বিনোদন ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করার অংশ হিসেবে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স স্থাপনের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বুধবার (২৩ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রী নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০’ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র শিল্পীদের সর্বোচ্চ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই পুরস্কার ভার্চ্যুয়ালি প্রদান করেন। তিনি বলেন, এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। চলচ্চিত্র শিল্প ছিল অ্যানালগ যা আমি ডিজিটাল করতে চাই। আমরা এই লক্ষ্যে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। আমি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে চাই।

            প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পুরনো চলচ্চিত্রকে ডিজিটালাইজ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। চলচ্চিত্র শিল্পকে সমাজের প্রতিবিম্ব হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই শিল্প সমাজ সংস্কারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। চলচ্চিত্র শিল্পকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মানুষের বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১ হাজার কোটি টাকার একটা তহবিল গঠন করে রেখেছি। আমি চাই আমাদের একেবারে জেলা-উপজেলা সব জায়গাতেই এই সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স নির্মাণ হোক। সেখানে যেন আধুনিক প্রযুক্তিতে এই চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতে পারে। তা ছাড়া আমরা চলচ্চিত্রের জন্য আর্কাইভ এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। পাশাপাশি পুরনো সিনেমাগুলো ডিজিটালাইজড করে সেগুলোকেও আবার নতুনভাবে উপস্থাপন করার পদক্ষেপ নিয়েছি। সে পদক্ষেপও আমরা সীমিতভাবে নিয়েছি। কিন্তু আমি মনে করি এ ধরনের পদক্ষেপ আরো নেওয়া দরকার। আমাদের যত পুরনো চলচ্চিত্র রয়েছে সে গুলোকে ডিজিটালাইজড করে নতুন আঙ্গিকে নিয়ে আসতে হবে। যেন সে গুলো মানুষের কাছে সহজে উপস্থাপন করা যায়। চলচ্চিত্র আমাদের জীবনের চিত্র, জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। সমাজ সংস্কারে এই চলচ্চিত্র বিরাট অবদান রাখতে পারে, যা মানুষের মনে দাগ কাটে। তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্র অনেক বার্তা দিয়ে যায় এবং ইতিহাসের বার্তবাহক হিসেবেও কাজ করে। যেটা ইতিহাসকে ধরে রাখে। অনেক অজানাকে জানার যেমন সুযোগ করে দেয় তেমনি অনেক হারিয়ে যাওয়া ঘটনাকেও সামনে নিয়ে আসে। সমাজের অনিয়ম উশৃংখলতা দূর করতেও এই চলচ্চিত্র ভূমিকা রাখতে পারে। আবার এই চলচ্চিত্রে মাধ্যমেই দেশ ও জাতির প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধ, ভালোবাসা বা দায়বদ্ধতা প্রকাশ পায়। কাজেই, সেদিক থেকে চলচ্চিত্রের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। সীমিত সুযোগ ব্যবহার করে দেশে উন্নত মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করায় সংশ্লিষ্ট শিল্পী কলা-কুশলী সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। সিনেমা হলে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ না হলেও বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানে বসে বা সুযোগ পেলে তিনি দেশের চলচ্চিত্র দেখেন এবং তার ভাল লাগে বলেও নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করণের যে সুযোগ রয়েছে তাকে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমি এই আহ্বানই জানাবো-আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, গণমানুষের যে আত্মত্যাগ এবং আমাদের এগিয়ে চলার পথটা যেন মানুষের সামনে আরো ভালভাবে উপস্থাপন হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ যেন আরো সুন্দরভাবে এগিয়ে যেতে পারে পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম যেন নিজেদের জীবনকে আরো সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে সেভাবেই আপনারা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করবেন-সেটাই আমি চাচ্ছি। তিনি পুরস্কার বিজয়ী শিল্পী ও কলা কুশলীদের অভিনন্দন জানান এবং আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত শিল্পী আনোয়ারার শারিরীক অসুস্থতার সংবাদে উদ্বেগ প্রকাশ করে তার দ্রুত রোগমুক্তি কামনা করেন এবং প্রয়োজনে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য নিজে উপস্থিত হতে পারেননি আনোয়ারা। তার হয়ে ড. হাছান মাহমুদের হাত থেকে পুরস্কার নেন মেয়ে চিত্রনায়িকা মুক্তি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে এই ট্রাস্টকে আরো সমৃদ্ধ করায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। বাঙালি মানেই শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, এই নিয়েই আমাদের জাতিস্বত্তা। এটা আরো বিকষিত হোক, সেটাই আমি চাই।

            ‘আজীবন সম্মাননা’ লাভকারী অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করার সময় তার কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান অনেকদিন হারিয়ে গিয়েছিল। যে স্লোগান দিয়ে লাখো মানুষ বুকের রক্ত দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তেমনই একজনের মুখে স্লোগানটি শুনে সত্যিই আবারো মুগ্ধ হয়েছি। তাকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

            প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন। বাসস

খবরটি 413 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen