পযর্টন ডেস্ক: বাংলাদেশে বান্দরবানের থানছি উপজেলার আমিয়াখুম জলপ্রপাত বিশ্বে খ্যাত ‘নায়াগ্রা ফলস’ দর্শন। থানছি উপজেলা ভ্রমণে খুমের রাজ্যের নাফাখুম, আমিয়াখুম, ভেলাখুম ও সাতভাই খুম এ ৪ টি খুমের প্রকৃতি সৃষ্টির মনোরম দৃশ্য দর্শন সুযোগ রয়েছে। এ মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দর্শনে সময় ও সুযোগে ভ্রমণ পিপাষুরা আমিয়াখুম জলপ্রপাত উপভোগ করা যায়। আমিয়াখুম জলপ্রপাত সাথে আরো সাত ভাইখুম ও ভেলাখুম ও নাফাখুম ভ্রমণ করা যায়। থানচি নেমে টুরিস্ট তথ্য কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে আমিয়াখুম ভ্রমণ করতে হবে। এ দুর্গম পথে ট্র্যাকিং করা এত সহজ না। থানছি থানায় গিয়ে এন্ট্রি করতে করতে বিকাল হয়ে যায়। কাগজপত্র ঠিক করে বিকাল ৫ টার পর সেনাবাহিনী রেমাক্রির উদ্দেশ্যে কোন ট্রলার ছাড়ার অনুমতি দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে থানচিতে রাত্রি যাপন করতে হয়।

            থানচি থেকে পদ্মঝিরি: পরের দিন খুব ভোরে যেতে হয় ট্রলার ঘাটে। ভোরে যখন থানচি থেকে পদ্মঝিরির উদ্দেশ্যে ট্রলারে তখন দুপাশে পাহাড় আর মাঝখানে সাঙ্গু নদীর নীল স্বচ্ছ জলরাশির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যায়। পদ্মঝিরির মুখে নেমে ঝিরিপথ ধরে প্রায় ১ ঘণ্টা ট্র্যাকিং করে রুমাংজু পাড়ায় পৌঁছতে হবে। রুমাংজু পাড়া থেকে পাহাড় বেয়ে বেয়ে হরিশ্চন্দ্র পাড়ার দিকে যেতে হবে। সামনে পথ কতটা ভয়ংকর ও দুর্গম। হরিশ্চন্দ্র পাড়া থেকে খেয়াং পাড়া বা নতুন পাড়া পর্যন্ত ৫-৬ টা ভয়ংকর সব পাহাড় পাড়ি দিতে হবে। পাহাড়ে ওঠা-নামার প্রতিটি ধাপ রয়েছে। বলে রাখা ভালো সকলে নতুন পাড়া থেকে থুইসা পাড়া হয়ে দেবতা পাহাড় দিয়ে আমিয়াখুম যায়। এটা টুরিস্টদের জন্য পরিচিত ট্রেইল। কিন্তু আমরা গিয়েছিলাম অতিরাম পাড়া হয়ে। অতিরাম পাড়ার রাস্তাটি পুরোটা অফট্রেইল। অতিরাম পাড়ার ট্রেইলটি ভয়ংকর তবে খুব সুন্দর। এর বিশেষত্ব হল চারদিক সবুজে ঘেরা পাহাড় আর বড় বোল্ডার আকৃতির পাথর। তারমধ্য প্রবল বেগে গড়িয়ে আসছে স্বচ্ছ জলধারা। ভিজিয়ে দিচ্ছে পাশের বড় বোল্ডার আকৃতি পাথরে চাতাল। সঙ্গে মন মাতানো অবিরাম ছুটে চলা জলধারার পতন। এ দৃশ্য নিজ চোখে দেখলে আজীবন মনের গভীরে গেঁথে থাকবে। এ ট্রেইলের ভয়ংকর দিক হলো বিশাল দানব আকৃতির বোল্ডার পাথর উপর দিয়ে যেতে হবে যা খুব পিচ্ছিল। আর অতিরাম পাড়ার পাহাড় প্রচণ্ড খাড়া এবং উঁচু। পথ এত ভয়ঙ্কর। টুরিষ্ট গাইড ও স্থানীয় আদিবাসীদের সাহায্যে অনেক কষ্টে অতিরাম পাড়ায় পোঁছা যায়। অতিরাম পাড়ায় ত্রিপুরা আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। তখন রাত ৮ টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

            অতিরাম পাড়া থেকে আমিয়াখুম: অতিরাম পাড়ায় সে রাত কাটিয়ে ভোরে রওনা দিতে হবে আমিয়াখুমের উদ্দেশ্যে। সাত ভাইখুম, আমিয়াখুম ও ভেলাখুম দেখা শেষ হলে আবার অতিরাম পাড়া, থুইস্যা পাড়া, জিনা পাড়া হয়ে নাফাখুমের উদ্দেশ্যে ট্র্যাকিং শুরু করা যায়। নাফাখুম পাড়ায় পৌঁছতে তখন সময় রাত বাজে ৯ টা। ভ্রমণটি ডিসেম্বরের শেষের দিকে হলে আদিবাসীদের বিশেষ একটি উৎসবে অংশগ্রহণ করা যায় নাফাখুম পাড়ায়। নাফাখুম পাড়ায় রাত্রিযাপন শেষে ভোরে নাফাখুম ঝর্ণা দেখে রেমাক্রির উদ্দেশ্যে আবার ট্র্যাকিং শুরু করা যায়। প্রায় তিন ঘণ্টা ট্র্যাকিং শেষে রেমাক্রি এসে পৌঁছা যায়। রেমাক্রি থেকে আবার ট্রলারে করে থানচি চলে আসা যায়। থানচি থেকে চান্দের গাড়িতে করে বান্দরবান।

            আমিয়াখুম ঝর্ণা দেখতে কখন যাবেন: আমিয়াখুম ঝর্ণায় সারা বছর পানি থাকে। বর্ষাকালে আমিয়াখুম ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। এ সময় হড়কাবান বা ফ্ল্যাশ ফ্লাডের আশঙ্কা থাকে। তাই শীতকালে আমিয়াখুম যাওয়ার উৎকৃষ্ট সময়। তখন পানি খুব স্বচ্ছ থাকে এবং ট্র্যাকিং করা অনেকটা সহজ হয়। তাছাড়া শীতকালে সাঙ্গু নদীর দৃশ্য অন্য সময়ের থেকে বেশি সুন্দর হয়।

            আমিয়াখুম ঝর্ণা কিভাবে যাবেন: প্রথমে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি যায়। যেমন শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, সৌদিয়া, এস আলম ও ডলফিন। যে কোনো একটি বাসে বান্দরবানে যাওয়া যায়। রাত ৯-১০ টা অথবা সাড়ে ১১টার দিকে আব্দুল্লাহপুর, গাবতলি, কল্যাণপুর, কলাবাগান, সায়দাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৯০০ টাকা। এসি ১৪০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূববী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ১২০ টাকা ভাড়া রাখা হয়। বান্দরবান শহর থেকে চাঁন্দের গাড়ি বা লোকাল বাসে করে থানচি যেতে হবে। বান্দরবান থেকে থানচি পর্যন্ত লোকাল বাস জন প্রতি ২২০ টাকা এবং চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া ৭৫০০ টাকা। থানচি নেমে টুরিস্ট তথ্য কেন্দ্রে এন্ট্রি করতে হবে। এন্ট্রির কাগজ এবং গাইড নিয়ে থানচি থানায় গিয়ে অনুমতি নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ট্রলার ঘাটে পৌঁছে যেতে হবে। কারণ বিকাল ৫ টার পর আর্মিরা পদ্মঝিরি বা রেমাক্রি যাওয়ার অনুমতি দেয় না। সম্পূর্ণ ট্যুরের জন্য গাইড ভাড়া ৫০০০ টাকা ও গাইডের খাওয়া থাকা বহন করতে হবে। তবে আগে থেকে গাইড ঠিক করে গেলে ভালো। থানচি ট্রলার ঘাট থেকে দুইভাবে আমিয়াখুম যাওয়া যায়। ট্রলারে করে প্রথমে পদ্মঝিরির মুখ যেতে হবে। ট্রলার ভাড়া যাওয়া আসা ৫০০০ টাকা, এক ট্রলারে সর্বোচ্চ ৫ জন করে যাওয়া যায়। ট্রলার থেকে নেমে পুরোটাই ট্র্যাকিং করতে হবে। প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা ট্র্যাকিং করলে পৌঁছে যায় আমিয়াখুম ঝর্ণায়। এ পথটি একটু কঠিন ও পাহাড়ে ওঠা-নামা করতে হয় বেশি। অন্যভাবে যাওয়া যায় আমিয়াখুম। ট্রলারে করে রেমাক্রি বাজার, ট্রলাম ভাড়া যাওয়া-আসা ৬০০০ টাকা। ট্রলার থেকে নেমে ১০-১২ ঘণ্টা ট্র্যাকিং করলে আমিয়াখুম পৌঁছে যায়। এ পথে ট্রেকিং করা একটু সহজ, কিন্তু সময় ৩-৪ ঘণ্টা বেশি লাগবে।

            আমিয়াখুম ঝর্ণায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: রেমাক্রি বাজার, নাফাখুম পাড়া, জিন্না পাড়া এবং থুইসা পাড়ার আদিবাসীদের সঙ্গে থাকা-খাওয়া সুব্যবস্থা আছে। থাকা জনপ্রতি ১৫০ টাকা এবং জন প্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা মধ্যে বিভিন্ন প্যাকেজে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। আমিয়াখুম ঝর্ণা ভ্রমণে সঙ্গে যা নিতে হবে এনআইডি, পাসপোর্ট, স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি (৫ কপি বাধ্যতামূলক) নিতে হবে। অবশ্য ভালো মানের ট্র্যাকিং ব্যাগ নিতে হবে। যেটা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ট্রেকিং করলে পিঠ ঘামবে না আর কোমড়ের উপরে চাপ সৃষ্টি করবে না। বর্ষাকালে গেলে সঙ্গে অবশ্য রেইন কোর্ট ও বড় পলিথিন নিতে হবে। এড়াও ট্র্যাকিং প্যান্ট, ট্র্যাকিং স্যান্ডেল, শুকনা খাবার, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড ল্যাম্প, টি শার্ট ২/৩ টি, হাফ প্যান্ট, ট্রাউজার, ট্র্যাকিং পোল, মোজা ১/২ জোড়া, টুথ ব্রাশ, পেস্ট, সাবান, গামছা, পানির বোতল, প্রাথমিক ওষুধ, স্যালাইন, গ্লুকোজ, মশার জন্য ওডোমস ক্রিম ও পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে নিতে হবে।

            ভ্রমণের প্রয়োজনীয় কিছু টিপস: অনুমতি ছাড়া স্থানীয়দের ছবি তুলবেন না। যেখানে সেখানে শুকনো খাবারের খোসা, প্লাস্টিক জার বা বোতল ফেলবেন না। অবৈধ জাতীয় কোন কিছু বহন করা যাবে না। ভ্রমণে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা ট্র্যাকিং করতে হবে। তাই যতটা সম্ভব হালকা ব্যাগ প্যাক রাখার চেষ্টা করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় কোনো কিছু না নেওয়া বুদ্ধিমানে কাজ।

খবরটি 464 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen