অর্থনীতি ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে আরো বেশি ভর্তুকি দেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকাকে বাধাগ্রস্ত করবে। আপনাদের (শ্রোতাদের) বলা উচিত ভর্তুকি বাবদ কত টাকা বরাদ্দ করা যেতে পারে। আরো ভর্তুকি মানে জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ খেয়ে ফেলবে, ফলে দেশের উন্নয়নের চাকা থমকে যাবে। তেল, বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে প্রতি বছর ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়, এমন তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, সরকার আর কত টাকা ভর্তুকি দেবে? বাজেটের সব টাকা ভর্তুকিতে দিয়ে দিলে সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

            প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ অংশগ্রহণ এবং লন্ডন ও ফ্রান্সে দু-সপ্তাহের সফর বিষয়ে বুধবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব নিয়ে করা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি গণভবনে উপস্থিত সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি এই প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। সারা বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশে বেড়েছে। কাজে ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি উচ্চমূল্যে বিশ্ব বাজার থেকে সরকারের তেল ক্রয় করে আনার বিষয়টি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকার শুধু ডিজেলের পেছনে ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। বিদ্যুৎ এবং আনুসাঙ্গিক সবকিছু মিলিয়ে ৫৩ হাজার কোটি টাকা আমরা ভর্তুকি দিয়ে থাকে। ইতিমধ্যে আমরা এই পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দেই, আরো কত টাকা আমরা ভর্তুকি দিতে পারব। আমাদের উপার্জনটা কী? আমাদের নিজস্ব কী সম্পদ আছে? কাজে আপনাদের এটা বিবেচনা করতে হবে।

            প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কৃষকদের বিদ্যুতে বিশেষ ছাড় দিয়ে থাকি। যে সারের দাম ৯০ টাকা ছিল, সেটি আমরা মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকায় কৃষকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে কৃষকদের সহায়তা দিচ্ছি। জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সরকার সবসময় সচেতন উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনার সময় আমরা গ্রাম পর্যন্ত নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। জিনিসপত্রের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, তার সব রকম ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে সচল থাকে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা দিয়েছি। মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যবস্থা নিয়েছি। সব তো করছি। কিন্তু তেল তো আমাদের কিনে আনতে হয়। সেই কেনা তেলে আবার ভর্তুকি দিয়ে জনগণকে দিতে হয়। মানুষের খাদ্যের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর আছে। আমরা তো বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি, বিনা পয়সায় মানুষকে সাহায্য করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, টাকা তো সবাই আয় করে। বাড়ি গাড়ি সবই ঠিক আছে, কোনো দিকে কমতি নেই। কিন্তু সেদিক বিবেচনা করলে ট্যাক্স কতজন দেয়? সঠিকভাবে কতজন সরকারকে ট্যাক্স প্রদান করে? এ সংখ্যা কিন্তু খুবই কম। ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার দিকে তো সবার নজর। সেটা হলো বাস্তবতা। তাহলে সরকারের টাকাটা আসবে কোথা থেকে?

            প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক উন্নত দেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার চলছে। মানুষ বাজারে যায়, সুপার মার্কেট খালি। আমি এটা খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে কিন্তু সে হাহাকার দেখেননি। কাজেই আপনাদের এটা বিবেচনা করতে হবে, এটা সরকারের পক্ষ থেকে কতটুকু করা সম্ভব। একটা সময় বিদ্যুতের জন্য খুব হাহাকার ছিল। সে বিদ্যুৎ এখন আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। কিন্তু তার পর তো বিদ্যুতে আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ তো আমরা তুলতে পারছি না। বাস ও অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশে ছিলাম না ঠিক, তবে দেশের সঙ্গে ছিলাম না, তা তো নয়। ডিজিটাল যুগ। বিভিন্ন মাধ্যমে বারবার যোগাযোগ হয়েছে। যারা ভাড়া বাড়াচ্ছিল তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এরপর একটি যৌক্তিক পর্যায়ে ভাড়া রাখা হয়েছে।

খবরটি 447 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen