জাতীয় ডেস্ক: জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু পলাতক রয়েছে। শুক্রবার (১৬ জুন) এ হত্যা ঘটনায় ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হল বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য গোলাম কিবরিয়া সুমন, এ ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন, তোফাজ্জল, আয়নাল, শহীদ ও ফজলু। বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

            স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান‌ মাহমুদ আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। স্ত্রীর মর্যাদার পেতে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। এ সংবাদ সম্মেলনের খবর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের ঘটনার জেরে গোলাম রব্বানী নাদিমসহ কয়েকজন সাংবাদিকের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। এ মামলা বুধবার ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল খারিজ করে দেন। এ দিন রাতে সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সাধুরপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাতসহ কয়েকজন সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা করে।

            জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাংবাদিক গোলাম রব্বানীর নাদিমকে হত্যা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তার সহকর্মী সাংবাদিক আল মুজাহিদ বাবু। আল মুজাহিদ বাবু বলেন, বুধবার (১৪ জুন) রাত দশটার দিকে বকশীগঞ্জ বাজার থেকে আমি ও লালন নামে একজন সাংবাদিক বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় নাদিম তার অফিস বন্ধ করে পাশের দোকানে পান খাচ্ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি ডাক দেন। পরে আমরা দাঁড়াই। তখন সাংবাদিক লালন একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে যান। সে সময় চেয়ারম্যানের দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা খারিজ হয়ে গেছে এ বিষয়ে জানান নাদিম। এ সব কথা বলতে বলতে মোটরসাইকেলে করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে পাটহাটি মোড়ের‌ সে জায়গায় আমি একটু আগে চলে যাই ও নাদিম একটু পিছিয়ে পড়েন। পেছন থেকে নাদিম আমাকে মামা বলে ডাক দেন। এ সময় আমি তাকিয়ে দেখি চেয়ারম্যানের বাবু ভাগ্নে ও সাধুরপাড়া ইউনিয়ন তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, তাঁতী লীগের সদস্য মনির এবং ইমামসহ ৬/৭ জন নাদিমকে মারছেন। তারা মারতে মারতে নাদিমকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত ইট দিয়ে নাদিমকে মাথায় আঘাত করে। পাশে অন্ধকারে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, মেম্বার আমর আলী ও মানিক মিয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি নাদিমকে বাঁচাতে গেলে তারা আমাকে মারার হুমকি দেন। পরে আমি সাংবাদিক লালনকে ফোন দেই। ফোন দিলে তিনি দৌড়ে আসেন। লালনকে দেখে তারা নাদিমকে মারধর থামিয়ে চলে যান। পরে নাদিমকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, তিন মাস আগে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হামলার শিকার হয়েছিলেন। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিজের জীবনের নিরাপত্তা ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচতে পারলেন না। তিন মাস পর সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ গেল সাংবাদিক নাদিমের।

            জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০ টা দিকে বাড়ি ফেরার সময় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের ওপর হামলা করা হয়। এ হামলার ঘটনায় অভিযোগ ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের বিরুদ্ধে। পরে সাংবাদিক নাদিম বকশীগঞ্জ থানায় শাহীনা বেগমসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৫০ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এর কয়েকদিন পরে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে নাদিম এ হামলার ঘটনায় সমঝোতা করেন। সাংবাদিক নাদিমের নিজের ও‌ পরিবারের নিরাপত্তা চাওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে ভিডিওতে নাদিম বলেন, আমি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই। আমি যেন সুষ্ঠুভাবে সাংবাদিকতা করতে পারি এটার নিশ্চয়তা চাই।

            বকশীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন,  সে সময়ের হামলার ঘটনায় অভিযোগ করা হয়েছিল। তার পরে জেলা আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে সাংবাদিক নাদিমের এ ঘটনা নিয়ে সমঝোতা হয়। নাদিম জীবনের নিরাপত্তা পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে ঘটনা সমঝোতা হয়ে যায়। পরে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর স্ত্রীর তালাক নিয়ে সংবাদ করেন নাদিম। তারপর এ ঘটনা ঘটে। তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করে ইতোমধ্যে ৬ জনকে আটক করা হয়। এখন পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে পলাতক রয়েছে। তাদেরকে আটক করতে টিম মাঠে রয়েছে। আমরা রাতের মধ্যেই হয়তো আটক করতে পারবো।

            বুধবার (১৪ জুন) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বকশীগঞ্জ পৌরসভার পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার হন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী নাদিম। তাকে ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত পিটিয়ে আহত করেন। পরে স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। পরে রাত দেড়টার দিকে তাকে জামালপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক গোলাম রব্বানীর নাদিমের মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ১০টার দিকে মমেক হাসপাতাল থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় শেষে বকশীগঞ্জে তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। শুক্রবার (১৬ জুন) সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

খবরটি 404 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen