আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আকাশ ছোঁয়া জ্বালানির দাম ও আগ্রাসী সুদের হারের মাধ্যমে ধনী দেশগুলো দরিদ্র ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর গলা চেপে ধরেছে এ মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস। এছাড়া গরিবদের বিরুদ্ধে ধনী দেশগুলোর বিদ্বেষপূর্ণ নানা কৌশলের নিন্দাও জানিয়েছেন তিনি। কাতারের দোহায় বিশ্বে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের সামনে তিনি এ মন্তব্য করেন। শনিবার (৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা।

            প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার কাতারে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে ভাষণ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সেখানে কোনও রাখঢাক না রেখে ধনী দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০ বছরে পর পর ‘লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ’ (এলসিডি) বা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর তাই এ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দু’বার বাতিল হয় এ সম্মেলন। অবশেষে কাতারের রাজধানী দোহায় সে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বক্তৃতা দেন গুতেরেস। ৪৬ টি দেশ এবারের এ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়। আফগানিস্তান আর মিয়ানমারের সরকারকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো স্বীকৃতি দেয় না ওই দুই দেশের কোন প্রতিনিধি সম্মেলনে ছিলেন না। দোহায় যে ৪৬ টি দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ এ সম্মলনে যোগ দিয়েছিল, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। নাম উল্লেখ না করেই যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত পশ্চিমা দেশগুলোকে তীব্র ভাষায় সমালোচনার পাশাপাশি আক্রমণ করেন তিনি। যদিও দোহার এ সম্মেলনে কোন উন্নত দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।

            জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনে গুতেরেস বলেন, আপনারা (এলডিসি দেশগুলো) পৃথিবীতে প্রতি আটজনের একজনের প্রতিনিধিত্ব করেন। উন্নত জীবন ও উন্নয়নের জন্য আপনাদের অসাধারণ প্রচেষ্টার আমি প্রশংসা করি। কিন্তু আপনার দেশগুলো এমন এক দুষ্টচক্রে আটকে আছে যা উন্নয়নকে কঠিন করে তোলে। আকাশ ছোঁয়া জ্বালানির দাম ও আগ্রাসী সুদের হারের মাধ্যমে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে রাখছে উন্নত দেশগুলো। একই সঙ্গে ধনী দেশগুলোকে দুষ্ট চক্রে আটকে থাকা অন্যদের সাহায্য করার জন্য বার্ষিক ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করা উচিত এ মন্তব্য করেন তিনি। কারণ হিসেবে ধনীদের দুষ্ট চক্রে আটকে থাকার ফলে দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে উন্নতি করার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করেন গুতেরেস। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অন্যায্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থার সৃষ্ট বৈষম্য সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন। তার ভাষায়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো যখন প্রয়োজনীয় সম্পদের জন্য ক্ষুধার্ত থাকে, ঋণে ডুবে থাকে এবং অসম করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ঐতিহাসিক অবিচারের সঙ্গে লড়াই করছে, তখন এসব দেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জিং।

            জাতিসংঘের প্রধান আরও বলেন, জলবায়ু বিপর্যয় সৃষ্টির পেছনে আপনাদের কোন দায় না থাকলে এ বিপর্যয় মোকাবিলা করা আপনাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যখন মূলধনের দাম আকাশচুম্বী এবং প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা তলানিতে নেমে যায়। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি জায়ান্টরা প্রচুর মুনাফা করলে আপনাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ তাদের টেবিলে খাবার রাখতে পারেন না। আর তাই প্রতি বছর এ অনুন্নত দেশগুলোর মানুষের স্বার্থে উন্নত দেশগুলোর কমপক্ষে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া উচিত স্পষ্ট জানিয়ে দেন জাতিসংঘের মহাসচিব। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ধনী দেশগুলোর তৈরি করা। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য এ ব্যবস্থা চালু রেখেছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়া দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধনী দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে রেখেছে এ অভিযোগ করেন গুতেরেস।

খবরটি 339 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen