স্বাস্থ্য ডেস্ক: আফ্রিকার কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি আকাশপথে যোগাযোগ নেই। তবে তৃতীয় কোনো দেশে ট্রানজিট নিয়ে দেশে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তাই ট্রানজিট যাত্রীর মাধ্যমে যাতে দেশে ওমিক্রন প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। মঙ্গলবার সাউথ আফ্রিকায় করোনা ভাইরাসের নতুন এ ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়। সাউথ আফ্রিকাসহ আফ্রিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ঠেকাতে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে আলাদা স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।

            ওমিক্রন ঠেকাতে জাতীয় পরামর্শক কমিটি যে পরামর্শ দিয়েছে তাতে আক্রান্ত দেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকা অন্যতম। করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি ৪৮তম সভা শেষে যে সুপারিশ দিয়েছে তাতে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন সাউথ আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এর বিস্তার রোধ করার জন্য এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ, সাউথ আফ্রিকাসহ সে অঞ্চলের কয়েকটি দেশ (জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, সোয়াজিল্যান্ড) হতে যাত্রী আগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফ্লাইটসহ)। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংক্রমিত দেশ থেকে আসা যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করে কমিটি। এ ছাড়া বাংলাদেশে ঢোকার ১৪ দিনের মধ্যে এসব দেশে গেলে তাকে ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার কথা বলা হয়েছে।

            ওমিক্রন কতটা প্রাণঘাতী ও সংক্রামক সেসব জানতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। সাউথ আফ্রিকায় করোনা ভাইরাসের নতুন এ ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয়। এক দিন পর এই ধরনকে ওমিক্রন নাম দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বলা হচ্ছে, করোনার এই ধরন খুব উদ্বেগের। এর মধ্যে নিজেদের দেশে দুজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। অথচ এর আগে আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বসে আছে পশ্চিমা দেশগুলো। সাউথ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসেথোর মতো দেশগুলোর নাগরিকের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়ার পর নতুন এই করোনা ভাইরাসের যতগুলো ধরন এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে ওমিক্রনে জিন বিন্যাসে পরিবর্তন এসেছে সবচেয়ে বেশি। এর মানে হল, করোনা ভাইরাসের যেসব টিকা এ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলো ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। আবার জিন বিন্যাসে পরিবর্তনের কারণে এ ভাইরাস অনেক বেশি দ্রুত ছড়ানোর ক্ষমতা রাখতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে তালিকাভুক্ত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বা ‘উদ্বেগজনক ধরন’ হিসেবে। তবে তারা এটাও বলছে, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটা বুঝতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।

            বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিমানবন্দরগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে আমরা সেটি কার্যকর করার উদ্যোগ নেব। যদিও সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই, তবুও ট্রানজিট নিয়ে আসা যাত্রীদের বিশেষ স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আমরা আনতে বলেছি। তিনি বলেন, আমাদের এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে এবং এ বিষয়টি নিয়ে আমি এরই মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। পাশাপাশি যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদের অনুরোধ করব তারা যেন অন্তত নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে হলে সতর্ক হন এবং সরকারের নির্দেশনাগুলো মেনে চলেন।

খবরটি 406 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen