ফিচার ডেস্ক: মাছ উৎপাদন ও আহরণে বিস্ময়কর সাফল্যে বাংলাদেশ। বর্তমানে ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে দেশটি। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে। এ ছাড়া স্বাদু পানির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হারে দ্বিতীয় স্থানে ও বদ্ধ জলাশয়ে চাষ করা মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থানে বাংলাদেশ। পাশাপাশি বিশ্বে সামুদ্রিক ও উপকূলীয় ক্রাস্টাশিয়ান্স ও ফিনফিশ উৎপাদনে যথাক্রমে অষ্টম ও ১২তম স্থান অধিকার করেছে। করোনা মহামারীতে বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭০,৯৪৫.৩৯ মে. টন মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৩,৯৮৫.১৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। করোনায় দেশের বাজার সংকুচিত হওয়ায় ক্ষতি পোষানোর লক্ষ্যে অতিরিক্ত মাছ ও মাংস সংযুক্ত আরব আমিরাতে রপ্তানির লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

            জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার দি স্টেট অব ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২০’ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।

            মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশেরও বেশি আহরিত হয় বাংলাদেশে। এ দেশের নদ-নদী, মোহনা ও সাগর থেকে পাওয়া যায় রুপালি ইলিশ। ইতিমধ্যে ‘বাংলাদেশ ইলিশ’ ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধিত হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২.৯৮ লাখ মে. টন, তা ২০১৯-২০ সালে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫.৩৩ লাখ মে. টনে। ২০২০ সালে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ সংরক্ষণে সফল অভিযানের কারণে ৫১.২ শতাংশ মা ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়ে। গত বছর ডিম ছাড়ার পরিমাণ ছিল ৪৮.৯২ শতাংশ। এতে আগামী মৌসুমে আরও ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি জাটকা পাওয়া যেতে পারে বলে ইলিশ সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানী ও গবেষকরা আশা করছেন। এ ছাড়া ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট মৎস্য উৎপাদন ছিল ২৭.০১ লাখ মে. টন যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৪৬ লাখ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। মৎস্য অধিদফতর জানায়, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে ২০২০ সালে রেকর্ড ২৫৭৭১.৪০ কেজি রুই মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৯৮.২২ কেজি রেণু উৎপাদিত হয়েছে, যা কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে হালদাকে ইতিমধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে হালদা নদীকে সংরক্ষণ ও সুরক্ষা প্রদানের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এদিকে ‘সামুদ্রিক মৎস্য আইন-২০২০’ একাদশ জাতীয় সংসদে ইতিমধ্যে পাস হয়েছে। ‘জাতীয় সামুদ্রিক মৎস্য নীতিমালা’ও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের আওতাধীন গবেষণা ও জরিপ জাহাজ ‘আর ভি মীন সন্ধানী’ বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত ২৫টি সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করে। জৈবিক বিশ্লেষণের ডাটাও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ সার্ভের মাধ্যমে এরই মধ্যে সর্বমোট ৪৫৭ প্রজাতির মাছ ও মাছ জাতীয় প্রাণী শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৭৩ প্রজাতির মাছ, ২১ প্রজাতির হাঙ্গর ও রে, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ৩ প্রজাতির লবস্টার, ২১ প্রজাতির কাঁকড়া, ১ প্রজাতির স্কুইলা (মেন্টিস), ৫ প্রজাতির স্কুইড, ৪ প্রজাতির অক্টোপাস এবং ৫ প্রজাতির ক্যাটল ফিশ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ২০২০ সালে গভীর সমুদ্রে টুনা মাছ আহরণের জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

            মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, সরকারের উদ্যোগে ইলিশের অভয়াশ্রম তৈরি ও জাটকা ধরা বন্ধ করা, মা ইলিশ সংরক্ষণে প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন, মজুদ ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ করার ফলে ইলিশ উৎপাদনে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এ ছাড়া সময়মতো অভিযান পরিচালনা করা, নভেম্বর-জুন মোট ৮ মাস জাটকা ধরা বন্ধ রাখা, সমুদ্রে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা, নিষিদ্ধকালে মৎস্য আহরণে বিরত থাকা, মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা এবং অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ বন্ধে অভিযান চালানোয় বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষে।

            মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সব বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ বাঙালির পাতে ফিরিয়ে আনা ও জাতীয় মাছ ইলিশ দেশের সব মানুষের কাছে সহজলভ্য করাই আমাদের লক্ষ্য। দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সমুদ্রসীমায় প্রচলিত ও অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ আহরণের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির নবদিগন্ত উন্মোচন করতে আমরা নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণের জন্য ইতিমধ্যে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মন্ত্রণলায়।

খবরটি 714 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen