জাতীয় ডেস্ক: মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বাক-স্বাধীনতার নামে আমরা যেমন ধর্মীয় অবমাননা সমর্থন করি না।  আবার একইসঙ্গে এ ইস্যুতে কোনো ধরনের সংঘাতও সমর্থনযোগ্য নয়।  তাই ফ্রান্স ইস্যুতে সব পক্ষকে সংযত থাকার অনুরোধ করছি। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব মাশফি বিনতে শামস উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক ব্যক্তি কিংবা পার্টির ওপর নির্ভর করে হয় না। যিনিই প্রিসিডেন্ট হোন না কেন; বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কের ঊর্ধ্বমুখী অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে আমাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বিচার বিভাগ স্বাধীন। তার নথি পুনরায় রিভিউর জন্য এসে গেছে। ফলে সরকার যেই হোক, এটা নিয়ে পর্যালোচনা চলতে থাকবে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোর কোনো চেঞ্জ (পরিবর্তন) হয় না।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) নিয়ে আলোচনা সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আইপিএসে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে। কিন্তু সেই ভ‚মিকা কী হবে সে ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব কিংবা অনুরোধ করেনি। আমরা বলেছি, আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আইপিএসে আমরা অর্থনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা করতে প্রস্তুত আছি। সৌদি আরবে কর্মী হিসাবে যেতে ইচ্ছুকদের ফ্লাইট পেতে ভোগান্তির জন্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সমন্বয়হীনতা ছিল না। সক্ষমতার ঘাটতি ছিল। অনেক সময় কোভিড সনদ সবাইকে দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে। মালয়েশিয়ায় ফিরে যেতে শ্রমিকদের দাবি পূরণে দেশটির সঙ্গে আলোচনা করছি। কিন্তু মালয়েশিয়া এখনই শ্রমিকদের নেয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত নয়। প্রবাসীদের দাবির ব্যাপারে বর্তমান সরকার পূর্ণ সচেতন। বর্তমান সরকার প্রবাসবান্ধব সরকার। তবে প্রবাসীদের অবশ্যই নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।

ফ্রান্সে ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাতে ঢাকার অস্বস্তি। ফ্রান্সে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা যাবে না। এটা আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। সচিব অবশ্য ফ্রান্সে সন্ত্রাসী ঘটনারও নিন্দা জানান। পণ্য বর্জন সম্পর্কে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ধর্মীয় ইস্যুর সঙ্গে অর্থনৈতিক ইস্যুকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করার আহ্বান জানান।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করব। এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতিসংঘের একটি টিম কারিগরি পর্যবেক্ষণ করবে। ৩০৬ জন এখন আছে। তবে ভাসানচরে তাদের অস্থায়ীভাবে রাখা হবে। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো আমাদের উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারের নির্বাচনের পর প্রত্যাবাসনের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা ফের জোরদার করা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, সেন্টমার্টিনকে মিয়ানমারের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তারা বলেছে, এটা তারা করেনি। কোপার্নিকাস এটা করেছে। সচিব বলেন, এখন আমরা কোপার্নিকাসের সঙ্গে যোগাযোগ করব। কোপার্নিকাসকে আমরাও চাঁদা দিই।

খবরটি 521 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen