অর্থনীতি ডেস্ক: রাজশাহীতে এবার আমগাছে মুকুল এসেছে কম। তবে যাঁরা হরমোন ব্যবহার করেছেন, তাঁদের গাছে মুকুলের ব্যাপক সমারোহ ঘটেছে। গবেষকেরা বলছেন, হরমোন দেওয়ার পাশাপাশি গাছকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে, না হলে গাছ মারা যাবে। বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন তাঁর বাগানের বড় গাছে হরমোন ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর গাছে ভালো আম এসেছে। আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়ম মেনে শুধু বড় গাছগুলোতে তিনি হরমোন ব্যবহার করেছিলেন। এতে ভালো মুকুল হয়। এখন আমের গুটি বের হচ্ছে। বাঘা থেকে সাদি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপে আম রপ্তানি করছে। তাদের রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক আসাফুদ্দৌলা জানান, এবার গাছে মুকুল কম এসেছে। এলাকার মাত্র ৪০ শতাংশ গাছে আমের মুকুল এসেছে। গত বছর যেসব গাছ ফাঁকা ছিল, এবার সেগুলোতেই শুধু মুকুল এসেছে। আর যাঁরা হরমোন ব্যবহার করেছেন, তাঁদের কথা ভিন্ন। দেশে হরমোন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সরকার। দুটি কোম্পানি হরমোন বাজারজাত করছে। কিন্তু সব কৃষক এখনো হরমোনের ব্যবহারটা বুঝে উঠতে পারেননি। যাঁরা ব্যবহার করেছেন, তাঁদের গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। আর আসাফুদ্দৌলা রপ্তানি করার জন্য গাছের বিশেষ পরিচর্যা করে থাকেন। এ জন্য তাঁর কিছু গাছে ভালো মুকুল এসেছে।
রাজশাহী আম গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়। ফলন হয় ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন। রাজশাহীর প্রধান আম উৎপাদনকারী এলাকা হচ্ছে বাঘা ও চারঘাট উপজেলা। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
হরমোনের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী আম গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আলিম উদ্দিন বলেন, ২০২০ সালের মার্চ মাসে সরকার আম চাষের জন্য হরমোন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। এর মূল নাম ‘প্যাকলোবুট্রাজল’। বাংলাদেশে ‘কালটার’ নামে এর বাজারজাতকরণ করা হয়েছে। তবে হরমোন ব্যবহারের নির্ধারিত মাত্রা রয়েছে। মাত্রা অনুযায়ী প্রতি বর্গমিটারে গাছের গোড়া থেকে এক ফুট দূরে রিং করে চার মিলিলিটার ওষুধ পাঁচ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। দেওয়ার আধা ঘণ্টা পর সেচ দিতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার দিতে হবে, না হলে দুই–তিন বছর পর গাছটি মারা যেতে পারে। আট–নয় বছরের ছোট গাছে হরমোন ব্যবহার করা যাবে না।
আমবাগানের মালিকেরা বলেন, সাধারণত আমবাগানে এক বছর ভালো মুকুল এলে পরের বছর কম আসে। যে বছর বেশি মুকুল হয়, সেই বছরকে ‘অন ইয়ার’ বলা হয় এবং যে বছর কম হয়, সে বছরকে ‘অফ ইয়ার’ বলা হয়। আমের নতুন নতুন জাত আসার ফলে এবং পরিচর্যার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে অন/অফ ইয়ারের ধারণা পাল্টে গেছে। এখন গাছে আমের ভালো মুকুল আসে। এবার বেশ কয়েক বছর পর রাজশাহীতে আমের মুকুল কম এসেছে। গাছে গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে। তাই আগামী বছর ভালো মুকুল আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যাঁরা এবার গাছে হরমোন ব্যবহার করেছেন, তাঁদের গাছে অনেক মুকুল এসেছে।
চারঘাটের ডাকরা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ও আমচাষি ইসাহক আলী বলেন, সব গাছে নতুন পাতা, মুকুল নেই। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ রকম হয়নি।
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিম উদ্দিন বলেন, এবার আমের মুকুল কম, তাই আম বড় হবে। এতে তাঁদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।