জাতীয় ডেস্ক: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে বারবার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করা এবং বাংলাদেশকে পুনরায় করায়ত্ব করা। আমি আগেও বলেছি, আজ আবারও বলছি আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। এ মুহূর্তে আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো একতাবদ্ধ থাকা। পরাজিত শক্তি ও তাদের সহযোগীরা সুযোগ খুঁজে বসে আছে আমাদের থামিয়ে দিতে। আমরা তাদের এ সুযোগ কোনোভাবে দেব না।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, সপ্তাহজুড়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৎপরিচিতি এবং চলমান জাতীয় ঐক্য গঠনের বিষয়ে বৈঠক শুরু হয়েছে। সরকারের ব্যবস্থাপনায় এ বৈঠকগুলোতে তারা পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার একটি ধারা শুরু হয়েছে এবং এ আলোচনার মধ্য দিয়ে সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, চলমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ ও জাতীয় ঐক্য একমাত্র পথ। সে লক্ষ্যে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে দেশের জনগণের প্রতি ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান করে বলেন, আসুন, আমরা একসঙ্গে প্রতিরোধের একটি সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে তুলি। মাতৃভূমির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জাতীয় মর্যাদার বিরুদ্ধে যেকোনো আঘাত আমরা একযোগে প্রতিহত করব। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে গত ১৬ বছরে রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনের জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়েছে। এ মানুষগুলোকে এমন সব বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়েছিল, যার কোনো কোনোটির আয়তন ছিল মাত্র তিন ফিট বাই তিন ফিট। গুমের ঘটনা তদন্ত ও এ ভয়াবহ অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচারের জন্য একটি স্বাধীন গুম সংক্রান্ত কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গুমের তদন্ত কার্যক্রমের জন্য ঢাকা শহরের তিনটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় তিনটি গুমের কেন্দ্র পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্তকাজে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় মাদ্রাসা পর্যায়ে গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। মোট আট শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ গণ-শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। গুম সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে জমা হয়েছে। এছাড়াও এ সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে। গত ১৬ বছর ধরে এদেশের প্রতিটি স্তরে অপরাধ, অনিয়ম, দুর্নীতির ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। এ রোগাক্রান্ত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে রোগমুক্ত করে জনগণের কল্যাণমুখী করতে হলে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেছি।