আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের দৌড় থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ঋষি সুনাক। পেনি মর্ডান্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ ব্রিটিশ রাজনীতিক। সোমবার ব্রিটেনের স্থানীয় সময় ২টার ঠিক আগ মুহূর্তে পেনি মর্ডান্ট নাম প্রত্যাহার করার পরে সুনাক ছিলেন একমাত্র প্রার্থী। বিতর্কিত অর্থনৈতিক কর্মসূচির কারণে ক্ষমতায় আসার মাত্র ৪৪ দিন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা লিজ ট্রাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন ঋষি সুনাক। টোরি এমপিদের সমর্থন জোগাড়ে মধ্যপন্থী রাজনীতিক পেনি মর্ডান্টকে হারিয়েছেন ঋষি সুনাক। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে কোনো প্রার্থীকে সহকর্মী টোরি এমপিদের অন্তত ১০০ জনের মনোনয়ন বা সমর্থনের প্রয়োজন হয়। পেনি মর্ডান্ট সে সংখ্যা পূরণে ব্যর্থ হয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতার প্রতিযোগিতা থেকে শেষ মুহূর্তে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ৪২ ব্ছর বয়সী ঋষি সুনাক ব্রিটেনের সাবেক অর্থমন্ত্রী। আর এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন ঋষি। গোল্ডম্যান স্যাচের সাবেক বিশ্লেষক সুনাক ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবেন। ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টারের অন্যতম ধনী রাজনীতিবিদ এবং দেশটির প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত এ নেতাকে এখন নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন রাজা তৃতীয় চার্লস।
পেনি মর্ডান্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বলেছেন, তিনি ভালো আছেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থেকে মর্ডান্ট নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ব্রিটেনের ১৯২২ কমিটির চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডি কনজারভেটিভ পার্টির পরবর্তী নেতা এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে নিশ্চিত করেছেন।
ওয়েটার থেকে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক: ঋষি সুনাক উইনচেস্টারের প্রাইভেট স্কুল উইনচেস্টার কলেজে পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষা জীবনে গ্রীষ্মের ছুটিতে সাউদাম্পটনে ফিরে কারি হাউসে ওয়েটার হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন এ দলের নতুন নেতা হওয়ার দৌড়ে ঋষি সুনাক অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় এগিয়ে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সরে দাঁড়ানোর পর সুনাকের প্রতিপক্ষ ছিলেন কেবল পেনি মর্ডান্ট। সময় গড়ানোর সাথে প্রয়োজনীয় আইন প্রণেতাদের সমর্থন না পাওয়ায় পেনি মর্ডান্ট নাম প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে একেবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
ঋষি সুনাকের সম্পর্কে কিছু তথ্য: অভিবাসী বাবা মায়ের সন্তান ঋষি সুনাক। সুনাকে বাবা মা পূর্ব আফ্রিকা থেকে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। তার বাবা মা উভয় ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সুনাকের বাবা যশবীর ও মা ঊষা। দুজন ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা ছিলেন। পড়াশোনা আর ভালো কাজের আশায় তারা বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। যশবীর ব্রিটেনে একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার এবং ঊষা ফার্মাসিস্ট কাজ করেছিলেন। বয়স: ৪২ বছর, জন্মস্থান: সাউদাম্পটন, বাড়ি: লন্ডন ও ইয়র্কশায়ার, শিক্ষা: হ্যাম্পশায়ার ও উইনচেস্টার কলেজে স্কুল জীবন শেষে অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজ থেকে ২০০১ সালে স্নাতক হন তিনি। পরে ২০০৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ নিয়ে পড়াশোনা করেন ঋষি। পরিবার: স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ পড়ার সময় স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সাথে পরিচয় হয় তার। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বেঙ্গালুরুতে অক্ষতার সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন ঋষি। তাদের সংসারে রয়েছে দুই কন্যা। সংসদীয় আসন: রিচমন্ড (ইয়র্কশায়ার)। এ দম্পতির মেয়ে নারায়ণ মূর্তি একজন ভারতীয় বিলিয়নেয়ার এবং আইটি পরিষেবা জায়ান্ট কোম্পানি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত গোল্ডম্যান স্যাচের বিশ্লেষক ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন ঋষি। ২০১৫ সাল রিচমন্ড থেকে কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন। ব্রিটেনের বিত্তবানদের মধ্যে অন্যতম ঋষি সুনাক। পূর্বসূরি বরিস জনসনের মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সরকারের একজন জুনিয়র মন্ত্রী হয়েছিলেন সুনাক। ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের বহুল আলোচিত বিচ্ছেদ ব্রেক্সিটের সমর্থক ছিলেন তিনি। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ঋষি ও তার স্ত্রীর অক্ষতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি রয়েছে এ দম্পতির।