জেলা। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা এ অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলোকে পর্যটক বান্ধব করে দিতে পারলে সুনামগঞ্জ হবে দেশের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণীয় জেলা।

এখানে রয়েছে হাসন রাজার মিউজিয়াম, ডলুরা শহীদ সমাধিসৌধ, সুনামগঞ্জ ঐতিহ্য জাদুঘর, বৈষ্ণব কবি রাধারমণের সমাধি, টাঙ্গুয়ার হাওর, লাউড়ের গড়, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রী লেক), শিমুল বাগান, হলহলিয়া রাজবাড়ি, পাইলগাঁও’এর জমিদার বাড়ি, দোহালিয়া জমিদার বাড়ি, সুখাইড় জমিদার বাড়ি, গৌরারং জমিদার বাড়ি, বারেকের টিলা, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি, নারায়ণতলা মিশন, টেকেরঘাট-বাঁশতলা-মহেষখলা স্বাধীনতা উপত্যকা, পণতীর্থ, শাহ আরেফিনের মাজার সহ পর্যটক আকর্ষক নানা স্থান রয়েছে এ জেলায়। এই জনপদের শিল্প সংস্কৃতির ধরন দেশের অন্য জেলা থেকে ভিন্ন, তা চর্চার ক্ষেত্রেও স্বতন্ত্ররীতি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। নাগরিক সমাজের ধাঁচে এখানে শিল্প নির্মাণ হয় না, শিল্পচর্চা ও বিনোদন হয় জীবন-কেন্দ্রিক। হাওর, বাওর, ও অপেক্ষাকৃত নিচু অঞ্চল নিয়ে গঠিত এ জেলার বেশিরভাগ এলাকা ৭-৮ মাস জলমগ্ন থাকে। বর্ষায় সমুদ্রের মতো ঢেউ খেলে এবং গ্রামগুলোকে মনে হয় এক একটি ছোট-ছোট দ্বীপ। বিরল প্রজাতির মাছ ও পাখির স্বর্গরাজ্য টাঙ্গুয়ার হাওর। এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ, ১৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২০৮ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়।

সম্প্রতি হাওর পর্যটন উন্নয়নে সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (বিডি ইনবাউন্ড)। তারা এখানকার পর্যটন বিকাশে ২০ দফা সুপারিশ দিয়েছে। সেগুলো হলো, পাহাড়, নদী, মেঘের মিলন মেলাকে আরও বেশি উপভোগ্য করে তোলার জন্য নৌ চ্যানেল চিহ্নিতকরণ ও উন্নয়ন নির্দেশিকা দেওয়া, হাওর গমনে প্রবেশদ্বার ও বহির্গমন স্থান সুনির্দিষ্ট করা এবং নৌযান ব্যবস্থাপনা ও পর্যটকদের সুবিধাদিসহ জেটি, পল্টুন, বার্দিং স্থাপন, পর্যটন বান্ধব স্পিডবোট, সোনার তলী, সাম্পান, বোট হাউজ নির্মাণ, পরিবেশ বান্ধব ভাসমান খাবার দোকান, সুনির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ভাসমান সবজি ও ফুল বাগান, পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার জন্য মাছ ও পাখির অভয়ারণ্য স্থাপন, টেকেরঘাটে ও অন্যান্য পর্যটন স্পটে পর্যটকদের জন্য ওয়াশব্লক, স্যুভেনির শপ ও রেস্টরুম স্থাপন, শব্দ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, ‘হাওর কন্যা সুনামগঞ্জ’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে এখানকার পর্যটনকে ব্র্যান্ডিং করা এবং প্রমোশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, হাওর অঞ্চলটিকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা করা, পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিতকরণ, পর্যটকদের পর্যটনের সুযোগ সুবিধা উন্নয়ন, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, সংস্কৃতি, হস্তশিল্প পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা, সব ধর্মের লোকদের নিয়ে হাওর পর্যটন উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা ও তদারকির জন্য স্থানীয় কমিটি গঠন, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রী) থেকে বড়গোপ টিলা এবং অন্যান্য স্পটের সড়ক উন্নয়ন, কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম, হোম স্টে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ ও সুবিধাদি প্রদান, বাউল, অধ্যাত্মিক, কালচারাল (হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিম) টিম গঠন করা ও প্রতিটি নৌযান বা নির্ধারিত স্থানে কালচারাল শো এর ব্যবস্থা করা, সব স্টেক হোল্ডারদের সম্পৃক্তকরণ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ কারীদের আকৃষ্টকরণ, হাওর পর্যটনের উন্নয়ন রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রমোশনের জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠী-প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভিত্তিক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

খবরটি 427 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen