স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান: বান্দরবানের চিম্বুকে নাইতং পাহাড়ে সিকদার গ্রুপের পাঁচ তারকা ম্যারিয়ট হোটেল নির্মাণের প্রতিবাদে চিম্বুক পাহাড়ে বসবাসরত ম্রো আদিবাসীরা লংমার্চ করেছে। রোববার সকাল ৯টার দিকে চিম্বুকের রামরি পাড়া থেকে লংমার্চ শুরু হয়। প্রায় ৩০ কিলোমিটার হেঁটে আসার পর শহরের বোমাং রাজার মাঠে ম্রোরা প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

ম্রো আদিবাসীরা পূর্বঘোষণা ছাড়া এ লংমার্চের আয়োজন করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি গণমাধ্যম কর্মীরাও লংমার্চের বিষয়ে কিছু জানেন না। আকস্মিক এই লংমার্চে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। ম্রো জনগোষ্ঠীর কয়েক হাজার মানুষ চিম্বুক থেকে বান্দরবান শহরে যাওয়ার পথে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বৈথানি পাড়া ছয় মাইল এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তারা। বাধা অতিক্রম করে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ হেঁটে এসে শহরের বোমাং রাজার মাঠে এসে লংমার্চ শেষ হয়। পরে রাজার মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশ করে ম্রো আদিবাসীরা।

বোমাং রাজার মাঠে সমাবেশে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রেং ইয়ং ম্রো। তিনি বলেন, নাইতং পাহাড়ে সিকদার গ্রুপের ম্যারিয়ট হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের নামে পাঁচ তারকা হোটেল এবং বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ হলে আমাদের আনুমানিক এক হাজার একর ভোগদখলীয় ও চাষের ভূমি বেদখল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের ছয়টি পাড়া বা গ্রাম সরাসরি উচ্ছেদের মুখে পড়বে। ম্রোদের চাষের ভূমি, ফলজ বাগান, পবিত্র জায়গা, শ্মশান ঘাট ও পানির উৎস ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া আমাদের সংরক্ষিত পাড়াবন ও জীব বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

লিখিত বক্তব্যে ম্রো আদিবাসীরা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করে। সেগুলো হলো চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প বাতিল করা; অবৈধভাবে ভূমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী স্থানীয় পাড়াবাসী, জনপ্রতিনিধি, ছাত্রনেতাকে হয়রানি ও হুমকি ধামকি প্রদান বন্ধ করা; চিম্বুকের ম্রোদের বংশপরম্পরায় ভোগদখলীয় ভূমিতে কোনো ধরনের পর্যটন বা বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা; স্থানীয়দের ভূমি দখল করে নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্র সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ না করা; যে উদ্দেশ্যে চিম্বুক পাহাড়ের ভূমি ব্যবহার করা হোক না কেন তা স্থানীয় কারবারি (পাড়া প্রধান, হেডম্যান বা মৌজা প্রধান), জনপ্রতিনিধি ছাড়া চিম্বুক পাহাড়ের সকল পাড়াবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করে আলোচন করা।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন পাড়াবাসী সিংপাত ম্রো, ছাত্রনেতা রেংইয়ং ম্রো। এছাড়া ম্রোদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বন ও ভূমি অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক জোয়াম লিয়ান আমলাই।

খবরটি 884 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen