জাতীয় ডেস্ক: জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মার্কিন ‍যুক্তরাষ্ট্রের আগে তাদের নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা উচিত। তারা নিজের দেশের মানুষকে কী করে বাঁচাবে, সেই চিন্তা আগে করুক। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) জাতীয় সংসদের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার চলতি অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন।

            শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন ‍যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে সে চিন্তা আগে করুক। সেটা তাদের করা উচিত। আওয়ামী লীগের আমলে সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ পারে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের খোঁজে আসে অনেকে। আমার প্রশ্ন, ২০০১ এর নির্বাচনে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ হয়েছিল, তখন সে মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল। তারা কেন চুপ ছিল। তাদের মুখে কথা ছিল না কেন। মানবাধিকার শেখান। যারা খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে রক্ষা করে, তাদের কথা শুনে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, অনেক দেশ দেখি মানবাধিকারের কথা ওঠায়। আমরা তো মানবাধিকার বঞ্চিত ছিলাম। ৩৫ বছর লেগেছে বাবা-মার হত্যার বিচার করতে। বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই যারা বলেন, তারা ২০০১ দেখেননি। ১৫ আগস্ট দেখেননি। ১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আসা পর্যন্ত এদেশে কী ছিল দেখেননি। তখন তারা চোখে দেখেননি, কানে শোনেননি কী কারণে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। রোহিঙ্গারা যখন নির্যাতিত হচ্ছিল, ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল, আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আমরা মানবিক কারণে যখন এতগুলো মানুষের দায়িত্ব নিতে পারি। এর থেকে মানবাধিকার সংরক্ষণ আর কী হতে পারে, সেটাই আমার প্রশ্ন?

            বিএনপির ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের আন্দোলনের সমালোচনা করে সংসদ নেতা বলেন, জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মারা ছিল বিএনপির আন্দোলন। তারা অবরোধ দিয়ে রেখেছে। সে অবরোধ এখন তোলেনি। অবরোধ দিয়ে মানুষকে হত্যা করা। এ হলো বিএনপির চরিত্র। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনি। মানবাধিকারের কথা শুনি। বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশে আছে কিছু আঁতেল শ্রেণি। কথা বিক্রি করে খাওয়া অভ্যাস। যত মিথ্যা অপবাদ দেওয়া। এ দেশে নানারকম অপরাধ করে, যারা বিদেশে আশ্রয় নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে যত অপপ্রচার চালাচ্ছে।

            সদ্য অনুষ্ঠিত ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে না যারা বলে, মাত্র সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলো (বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর)। গাজীপুরে আমরা হেরেছি, বাকি চারটাতে আমরা জিতেছি। এ নির্বাচন নিয়ে কেউ একটি প্রশ্ন তুলতে পেরেছে। আমরা গেছি সেখানে ভোট চুরি করতে। করিনি তো। এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনও হয়েছেশান্তিপূর্ণ। ঢাকায় সিটি নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। মোহাম্মদ হানিফ জিতেছিল। এরপর লালবাগে বিএনপি গুলি করে আওয়ামী লীগের ৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। সে কথা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। প্রত্যেকটা নির্বাচনে তো এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে।

            বার বার বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নির্বাচনের পর প্রহসন শুরু হয়। জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়। শুরু হয় ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটের প্রহসন। ‘হ্যাঁ’ বক্স পেয়ে জিততো। ‘না’ বক্স নেই। ভোট দেওয়া লাগতো না। এমনিতে বক্স ভরে যেত। সেনা প্রধান জিয়াউর রহমান মিলিটারি রুল ও সংবিধান লঙ্ঘন করে। জিয়াউর রহমান নির্বাচনের নামে প্রহসন করে রাষ্ট্রপতি পদটি কলুষিত করে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়। আওয়ামী লীগকে কীভাবে শেষ করত সেটা ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা পার্টি ভাঙার খেলা শুরু করে। জিয়ার মৃত্যুর পর জেনারেল এরশাদ তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর নির্যাতন। একদিকে আওয়ামী লীগের ওপর নির্যাতন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির ওপর নির্যাতন। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয় জাতীয় পার্টির ওপর। জাতীয় পার্টি সেটা ভুলে গেছে। জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে নির্বাচনই ছিল একেকটা গ্রুপ ঢুকবে, সিল মারবে, বাক্স ভরবে। তারপর রেজাল্ট পাল্টাবে। ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। আওয়ামী লীগ সব সময় সংগ্রাম করে গেছে জনগণের ভোটাধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে।

            ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে ক্ষমতায় আনার জন্য কোনো মহল তৎপর ছিল। কারণ, আমাদের গ্যাস বিক্রির একটা প্রস্তাব ছিল। আমি গ্যাস বিক্রি করব না সে সিদ্ধান্ত দিলাম। খালেদা জিয়া লিখে দিয়েছিল, সে গ্যাস বিক্রি করবে। নির্বাচনের আগে থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার। নির্বাচনের দিনে কেউ ঘরে থাকতে পারিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি এক সমান হতে পারে না।

খবরটি 575 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen