বিশেষ খবর ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মহামারি করোনাও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামাতে পারেনি। বিশ্বে এখন আমরা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। করোনা যখন পারেনি, কেউ আর পারবে না। এটাই আমার বিশ্বাস। বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের আরো মনোযোগের সঙ্গে মানবকল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণা ও বিজ্ঞানের বিবর্তন দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আমি সব সময় চাই মানবকল্যাণে কাজ করতে হবে এবং আপনারা এটা মনে রাখবেন, আমরা যে ফেলোশিপ দিচ্ছি বা অর্থ বরাদ্দ করেছি, সেটা কিন্তু জনগণের অর্থ। কাজে তা যেন জনগণের কল্যাণে লাগে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে আপনাদের গবেষণার কাজ আপনারা চালিয়ে যাবেন। আমাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জায়গা কম হলেও সেই জায়গার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। কাজে সেটা মাথায় রেখে গবেষণায় আরো জোর দিতে হবে, যাতে বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেটা আমরা চাই। তিনি বলেন, ‘দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি হলে দেশে এবং বিদেশেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে, আমরা সেদিকে লক্ষ রাখছি। আর প্রতিটি শিল্প কারখানায় গবেষণা ও উন্নয়ন শাখাকে কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, তার সরকার ইতিমধ্যে সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছে। সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠিত হবে, তাই সেখানেও গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণার মাধ্যমে আমরা ব্যয় কমাতে এবং উত্পাদনের উত্কর্ষতা বাড়াতে পারি এবং বহুমুখী পণ্য উত্পাদনের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়াতে পারি।

            প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ইতিমধ্যে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উেক্ষপণ করেছে, সমগ্র বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং এভাবেই বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে তার সরকার সামনে এগিয়ে যাবে। যারা ফেলোশিপ পেয়েছেন, তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণা এবং বিজ্ঞানের প্রসার একটি দেশের উন্নয়নে একান্ত অপরিহার্য। কাজে আপনারা গবেষণা চালিয়ে যাবেন এবং আপনাদের পথ ধরে আগামী প্রজন্মও বিজ্ঞানের গবেষণা করবে, সেটাই আমরা চাই। নতুন নতুন পণ্য উত্পাদন ও রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক সুযোগ রয়েছে, আমাদের রপ্তানি পণ্য বাড়াতে হলেও কিন্তু গবেষণার প্রয়োজন আছে। কাজেই আমি আশা করি সবাই নতুন নতুন পণ্য সৃষ্টি এবং আমাদের রপ্তানি যেন অব্যাহত থাকে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণা ছাড়া বা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া একটা জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। কারণ, বিজ্ঞানের যুগে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। তার সরকার শিক্ষাকে বহুমুখী করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতেই অধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উচ্চশিক্ষার প্রসারে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যার যেখানে দক্ষতা থাকবে, সে সেভাবেই গড়ে উঠবে এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং দেশ লাভবান হবে।

            বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরির লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণা-অধ্যয়নে এমএস, এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর প্রোগ্রামের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ’ প্রদান করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছর পর্যন্ত ৫৯৬ জনকে ১৯০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ১৯ হাজার ৭৩০ জন ছাত্রছাত্রী ও গবেষকের মধ্যে ১২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে।

খবরটি 1,451 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen