জবভ:                                                                             উধঃব: ৫ জানুয়ারি ২০২৩

 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

 

ইউপিডিএফ’র বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টের তথ্য:

২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্রেফতার ১০৯, হত্যা ১৮, নির্যাতন ৬০, অপহরণ ৪৮, নারী নির্যাতন ১৬, বিদেশে আশ্রয় গ্রহণ ২৯৫ জন

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেলের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট ২০২২ প্রকাশ করা হয়েছে।

 

এতে বলা হয়েছে, গত বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক ইউপিডিএফ সদস্যসহ ১৮ জন বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, ১০৯ জনকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার ও ৬০ জনকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। এছাড়া অপহরণের শিকার হয়েছেন ৪৮ জন, ধর্ষণসহ যৌন নিযাতনের শিকার হয়েছেন ১৬ জন নারী-শিশু এবং বান্দরবানে সেনা অপারেশনের কারণে বম জনগোষ্ঠির ২৯৫ জন বিদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বেপরোয়া ভূমি বেদখল, সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের উপর হামলা, ধর্মীয় পরিহানি, গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্যও রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।

            গতকাল ৪ জানুয়াারি ২০২৩ প্রকাশিত উক্ত রিপোর্টে বলা হয়, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতির বর্তমান বিশেষত্ব হচ্ছে নিপীড়িত- নির্যাতিত অধিকারহারা জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে শাসকগোষ্ঠি কর্তৃক রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি নব্যমুখোশ বাহিনী, মগপার্টি, সংস্কারবাদী, কুকি-চিন পার্টিসহ বিভিন্ন ঠ্যাঙারে বাহিনীর ব্যবহার। এদের মাধ্যমে আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও তাদের সমর্থকদের খুন, গুম, অপহরণ করে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। এই বাহিনীগুলো ছাড়াও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সন্তু গ্রুপও প্রায় সময় সাধারণ জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে থাকে।’

            রিপোর্টে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, ‘২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে রয়েছে বিচার বহির্ভূত হত্যা, গ্রেফতার, শারীরিক নির্যাতন, হয়রানি, ধর্মীয় পরিহানি, নারী নির্যাতন ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, ভূমি বেদখল ইত্যাদি। প্রধানত ইউপিডিএফকে লক্ষ্যবস্তু করে সেনাবাহিনী এসব নিবর্তনমূলক কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। গত বছর নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন একজন ইউপিডিএফ সংগঠক ও একজন সাধারণ নাগরিক, গ্রেফতার করা হয়েছে ইউপিডিএফ সদস্যসহ অন্তত ১০৯ জনকে, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫৩ জন, বেআইনি তল্লাশি চালানো হয়েছে ৪৬ গ্রামবাসীর বাড়িতে, হেনস্থা-হয়রানির শিকার হয়েছেন নারীসহ ৯ জন। বান্দরবানে “কথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গী দমনের” নামে সেনাবাহিনীর পরিচালিত কম্বিং অপারেশনের সসময় নির্যাতনের ভয়ে ২৯৫ জন বম জাতিগোষ্ঠির লোকজন ভারতের মিজোরামে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। ‘এছাড়া ধর্মীয় পরিহানি, পাহাড়ি গ্রামবাসীদের বাড়ি ভাঙচুরসহ সাজেক, পানছড়ি ও দীঘিনালায় স্থানীয় পাহাড়িদের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারে বাধা প্রদান, ৮টি স্থানে ক্যাম্প স্থাপন অথবা সম্প্রসারণের চেষ্টা, গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ, ব্রাশফায়ার করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।’

            রিপোর্টে জেএসএস সন্তু গ্রুপ ও রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ‘জেএসএস সন্তু গ্রুপ কর্তৃক ইউপিডিএফ’র ৩ সদস্যকে হত্যা, ইউপিডিএফ সদস্যসহ ৪ জনকে অপহরণ, নারীসহ ৩ জনকে শারীরিক নির্যাতন ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রীকে হুমকি প্রদানের ঘটনা ঘটেছে।’ রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ বাহিনী, সংস্কারবাদী, মগপার্টি, কুকি-চিন পার্টি ও অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক ইউপিডিএফ কর্মীসহ কমপক্ষে ১৩ জনকে হত্যা ও ৪৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে এবং ৪ জন মারধরের শিকার হয়েছেন। সেটলার বাঙালি কর্তৃক ২০২২ সালে অন্তত ৫টি হামলা ও ১টি সাম্প্রদায়িক উস্কানির ঘটনা ঘটেছে। সেটলারদের হামলা, অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরে পাহাড়িদের ৪৮টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হামলার কারণে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের জয়সেন পাড়া থেকে ৩৭ পরিবারের অন্তত ১০০ জন লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছের বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

            ভূমি বেদখলের তথ্য তুলে ধরে ইউপিডিএফের মানবাধিকার পরীবিক্ষণ সেলের রিপোর্টে বলা হয়, ‘২০২২ সালে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানে অন্তত ৯টি স্থানে ভূমি বেদখল ও বেদখল চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮টি স্থানে সেটলার বাঙালি কর্তৃক ভূমি বেদখল ও বেদখল চেষ্টা এবং বান্দরবানের লামায় ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানি কর্তৃক ¤্রাে ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখল চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। রাবার কোম্পানির ভূমি আগ্রাসন চেষ্টার ফলে উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছেন তিনটি ¤্রাে ও ত্রিপুরা পাড়ার ৩৯ পরিবারের নারী-শিশুসহ ২০০ গ্রামবাসী।’ ভূমি বেদখল ঘটনার মধ্যে লামায় ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানি কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জমি বেদখল প্রচেষ্টার ঘটনা বছর জুড়েই আলোচিত হয় এবং প্রতিবাদ বিক্ষোভ সংগঠিত হয়। কিন্তু ভূমি বেদখলকারী সেটলার ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

            নারী-শিশুর ওপর সহিংসতার তথ্য তুলে ধরে রিপোর্টে বলা হয়, ২০২২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৬ জন নারী-শিশু যৌন নিপীড়নসহ সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ছেলে শিশুও রয়েছে। ঘটনাগুলোর মধ্যে ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ১ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫ জন, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন ৬ জন, শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ১ জন স্কুল ছাত্রী, গলাকেটে হত্যা করা হয় ১ জন নারীকে, অপহরণের শিকার হন ১ জন কিশোরী, কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার শিকার হন ১ জন এবং এক ছেলে শিশু বলাৎকারের শিকার হয়। পার্বত্য চুক্তি লঙ্ঘন করে পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে এপিবিএন মোতায়েনের বিষয়ে রিপোর্টে বলা হয়, ‘১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও সরকারের মধ্যেকার স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘন করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গত ২৫ মে ২০২২ রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে এপিবিএন’র ক্যাম্প স্থাপনের কথা জানান এবং পরদিন (২৬ মে) তিনি রাঙামাটি সদরে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি এপিবিএন ব্যাটালিয়নের হেডকোয়ার্টার্স-এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এর আগে ১৩ এপ্রিল এপিবিএন সদর দপ্তরের ইস্যুকৃত এক সার্কুলারে সেনাবাহিনীর প্রত্যাহারকৃত ২৪০টি ক্যাম্পে এপিবিএন মোতায়েন করার কথা জানানো হয়।’

            সীমান্ত সড়ক নির্মাণ বিষয়ে রিপোর্টে বলা হয়, ‘পাহাড়ি জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। কথিত উন্নয়নের নামে সরকার চারিদিকে ঘিরে ফেলার মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণকে জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের নীলনক্সা বাস্তবায়ন জোরদার করেছে। পাহাড়ি জনগণকে নিজেদের জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ, এলাকার জীব-বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।’

বার্তা প্রেরক

 

নিরন চাকমা

প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

খবরটি 406 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen