স্বাস্থ্য ডেস্ক: ওআরএসের উদ্ভাবন ও গবেষণার সিংহভাগ কাজ হয়েছিল বাংলাদেশে, আইসিডিডিআরবিতে। ১৯৭৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং পরে ইউনিসেফ ওআরএসের ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগী হয়।

            রাজধানীর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের মুদিদোকানি মো. আল মামুন অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সঙ্গে দোকানে খাওয়ার স্যালাইন সাজিয়ে রেখেছেন। তাঁর বক্তব্য, এটাই দোকানে একমাত্র ‘ওষুধ’। প্রতি প্যাকেটের মূল্য পাঁচ টাকা। মামুন বলেন, প্রতি দিনই পাঁচ-দশ প্যাকেট বিক্রি হয়। তবে গরমকালে বিক্রি বেশি। শুধু ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের এই দোকান নয়, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া অর্থাৎ বাংলাদেশের সব জায়গায় ওষুধের দোকানের পাশাপাশি মুদিদোকানে খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট পাওয়া যায়। ডায়রিয়া দেখা দিলে ধনী, মধ্যবিত্ত, গরিব, শিক্ষিত, নিরক্ষর সবাই স্যালাইনের প্যাকেট কিনে পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিচ্ছে। গরমের দিনে স্যালাইন খাওয়া এখন অনেকেরই অভ্যাস।

            জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিজ্ঞানীরা খাওয়ার এই স্যালাইনকে বলেন, শরীরে পানিশূন্যতা প্রতিরোধে ওরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন বা ওআরএস ব্যবহৃত হয়। কলেরা বা ডায়রিয়াজনিত রোগের চিকিৎসায় ওআরএস ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশি শরণার্থীদের জীবন রক্ষায় ওআরএসের ব্যাপক ব্যবহার হয়েছিল।           আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাহমিদ আহমেদ বলেন, উদ্ভাবনের পর থেকে এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে সাত কোটির বেশি মানুষের জীবন রক্ষা করেছে ওআরএস। গর্বের বিষয় হচ্ছে, ওআরএসের উদ্ভাবন ও গবেষণার সিংহভাগ কাজ হয়েছিল বাংলাদেশে, আইসিডিডিআরবিতে। বাংলাদেশ ওআরএসের মাধ্যমে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

            শরীরের পানিশূন্যতা দূর করার বা ডায়রিয়াজনিত রোগের চিকিৎসার প্রচেষ্টার ইতিহাস বহু পুরোনো। ষাটের দশকে কলেরা গবেষণার জন্য রাজধানীর মহাখালীতে কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি (বর্তমানে আইসিডিডিআরবি) স্থাপন করা হয়। কলেরার কারণ, প্রাদুর্ভাব বুঝতে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের সঙ্গে কাজ শুরু করেন বাংলাদেশি গবেষকেরা।

            ওআরএসের ইতিহাস নিয়ে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন মোহাম্মদ বিলাল হোসেইন। তিনি বলেন, মূলত ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে ঢাকায় পাকিস্তান সিয়াটো কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরির হাসপাতালে  বর্তমান (আইসিডিডিআরবি) ডেভিড ন্যালিন, রিচার্ড ক্যাশ, রফিকুল ইসলাম ও মজিদ মোল্লার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে খাওয়ার স্যালাইনের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। বিশ্ববিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট ১৯৬৮ সালের আগস্ট সংখ্যায় সফল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে এবং এর স্বীকৃতি দেয়। প্রায় ১০ বছর পর ল্যানসেট ১৯৭৮ সালের ৫ আগস্টের সম্পাদকীয়তে বলেছিল, ওআরএসের আবিষ্কার চিকিৎসার ক্ষেত্রে শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

খবরটি 609 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen