স্বাস্থ্য ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ায় পথ সহজ করেছে সরকার। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধন ছাড়াই টিকা নেওয়া যাবে। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে মানুষের ব্যাপক ভিড় বেড়েছে। তবে আগে নিবন্ধন করে এসএমএস পাওয়ার পর নির্দিষ্ট কেন্দ্রে না যাওয়া মানুষজন কিছুটা ভোগান্তিতে পড়ছে। শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জরুরি বিভাগের মূল ফটক থেকে পুরাতন ভবনের টিকাকেন্দ্র পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০৭ জন নতুন নিবন্ধন করে টিকা নিয়েছেন। টিকা দিতে অপেক্ষা করছেন আরো দুই শ থেকে আড়াই শ নারী-পুরুষ। তবে টিকা নিতে আগে নিবন্ধনকারীদের নিবন্ধন না করাদের পাশাপাশি অপেক্ষা করতে দেখা যায়। যাঁরা আগে নিবন্ধন করেননি, তাঁরা এখন জাতীয় পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি কার্ড) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করে টিকা দিতে পারছেন। তবে আগে নিবন্ধন করে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে টিকা না দেওয়া অনেকেই এখন অন্য কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারেননি।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিতে শত শত মানুষের ভিড়। প্রথম ডোজ নিতে আসা মানুষের সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের চতুর্থ তলা টিকা নিতে আসা মানুষে ভরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাজ করছেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।

ঝালকাঠির বাসিন্দা আসমা আক্তার ও তাঁর স্বামী গত বছরের শুরুতে ঝালকাঠিতে টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন। পরে এসএমএস এলেও সিদ্ধান্তহীনতায় তাঁরা টিকা দেননি। এখন তাঁরা রাজধানীর শ্যামনগরে থাকছেন। গতকাল তাঁরা ঢামেক হাসপাতালে টিকা নিতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আসমা বলেন, হুনছি টিকা দিতে কিচ্ছু লাগব না। এহন ডাক্তাররা (মেডিক্যাল অফিসার) কয় গ্রামে গিয়া দিতাম।

আগে নিবন্ধন না করা অন্তত ১০ জন কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁরা শুরুতে ভেবেছিলেন টিকায় ক্ষতি হবে। পরে সবাই দিচ্ছে দেখে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হলেও টিকা নেননি। এখন টিকা না নেওয়াদের মৃত্যু ও আক্রান্তের খবর প্রকাশ হচ্ছে। আবার সরকার প্রথম ডোজের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে। তাই এবার না দিয়ে উপায় নেই বলে মনে করছেন তাঁরা।

প্রথম ডোজ নিতে আসা উজ্জ্বল তালুকদার জানান, এত দিন সময়ের অভাবে টিকা নিতে পারেননি তিনি। শুরুর দিকে বয়স কম থাকায় নিবন্ধন করতে পারেননি। পরে নিবন্ধনই করা হয়নি।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি স্ত্রী ও ছোট বোনকে নিয়ে টিকা নিতে আসলাম। এত দিন দেননি কেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘টিকার বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দেইনি। এখন দেখছি সবাই দিচ্ছে। অনেক কাজে টিকার সনদও চাচ্ছে। সরকার ২৬ তারিখ পর্যন্ত প্রথম ডোজের কথা বলেছে। পরে যদি আর না দেয়! তাই সপরিবারে এসেছি।

সিলেটে শেষবেলায় কেন্দ্রে তীব্র চাপ: সিলেটে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় হঠাৎ বেড়ে গেছে ছয় গুণেরও বেশি। জনস্রোত সামাল দিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ছুটে আসতে হয় টিকাকেন্দ্রে। প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ হচ্ছে ২৬ ফেব্রুয়ারি। এমন ঘোষণায় মানুষের এই স্রোত। বেশির ভাগই প্রথম ডোজ নিতে এসেছে। গতকাল দুপুরে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর কমপ্লেক্সের পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা গেছে এ দৃশ্য। গতকাল প্রথম ডোজ নিতে আসা ব্যক্তিদের চাপে পড়ে দ্বিতীয় ডোজ ও বুস্টার ডোজের জন্য সংরক্ষিত বুথগুলোতেও প্রথম ডোজের কার্যক্রম চালাতে হয়েছে।

ময়মনসিংহে ১৮ কেন্দ্রে গণটিকা: ময়মনসিংহে ১৮টি কেন্দ্রে গতকাল গণটিকা দেওয়া হয়েছে। মোট জনসংখ্যা ৪২ লাখ ৬২ হাজারের মধ্যে ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়া হবে। গতকাল পর্যন্ত ৫৩ শতাংশকে দেওয়া হয়েছে। টিকা নিতে আসা আম্বিয়া বেগম (৫৫) বলেন, ‘অনেকের কাছে অনেক কথা হুনছি। কেউ কইছে কোনো রোগ থাকলে টিকা দিলে ক্ষতি অইব। কেউ কইছে এইডা খালি পানি, ভালা-মন্দ কিছুই অইত না। এতসব কথার মধ্যে ডর করত। তাই অতদিন টিকা দিছি না।

নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুর রশিদ জানান, ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। তার পরও এত দিন অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। এখন কিছুটা সচেতন দেখা যায়।

খবরটি 423 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen