ফিচার ডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা রূপে উগ্রপন্থার উত্থান নিয়ে আলোচনা চলছে। কোথাও রাজনৈতিক, কোথাও সামাজিক ক্ষেত্রে উগ্রপন্থা শক্তিশালী হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গ্লোবাল প্রজেক্ট অ্যাগেইনস্ট হেইট অ্যান্ড এক্সট্রিমিজমের ‘হুমকির মুখে গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ইউরোপ আমেরিকার পাশাপাশি রয়েছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পরপর ঘোষণা দিয়েছেন, লিঙ্গ বলতে তিনি শুধু নারী এবং পুরুষকে বোঝেন। অভিবাসীবি রোধিতা, এলজিবিটিকিউ বিরোধিতা, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা, এমন নানা ইস্যুতে ট্রাম্পের নীতি হোয়াইট সুপ্রিমেসিস্ট গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করে। এ অভিযোগ উদারপন্থিদের। এর ফলে দেশটিতে আদর্শিক বিভাজন বাড়ছে। এ উল্লেখ করা হয়েছে ‘হুমকির মুখে গণতন্ত্র’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে।
ব্রাজিল: কট্টর ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো ২০২২ সালে নির্বাচনে হারার পর উগ্র ডানপন্থিদের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ব্রাজিল সরকার। নির্বাচনে হারের পর অভ্যুত্থানের চেষ্টার অভিযোগে বলসোনারোর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। দেশটিতে লেবাননের হিজবুল্লাহ ছাড়া হামাস এবং আল-কায়েদার সক্রিয় থাকার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ ব্রাজিলে বেশ কয়েকটি নব্য নাৎসি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
আর্জেন্টিনা: হুমকির মুখে গণতন্ত্র শীর্ষক প্রতিবেদনে আর্জেন্টিনায় বেশ কয়েকটি সক্রিয় উগ্র-ডানপন্থি সংগঠন চিহ্নিত করা হয়েছে। ফ্রন্ট প্যাট্রিয়টা ফেডারেল এবং বান্দেরা নেগ্রার মতো নব্য-নাৎসি এবং হোয়াইট সুপ্রিম্যাসিস্ট গোষ্ঠী সহিংস কার্যকলাপ এবং ঘৃণা প্রচারের সাথে জড়িত। এ উল্লেখ করা হয়েছে।
জার্মানি: জার্মানিতে কট্টর ডানপন্থি অল্টারন্যাটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) সাম্প্রতিক পার্লামেন্ট নির্বাচনে ইতিহাসের সেরা সাফল্য পেয়েছে। ১৫২ আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তারা। অর্থনৈতিক অবনতি ঠেকাতে আগের সরকারগুলোর ব্যর্থতাকে এ দলটির উত্থানের কারণ হিসাবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। বিরোধী দল হিসাবে নানা নীতিকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা জার্মানি এবং ইউরোপকে ভোগাবে, এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন অনেকে।
ফ্রান্স: গত বছরের নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থিরা প্রায় ক্ষমতার কাছাকাছিই চলে এসেছিল। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট পায় উগ্র ডানপন্থি ‘রাসঁব্লে নাসিওনাল’ বা আরএন দল। তাদের ঠেকাতে মধ্য ও বামপন্থিদের এক অংশ একত্রিত হয়ে জোট গ্রহণ করেন। শেষ ফলে অবশ্য বামপন্থিদের অন্য একটি জোট জয়লাভ করে। কিন্তু রাজপথে উগ্র ডান এবং উগ্র বাম, দুদিকে শক্তি বৃদ্ধির ফলে নিকট ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংকট তৈরির শঙ্কা করছেন অনেকে।
ইতালি: ইতালির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি তরুণ বয়সে মুসোলিনির ‘গুণমুগ্ধ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সে অবস্থান থেকে এখন সরে এসেছেন এ দাবি তার। মেলোনির অভিবাসন বিরোধী নীতির সমালোচনায় মুখর অনেক বিরোধী রাজনীতিবিদ। গত বছর নব্য-ফ্যাসিস্ট দল হিসেবে পরিচিত এমএসআই-এর এক সময়কার প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে কট্টর ডানপন্থিরা। এমএসআই থেকে পরবর্তীতে মেলোনির দল ব্রাদার্স অব ইতালির উত্থান হয়।
ভারত: ভারতে কেবল উগ্র ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদ নয়, কোনো কোনো অঞ্চলে উগ্র বামপন্থাও দীর্ঘ দিনের সংকট। আসাম, নাগাল্যান্ড এবং মনিপুরে জাতিগত সংঘাতে প্রায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গ্লোবাল প্রজেক্ট অ্যাগেইনস্ট হেইট অ্যান্ড এক্সট্রিমিজমের হুমকির মুখে গণতন্ত্র শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আরো বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এ দাবি করা হয়েছে।
পাকিস্তান: ধর্মীয় উগ্রপন্থার পাশাপাশি বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের মাথাব্যথার কারণ। সম্প্রতি (১১ মার্চ) ট্রেনের যাত্রীদের জিম্মি করে বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে অর্ধশত মানুষ নিহত হন। ১৩ মার্চ আফগান সীমান্তে চেক পোস্টে জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালিবানের আত্মঘাতি বোমা হামলায় একাধিক সেনা নিহতের ঘটনা ঘটে। ১৪ মার্চ ঘটেছে মসজিদে বোমা হামলার ঘটনা।
বাংলাদেশ: বাংলাদেশ যখন তার গণতন্ত্র পুনর্গঠন এবং দেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ তৈরির চেষ্টা করছে। তখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুখোশের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে থাকা ইসলামী চরমপন্থার ধারাটি ফুটে উঠছে। নারীর শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্যাপারটি শুরু করে ইসলামী উগ্রপন্থীরা। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যখন তার গণতন্ত্র পুনর্গঠন এবং দেশের সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যৎ তৈরির চেষ্টা করছে। তখন দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মুখোশের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে থাকা ইসলামী চরমপন্থার ধারাটি ফুটে উঠছে। রাজধানী ঢাকায় এক সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা সতর্ক করে বলেছেন, ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে এমন কাউকে সরকার যদি মৃত্যুদণ্ড না দেয়। তারা নিজের হাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে। এর কয়েক দিন পর একটি নিষিদ্ধ গোষ্ঠী ইসলামী খেলাফতের দাবিতে বিশাল মিছিল করে।
আফগানিস্তান: দেশটির তালেবান সরকার উগ্রবাদকে সমর্থন দেয় এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে বেশ কয়েকজন তালেবান নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ফেব্রুয়ারিতে নারী শিক্ষা বন্ধ ইস্যুতে তালেবান সরকারের সমালোচনা করায় দুবাইয়ে পালাতে বাধ্য হন দেশটির উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই।
ইরান: বিশেষ করে নারীদের লক্ষ্য করে ভিন্নমত দমনের অভিযোগ রয়েছে খোদ ইরান সরকারের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদে নারীদের বিক্ষোভের পর থেকে নিপীড়ন আরো জোরদার হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগ, নির্যাতন এবং নির্বিচারে আটকসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।