জাতীয় ডেস্ক: কিশোরগঞ্জ থেকে ফিরে ॥ পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া সৈকত হোসেন। কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওড়ের ছাতিরচরে প্রায় গলা পানিতে সাঁতার কেটে বিক্রি করে পেয়ারা। ভ্রমণপিপাসু মানুষ টাটকা ফল দেখে কিনে খায়। ফলে সৈকতের দৈনিক আয়ও ভাল। সৈকতের প্রতিবেশী ইমনও আয় করেন। তবে ইমন ভ্রমণে আসা মানুষদের ভাড়া দেন টিউব। যাতে কেউ ডুবে না যায়। হাওড়পাড়ের উন্নয়ন হচ্ছে দ্রুত, পাল্টাচ্ছে মানুষের ভাগ্যের চাকাও। বদলে যাওয়া উন্নয়নে এখন শিশু-কিশোরদেরও আয়ের পথ খুলেছে। আর এই আয় সংসারের বাড়তি অর্থ হিসেবে জোগান দিচ্ছে। ফলে সংগ্রামী পরিবারগুলোতে যেন এসেছে স্বস্তি। কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন হাওড় ঘুরে শিশু-কিশোরদের জীবিকা অর্জন এবং নানা কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে। সকল শিশু-কিশোর শিক্ষার মধ্যে নেই তারা তো সবসময়ই কোন না কোন কাজের মধ্যে আছেই আর যারা লেখাপড়া করে গত কয়েক মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারাও এখন বিভিন্ন জীবিকার মধ্যে রয়েছে। কেউ বাবাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে, কেউ বা বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছে। যেখানে আগে কর্মজীবী মানুষকেই বছরে ছয় মাসের মতো বসে অলস সময় কাটাতে হতো সেখানে তাদের পাশাপাশি এলাকার শিশু-কিশোরদের আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। অর্থনৈতিক গতিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সৈকত যেখানে মাত্র ১০ বছর বয়সে নিজের করা আয়ের অর্থ দিয়ে দিচ্ছেন সংসারে। দৈনিক দুশ’ টাকা আয় হিসেবে মাসে ৬ হাজার টাকা আসছে বাড়তি অর্থ। সৈকতের বাবা নিকলীর বাজারে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে। তিনি বলেন, আগে বড়দেরই তো তেমন আয় ছিলনা এখন এলাকার সবাই কিছু না কিছু করতে পারে। মানুষের চাপ বেড়েছে আমাদের এলাকায়।

হাওড় আর আগের মতো নেই। পাল্টে গেছে আশপাশ। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে হাওড়ের সর্বত্রই। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের হাওড়ের বুকে নির্মিত অলওয়েদার সড়ক। এতে করে আগের চেয়ে ভ্রমণ পিপাসুদের সংখ্যাও বেড়েছে। ছুটির দিন ছাড়াও প্রতিনিয়ত ভিড় লেগেই থাকছে। নিকলী উপজেলার ছাতিরচর করসবন ও বেড়িবাঁধ, মিঠামইন উপজেলার দিল্লির আখড়া, আখড়া সংলগ্ন হিজল বন, হাসানপুর ব্রিজ, করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখলা, চামড়াঘাট, তাড়াইল উপজেলার হিজলজানি, ইটনা উপজেলার ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী ব্যারিস্টার ভুপেশ গুপ্ত, আনন্দমোহন বসুর বাড়ি এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার সুলতানি আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক কুতুব মসজিদ ইত্যাদি স্পটগুলোতে মানুষ আর মানুষ। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এলাকা হিসেবে খ্যাত হাওড়ে যারাই ঘুরতে গিয়েছেন হাওড় পাড়ের বিস্ময়কর পরিবর্তন দেখে অবাক হয়েছেন। হাওড়ে ঘুরতে এসে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশের সব জায়গায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়েছেন। যার ফলে হাওড়ের মতো অবহেলিত বলা অঞ্চল এখন মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। হাওড় ভ্রমণে আসা একটি গণমাধ্যমে যুগ্ম বার্তা সম্পাদক মশিউর রহমান রুবেল জনকণ্ঠকে বলেন, হাওড়ে জীবন জীবিকা সব সময় শুনেছি। কিন্তু বর্তমানে হাওড় পাড়ের জীবন অনেক বদলে গেছে। হাওড় উন্নয়নের ঢেউ লেগেছে মানুষের জীবন ও জীবিকায়। আয় বেড়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। বড়দের আয় বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। আর ছোটদের আয়ও এখন দৃশ্যমান। কেউ পেয়ারা, আমড়া, কলাসহ নানা ধরনের ফল বিক্রি করেন। কেউ অটোরিক্সা বা মোটরবাইক চালিয়ে আয় করছেন। মিঠামইন বাজারে কথা হয় হামিদুল ইসলামের সঙ্গে। বয়স মাত্র ১৫। প্রতিদিন মিঠামইন বাজার থেকে নতুন সড়ক দেখতে বিভিন্ন পর্যটক তার মোটরবাইকে উঠে বসেন। দৈনিক আয় হয় ৫০০ টাকার উপরে। তার মতো আরও অনেকেই মোটরবাইক বা অটো চালাচ্ছেন। কেউ কেউ বাবার সঙ্গে খাবার হোটেলে শ্রম দিচ্ছেন। আগে অনেকেই মাছ ধরতো তারা এখন মাছ ধরা কমিয়ে অন্যান্য পেশায় ঝুঁকছেন। আয় বেশি হওয়ার কারণে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন বলেও জানা গেছে।

মিঠামইন-ইটনা-অষ্টগ্রাম উপজেলার সংযোগকারী অবিশ্বাস্য অল-ওয়েদার সড়কটি এই তিন উপজেলাসহ গোটা হাওড়ের দৃশ্যপটে এসেছে আমূল ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গোটা হাওড়ের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে এই একটি সড়ক। পর্যটকরা আসছেন দেখতে। এতে করে খাবার হোটেলকে কেন্দ্র করে জীবিকা হচ্ছে। আবার ট্রলার, বিভিন্ন যানবাহনকে কেন্দ্র করে আয় হচ্ছে স্থানীয়দের। সামনের দিনগুলোতে ভাল মানের আবাসিক হোটেল মোটেল গড়ে উঠলে আরও আয় ও কর্মসংস্থান বাড়বে মানুষের। কুটুমিয়ার হোটেল মিঠামইনের খাবারের জন্য অন্যতম সেরা হোটেল। হোটেলের মালিক জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রত্যেকদিন শত শত মানুষ আসে ঘুরতে। আর মিঠামইনে খাবারের হোটেল হাতেগোনা কয়েকটি। মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে খাবার খেতে। বিভিন্ন হাওড় ঘুরতে বিভিন্নœ আকারের ট্রলার ভাড়া নেন পর্যটকরা। ঘণ্টা হিসেবে বা চুক্তিতে ভাড়া হয়। নিকলীর একাধিক ট্রলার মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কোন ছুটির দিনে চাপ বেশি। এছাড়াও এখন কোন দিন খালি নেই। করোনার মধ্যেও মানুষ প্রতিদিন ঘুরতে আসছে। এতে করে মাঝি, ট্রলার মালিক উভয়েরই আয় হচ্ছে। হাওড়ের বালিখলা, চামড়াঘাট, মিঠামইন সদর, নিকলী বেড়িবাঁধ ও ইটনা-অষ্টগ্রাম সদরে দুই শতাধিক অস্থায়ী হোটেল, রেস্তরাঁ, খাবারের দোকান স্থাপিত হওয়ায় কয়েকশ’ পরিবারের জীবিকার পথ উন্মোচিত হয়েছে। মিঠামইনের স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা হেঁটেই অষ্টগ্রাম-ইটনা যাইতাম। এখন গাড়িতে যাই ভাড়াও কম। এলাকার পোলাপাইন আয় করছে। তারা বেকার নাই।

খবরটি 543 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen