পার্বত্য চট্টগ্রাম ডেস্ক: রাঙ্গামাটিতে ইউকেএইড বাংলাদেশ ষ্টার্ট ফান্ডের কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম। ঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাতে চলমান করোনা সংকট মোকাবেলা করার জন্য ইউকেএইড এর বাংলাদেশ ষ্টার্ট ফান্ডের কোটি টাকার দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে রাঙ্গামাটিতে স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ’আশিকা’র বিরুদ্ধে।পণ্য ক্রয়, যাতায়াত, মালামাল পরিবহণে কাল্পনিক খরচ দেখানো হয়েছে। মাত্র এক দিনের মেডিকেল টিম সার্ভিস দেয়া হলেও সেটি দেখানো হয়েছে ২০ দিনের আর এতে খরচ বাবদ দেখানো হয়েছে লাখ লাখ টাকা। বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবস্থায় নামে মাত্র ছোট ছোট প্লাস্টিকের বালতি ও পানি পিউরিফিকেশন ট্যাবলেট দিয়ে এতেও দেখানো হয়েছে লাখ লাখ টাকার ভাউচার। সুবিধাভোগীদের মাঝে মালামাল ও খাদ্য বিতরণও সঠিকভাবে করা হয়নি। কিন্তু বিল-ভাউচার তৈরীতে সবকিছু ঠিকতাক দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা কিনা তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এছাড়া যতজন উপকারভোগী দেখানো হয়েছে বাস্তবিক পক্ষে ততজনকেও সকল সুবিধা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা।

আশিকা মূত্রে জানা যায়, জেলাতে গত এপ্রিল মাঝামাঝি থেকে চলতি জুন ২০২০ সাল প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দুই মাসে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আশিকা। প্রকল্প দুটির মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে—রাঙ্গামাটি জেলাতে পৌরসভা এবং সদর উপজেলায় করোনা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ ৪০লাখ টাকা এবং দ্বিতীয়টি হলো জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেক ইউনিয়ন এবং জুড়াছড়ি উপজেলায় দুমদুম্যা এ দুটি সবচেয়ে দুর্গম ইউনিয়নে খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিত করণ ৬২লাখ টাকা। এনজিও আশিকা কর্তৃপক্ষ প্রথম প্রকল্পে জেলা শহরে পৌরসভার বেশ কয়েকটি এলাকায় দোকানের সামনে সোশ্যাল ডিস্টেনচিং বজায় রাখার চিহ্ন তৈরী এবং সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে দু,একটি গ্রামে হ্যান্ড ওয়াসের জন্য ১টি বরে সাবান এবং ছোট ছোট ১০-১৫টি প্লাস্টিকিরে বালটি প্রদান করে মাত্র। এছাড়া জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় অক্সিজেন সিলিন্ডার বিতরণ করে। যা কিনা তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে আশিকা কর্তৃপক্ষ সেই ৪০লাখ টাকার প্রকল্প মাত্র ৭ লাখ টাকায় কাজ শেষ করে। ঠিক একইভাবে দ্বিতীয় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করন ৬২লাখ টাকার প্রকল্পটিও অতি অল্প অর্থাৎ ১২-১৩লাখ টাকা ব্যয় করে রাতারাতি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে আশিকা গত দশ দিন পূর্বে। এ প্রকল্পে জেলার বাঘাইছড়ির সাজেক ও জুড়াছড়ির দুমদুম্যা ইউইনিয়নে ১হাজার পরিবারকে চাল, ডাল, তৈল, আলু ইত্যাদি খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু তালিকায় ১হাজার জনের নাম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ততজনকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন।
তারা বলেছেন, তালিকায় যে পরিমাণ খাদ্য ধরা হয়েছিল কিন্তু বিতরণের সময় সে পরিমাণ প্রদান করা হয়নি। যেমন তালিকায় ছিল ৪০কেজি চাল, ৪লিটার ভোজ্য তেল, ২কেজি ডাল, ২কেজি আলু, ১কেজি করে লবণ ও চিনি। কিন্তু দেয়ার সময় ৩০ কেজি চাল দেয়া হয়। অন্য দ্রব্য গুলোতে একইভাবে কম দেয়া হয়েছে।
দুমদুম্যা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়াম্যান সাধন কুমার চাকমা বলেন, আশিকা এনজির মাধ্যমে আমাদের ইউনিয়নে ৩শ পরিবারের যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তাতে সোয়া ১লক্ষ টাকার বেশী খরচ হবেনা। তাঁর ইউনিয়নে তালিকায় ৩শ পরিবারকে পানি রাখার পাত্র দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১শ পরিবারকে পানি রাখার পাত্র দেওয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। সাজেক ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মোহন লাল কার্বারী মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় প্রথমে ৪০ কেজির চালের বিপরীতে ৩০কেজি দেওয়া হয়েছিল। তবে এলাকার লোকজন অভিযোগ দিলে পরে বাকী ১০কেজি চাল পুরণ করে দিতে বাধ্য হয় ’আশিকা’র লোকজন। কার্বারী আরো জানান, তাদের এলাকায় এ পর্যন্ত কোন মেডিকেল টিম কাজ করেনি।
অভিযোগ অস্বিকার করে আশিকা মানবিক উন্নয় কেন্দ্রর নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা দাবী করে বলেন, তার দুটি প্রকল্পের ৯০ভাগ টাকা বাস্তবায়নে খরচ করা হয়েছে। এখনও তার মেডিকেল টিম কাজ করে যাচ্ছে ঐদুটি ইউনিয়নে। কিন্তু তার সাথে কথা বলার পর খোঁজ নিলে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

খবরটি 642 বার পঠিত হয়েছে


আপনার মন্তব্য প্রদান করুন

Follow us on Facebookschliessen
oeffnen