অর্থনীতি ডেস্ক: মার্চের শুরুতে খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি নাজুক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সে সময় ৫ লাখ টনের নিচে নেমে গিয়েছিল খাদ্য মজুদ। এরপর মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে দেশের সরকারি পর্যায়ের খাদ্য মজুদ আবারও ১৩ লাখ টন ছাড়িয়েছে। ফলে সংকটের শঙ্কা কাটিয়ে তিন মাসে খাদ্য আমদানি ও অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। অবশ্য করোনা মহামারী সত্ত্বেও গত বছরের এই সময়ে খাদ্য মজুদ ছিল প্রায় ১৬ লাখ টন। দেশে প্রতি মাসে খাদ্যের চাহিদার গড় ১৯ থেকে ২১ লাখ টন, যার প্রায় ৮০ ভাগই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে মেটানো হয়। খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে প্রতি বছর ৭০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। গত বছর প্রায় ১৩ লাখ টন গম অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত হয়েছে। বাকিটা আমদানি করতে হয়। এবারও ১৫ লাখ টন গম উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। এদিকে সাড়ে ৬ লাখ টন চাল আমদানির অংশ হিসেবে এর বেশির ভাগই ইতিমধ্যে দেশে চলে এসেছে। এদিকে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের খাদ্য মজুদ সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্য সংগ্রহের পর তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও মজুদ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হয়। যে কোনো ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারকে অন্তত দুই মাসের চাহিদার সমপরিমাণ খাদ্য মজুদ রাখতে হয়, যা জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা এফএওর নীতি অনুসৃত। বর্তমানে খাদ্য অধিদফতরের অধীনে খাদ্য মজুদ সক্ষমতা প্রায় ২১ লাখ টন। তবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরও তিনটি সাইলো চালু হচ্ছে। আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের মধুপুরের সাইলোর মাধ্যমে মজুদ সক্ষমতা বাড়বে দুই লাখ টন।

            জানা যায়, গত মৌসুমে উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান খুব একটা কার্যকর হয়নি। ফলে আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে। এদিকে মজুদ বাড়াতে চাল, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের আমদানিও বাড়াচ্ছে সরকার। সরকারি বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিল মালিক, পাইকার, কৃষক, ভোক্তাসহ বেসরকারি খাত মিলিয়ে দেশে এখনো প্রায় দেড় কোটি টন খাদ্য মজুদ রয়েছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের হিসাব ধরে প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন কোটি টন খাদ্যের চাহিদা রয়েছে। গত বোরো মৌসুমে অন্তত ১ কোটি ৬০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। একইভাবে গম উৎপাদিত হয়েছে ১৫ লাখ টন এবং ভুট্টা ৪৫ লাখ টন, যার সিংহভাগই কৃষকের গোলায় ও ঘরে গচ্ছিত রয়েছে। ফলে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত কিংবা শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সরকার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও বিশ্লেষকরা। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনার খাদ্য মজুদ কমে আসায় সরকারের নেওয়া টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়।

            খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি বছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাদ্য মজুদের পরিমাণ নেমে গিয়েছিল পাঁচ লাখ টনের নিচে। এর মধ্যে চাল ছিল ৪ লাখ ১২ হাজার টন এবং গম ছিল মাত্র ৭১ হাজার টন। আর ২৩ জুন ২০২১ পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মোট মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৪৭ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ১০ দশমিক ৩৭ লাখ টন এবং গম ৩ দশমিক ১০ লাখ টন। চলতি বছরের বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের আওতায় ২৮ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ২ লাখ ২৬ হাজার টন বোরো ধান, ৪ লাখ ৯৫ হাজার টন সেদ্ধ বোরো চাল এবং ৪০ হাজার টন বোরো আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ সময়ে সংগৃহীত হয়েছে ১০ লাখ টন গম।

খবরটি 568 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen