জাতীয় ডেস্ক: দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। এ ঈদ শুধু আনন্দের নয়, ত্যাগের। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করে সে ত্যাগের কথাকে স্মরণ করা হয়। এটি মানুষকে পশুর সাথে অন্তরের পশুত্বকে কোরবানি দিতে শিক্ষা দেয়। ঈদুল আজহার অন্যতম কার্যাবলি হলো ঈদের নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দ্বিধাহীনভাবে তার কাছে আত্মসমর্পণ ও শর্তহীনভাবে তাকে মেনে নেওয়া হলো ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) উদযাপন করা হচ্ছে আনন্দ ও ত্যাগের দিন মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারা দেশের পশুর হাটগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে চলছে কেনা-বেচা। স্বজনদের নিয়ে ঈদ উদযাপনের জন্য ইতোমধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। গত কয়েকদিন ধরেই সারা দেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঈদের দিন সব বিভাগে বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এখন বৃষ্টি থাকলে ঈদের দিন তা কিছুটা কম হতে পারে।

            ঈদুল আজহার সাথে পবিত্র হজের সম্পর্ক রয়েছে। মঙ্গলবার পবিত্র মক্কা নগরীর অদূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজ পালিত হয়েছে। প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইবরাহীম (আ.) এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকেন। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। এজন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানি করা এ দিনের উত্তম ইবাদত। সে ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে মসজিদে সমবেত হবেন এবং ঈদুল আজহার দু’রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন।

            ঈদ আয়োজনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি: এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। প্রতি বছরের মতো এবার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে ৫ টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদ জামাত আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসক। এছাড়া দিনাজপুর গোর এ শহীদ বড় ময়দানের অনুষ্ঠিত হবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জামাত। ঢাকার ১ হাজার ৪৩৫ টি মসজিদ ও ১৮৯ টি ঈদগাহে ঈদের জামাত হবে এবার। সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সারাদেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করবেন।

            এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। ঈদ উদযাপন উপলক্ষ্যে দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষ্যে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

            কোরবানি ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি: কোরবানিকৃত পশুর রক্ত বা বর্জ্য পদার্থ দ্বারা যাতে পরিবেশ দুর্গন্ধময় না হয় সে বিষয়ে সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে প্রায় ১৯ হাজার ২৪৪ পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রস্তুত রেখেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ঢাকা থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের পরিকল্পনা তাদের। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সে সঙ্গে উভয় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে।

খবরটি 435 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen