Ref: প্রেস বিজ্ঞপ্তি ০১                                                                             Date: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

 

পিসিপি চবি শাখার ২০ তম কাউন্সিল: রোনাল চাকমা সভাপতি, ভুবন চাকমা সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত

জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে তরুণ ছাত্র সমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে: অমল ত্রিপুরা

 

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিসত্তাসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই তথা পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের আন্দোলন চলছে। পাহাড়িদের এ লড়াইকে বাধাগ্রস্থ করতে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিনিয়ত হত্যা-গুম-খুন, ভূমি বেদখল, শাসকগোষ্ঠীর প্রতিনিয়ত হত্যা-গুম-খুন, ভূমি বেদখল নির্যাতনসহ নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। পাহাড়ে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে তরুণ ছাত্র সমাজকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সম্মুখ সারিতে থেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আজ শুক্রবার ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১১ টয় চট্টগ্রাম নগরে নিউ মার্কেট সংলগ্নে ভাসানী অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়র পিসিপি‘র ২০ তম কাউন্সিলে বক্তব্য প্রদান কালে তিনি একথা বলেন।

কাউন্সিল অধিবেশনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিপি চবি শাখার তথ্য প্রচার সম্পাদক সুদর্শন চাকমা। শোক প্রস্তাব শেষে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

            “পাহাড়ে সেনা শাসন প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ কর!” “জুম পাহাড়ের দ্রোহের তারুণ্য, প্রতিশোধের মন্ত্রে উদীপ্ত তব প্রাণ, জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে হও আগুয়ান!” এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুদেব চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রোনাল চাকমা কাউন্সিল সঞ্চালনা বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শুভ চাক, পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা। কাউন্সিলে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ভুবন চাকমা।

            পিসিপি কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক অমল ত্রিপুরা বলেন, জুম পাহাড়ে দ্রোহের আগুন জ্বলছে। গত ১১ ডিসেম্বর পানছড়িতে বিপুল চাকমাসহ ০৪ উদীয়মান নেতাসহ দুই মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮ জন ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিছু দিন আগে সাজেকে দুই ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। জনমনের মধ্যে জমে থাকা পুঞ্জিভূত ক্ষোভ একদিন বিষ্ফোরিত হয়ে দাবানালে পরিণত হবে। এজন্য ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে পাহাড়ি ছাত্র সমাজ গুরুদায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধির  চর্চার কেন্দ্র হলেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা তা করতে পারছে না। শাসকগোষ্ঠীর জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করার জায়গাটা সীমিত করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিকশিত হতে পারছে না।

            পাহাড়ে সেনাশাসন অব্যাহত রয়েছে মন্তব্য করে অমল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন চলছে। অব্যাহত সেনা শাসনের ফলে পাহাড়ি জনগণ নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারছে না। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পাহাড়ে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছে, প্রতিবাদ, প্রতিরোধে অব্যাহত রেখেছে। ফলে শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূলে পরিনত হয়েছে শহীদ বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিন, মিঠুন, অনিমেষ, পঞ্চসেন ত্রিপুরাসহ সাড়ে ৩শতাধিক সহযোদ্ধা হারাতে হয়েছে। শাসকগোষ্ঠী রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে দৃঢ়তার সাথে  সুসংগঠিতভাবে আপোষহীন লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে  রাজনৈতিক হত্যাকান্ড চলছে। এ রাজনৈতিক হত্যাকান্ড তখনি বন্ধ হবে যখন ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হবে, দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল ও জাতির বেঈমানদের বিরুদ্ধে লড়বে। সে দিনের জন্য ছাত্র সমাজকে প্রস্তুতি নিতে হবে।

            এইচডব্লিউএফের নেত্রী রিতা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অরাজকতা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এ পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজকে আন্দোলনমুখী এবং পাহাড়ের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আজকের কাউন্সিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ের আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার জন্য সেনা লালিত সশস্ত্র দূর্বৃত্তদের দ্বারা হত্যাকান্ড সংগঠিত করছে। শাসকগোষ্ঠী চক্রান্তকে ভেস্তে দেয়ার জন্য ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। চবি’তে সংঘটিত যৌন নিপীড়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে৷

            চট্টগ্রাম মহানগর গনতান্ত্রিক যুব ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শুভ চাক বলেন, একটি জাতিকে তার অধিকারের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীল জায়গা থেকে ছাত্র সমাজকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পিসিপির ভূমিকা অপরিসীম। পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনা শাসন চলছে, এই সেনা শাসনের দেয়াল ভেঙ্গে দিতে হবে। ইউপিডিএফ জন্মলগ্ন থেকে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাঁর জন্য অনেক ইউপিডিএফ কর্মী শহীদ হয়েছেন। তাঁদের আত্মবলিদান প্রমাণ করে যে, ইউপিডিএফ সংগঠনটি আপোষহীন এবং পূর্ণসায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে সংগ্রামরত।

            পিসিপি চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারন সম্পাদক অমিত চাকমা বলেন, পিসিপি শুধু একটি নাম নয়,পিসিপি প্রতিষ্ঠাকাল হতে জুম্ম জনগনের অধিকার আদায়ে লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ১৯৮৯ সালে, ৪ঠা মে পিসিপি এক ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সামনে রেখে পথচলা শুরু করেছে। পিসিপির যে বিপ্লবী ধারা তা আজো সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। সুবিধাবাদী ও আপোষকামী পিসিপি এক অংশ সরকারপন্থী হয়ে যায় । ফলে তখন থেকেই ছাত্র সমাজ দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগছে। ছাত্রসমাজকে বুঝতে হবে,জানতে হবে কারা সংগ্রামের অংশ, আর কারা আপোষকামী অংশ। সংগ্রামী অংশ শক্তিশালী হলে লড়াই সংগ্রাম আরো জোরদার হবে,আর আপোষকামী অংশ শক্তিশালী হলে শাসকগোষ্ঠী লাভ হবে। ছাত্র সমাজের সময় এসে গেছে তা নির্ণয় করার।

            প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুদেব চাকমা বলেন, পাহাড়ে অপশক্তি আন্দোলনকে নশ্চ্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড সংগঠিত করছে। পাহাড়ের ছাত্রসমাজ ও তরুণ সমাজকে আন্দোলনবিমুখ করে দেওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। শাসকগোষ্ঠী ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে নি।অধিকার সচেতন জাতিকে দমন-পীড়ন করে দমিয়ে রাখা যায় না। স্বপ্নবাজ ছাত্রসমাজ অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে কাজ করে যাচ্ছে। পাহাড়ের সেনাশাসন বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ সবসময় সোচ্চার। ৫২ ভাষা আন্দোলনে সংগঠিত ছাত্রসমাজের মুখে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী ঠিকে থাকতে পারেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামেও সুসংগঠিত ছাত্রসমাজের মুখে শাসকগোষ্ঠীরা ঠিকে থাকতে পারবে না। পাহাড়ের ছাত্র সমাজ পিসিপির নেতৃত্বে অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।

            কাউন্সিল অধিবেশন শেষে সুদেব চাকমা পুরাতন কমিটির অবস্থান বিবরণ তুলে ধরেন এবং বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। পরে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।

            অধিবেশনে রোনাল চাকমাকে সভাপতি, ভূবন চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও সুদর্শন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। কাউন্সিলে পিসিপি নেতৃবৃন্দ ছাড়াও যুব ফোরাম, এইচডব্লিউএফ এবং চট্টগ্রামস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিল উপলক্ষে পিসিপি চবি শাখার তথ্য ও প্রচার বিভাগ থেকে প্রচারপত্র বের করা হয়। প্রচারপত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রদের নিকট নিম্নোক্ত আহ্বান জানানো হয়:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আমাদের জোর দাবি:

* সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের বিকাশের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম গবেষণা কেন্দ্র, ভাষা ও সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’ চালু করতে হবে!

* চবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক “দুষ্প্রাপ্য ও তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ” সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে!

* চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামূলক জার্নালে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের বিষয়ে গবেষণা প্রবন্ধ প্রচার ও প্রকাশনা নিশ্চিতকরণ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে!

* চাকসু নির্বাচন দাও! শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক বিকাশ কেন্দ্র নিশ্চিত কর!

* চারুকলা ইনস্টিটিউটকে মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনো!

* যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর কর!

ছাত্র সমাজের প্রতি উদাত্ত আহ্বান:

ক. আসুন, জাতির দুর্দিনে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব পালনে ঐতিহাসিক ভূমিকায় অবতীর্ণ হই!

খ. শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হোন!

গ. পিসিপি’র শিক্ষাসংক্রান্ত ৫দফা দাবির বাস্তবায়নে আওয়াজ তুলুন!

ঘ. বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনদের খুনি সেনা কর্মকর্তা ও সেনা মদদপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীতে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হোন!

ঙ. শাসকগোষ্ঠীর চিহ্নিত স্বঘোষিত সহযোগী, দালাল, প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে আওয়াজ গড়ে তুলুন!

 

বার্তা প্রেরক

সৌহার্দ্য চাকমা

দপ্তর সম্পাদক

চবি শাখা

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ

খবরটি 420 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen